E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাগেহরাটের জেলে পল্লীগুলোতে চলছে শোকের মাতম

২০১৫ সেপ্টেম্বর ২১ ১৭:১৫:২৬
বাগেহরাটের জেলে পল্লীগুলোতে চলছে শোকের মাতম

বাগেরহাট প্রতিনিধি : সুন্দরবন উপকূলে বঙ্গোপসাগরের শনিবার ভোর রাতে ও রবিবার দুপুরে ঝড়ে অর্ধশত ট্রলার ডুবির ঘটনায় সোমবার বিকেল পর্যন্ত হতভাগ্য দুই জেলের লাশ উদ্ধার হয়েছে। নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের অভিযানে জীবিত উদ্ধার হয়েছে ৭৬ জেলে। এখানো বাগেরহাটের ৮টি জেলে পল্লীর ৭৫ জেলের নিখোঁজ রয়েছে। নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, মৎসজীবি সমিতি ও জেলে পরিবারগুলো এতথ্য নিশ্চিত করেছে।

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার জেলেপল্লী কেষ্টনগরের জেলে আব্দুর রহমান সরদার জানিয়েছেন, শরনখোলা উপজেলার এফ বি মায়ের দোয়া ট্রলারে থাকা তার ছেলে এব্রাহীম সরদার (৪২) ও একই এলাকার মোক্তার বাওয়ালীর ছেলে ছিদ্দিক বাওয়ালীর (৪৫) লাশ সোমবার সকালে সাগরে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া গেছে।

সমুদ্রে থাকা এলাকার জেলেরা তাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ দুটি লাশ নিয়ে একটি মাছধরা ট্রলার সোমবার দুপুরে সেখান থেকে বাগেরহাটের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছে বলে তিনি দাবী করেছেন। এ ২ জেলে নিহতের ঘটনায় চিতলমারীর কেষ্টনগর জেলে পল্লীতে এখন চলছে শোকের মাতম। তবে উদ্ধার অভিযানে থাকা নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড এই দুটি লাশের বিষয়ে নিশ্চিত কোন তথ্য জানাতে পারেননি।

তবে তারা জানিয়েছে, সোমবার দুপুর পর্যন্ত সমুদ্রে ভাসমান অবস্থায় ৭৬ জেলেকে উদ্ধার করে মংলায় নিয়ে আসা হচ্ছে। এদের মধ্যে চিতলমারী উপজেলার কেষ্টনগর গ্রামের ইব্রাহীম সরদার ও ছিদ্দিক বাওয়ালী নামে কোন জেলে নেই। তাদের হাতে উদ্ধার হওয়া এসব জেলেদের বাড়ী বাগেরহাটের কচুয়া, শরনখোলা, চিতলমারী, ও মোড়েলগঞ্জ, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া, বরগুনার পাথরঘাটা এলাকার বিভিন্ন জেলে পল্লীতে।

কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন মেহেদী মাসুদ জেলে উদ্ধারের খবর নিশ্চিত করে জানান, বর্তমানে সাগর উত্তাল থাকায় উদ্ধার অভিযান দারুন ভাবে ব্যহত হচ্ছে। এরমধ্যেই সাগর ও উপকূলে উদ্ধার অভিযানে নেমে নৌ বাহিনীর সদস্যরা সোমবার বিকেল পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরের হিরণপয়েন্ট এলাকা থেকে ডুবে যাওয়া ট্রলারের ২৫ জেলেকে উদ্ধার করেছে। অন্যদিকে দুবলারচর সংলগ্ন উপকূলীয় সাগর থেকে কোস্ট গার্ডের টহল দল ৫১ জেলে উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড। উদ্ধারকৃত জেলেদের সুন্দরবনে কোস্ট গার্ডের দুবলার চর ক্যাম্প এবং হিরণ পয়েন্টে নৌবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে প্রথমিক চিকিৎসা দিয়ে মংলায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

উপকুলীয় মৎসজীবি সমিতির সভাপতি শেখ ইদ্রিস আলী ও বাগেরহাট জেলা মৎস আড়তদার সমিতির সভাপতি এসএম জবেদ আলী জানান, বাগেরহাটের মৎসজীবি আব্দুস সালামের এফবি সাগর -২, এফবি রাজিব, আবুল বাওয়ালীর এফবি রুপক, শরনখোলার মনির আকনের এফবি মায়ের দোয়া, শাহিন উদ্দীন বেপারীর এফবি স্বজল ট্রলারসহ বাগেরহাটে ৮টি ৭৫জন জেলে এখনো নিখোঁজ রয়েছে বলে জানান।

বাগেরহাটের জেলে পল্লী কচুয়ার বগা, বাধাল, মাদারতলা, আলীপুর, বিশখালী, উমাজুড়ি, মোড়েলগঞ্জের শোলখারী, চিতলমারীর কেষ্টনগরে খোজঁ নিয়ে জানাগেছে, বাগেরহাটের এই ৮টি জেলে পল্লীর ৭৫জন জেলে এখনো নিখোঁজ রয়েছে। এসব জেলে পল্লীতে এখন নিখোঁজ জেলেদের অপেক্ষায় রয়েছে স্বজনদের অজানা আতংকে। এই পরিবারগুলো চলছে কান্নার রোল। জেলে পরিবারগুলো তাদের প্রিয় মানুষটিকে আর ফিরে পাবেন কিনা সে আতংকে দিন পার করছে। সোমবার বাগেরহাটের বিভিন্ন জেলে পল্লীগুলোতে ঘুরে এমন আহাজারি ও শোকাবহ পরিবেশ দেখা গেছে।

দূঘটনার কবল থেকে বেচে আসা জেলেদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সুন্দরবনের শরনখোলা রেঞ্জের দুবলার চর থেকে ৪০ কিলোমিলার দুরে বঙ্গোপসাগরের ১ নং ফেয়ারওয়ে বয়া এলাকায় শতশত জেলেরা ট্রলার নিয়ে মাছ ধরছিলো। এসময় কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঝড়ো হওয়া ও বৃষ্টি উচু ঢেউয়ে অনেক ট্রলার সাগরে ডুবে যায়। এ সময়ে অনেকে সাতরে প্রানে বাচার চেষ্টা করে।

বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলার বগা এলাকার মাছ ব্যবসায়ী ও নিখোজ এফ ভি শাহজালাল ট্রলারের মালিক হানিফ ব্যপারী বলেন, তার মেঝভাই আবুল ব্যপারীর এফবি সজল ও মামা আবুল বাওয়ালীর এফবি রুপক ট্রলারের এখনো খোজ পাওয়া যায়নি। তাদের তিনটি ট্রলার ডুবে গেছে। এখনো তাদেরসহ ট্রলারে থাকা ৩০ জেলের কোন সন্ধান নেই।

কেবি বাজারের দড়াটানা নদীর পাড়ে পহর গুনছেন এক বৃদ্দা মা তার সন্তানের জন্য। সাথেই রয়েছে তার পুত্রবধু রিমা বেগম (২১)। একমাত্র আড়াই বছরের দুধের সন্তান তামিম মোল্লাকে নিয়ে অপেক্ষা করছেন। গৃহবধু রিমা স্বামী এলামুল মোল্লা সাগরে গেছে মাছ ধরতে। তিনি আবুল বাওয়ালীর ট্রলারে গত ৩ বছর ধরে কাজ করছেন। সোমবার সকাল পর্যন্ত এনামুল মোল্লার কোন খোজ পাননি তার পরিবার। তাই ট্রলার ঘাটে রবিবার বিকাল থেকে এনামুলের বৃদ্ধা মা স্ত্রী ও শিশু ছেলের অপেক্ষা।

সোমবার সকালে বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা নারায়ন চন্দ্র দে বাগেরহাট কেবি বাজার প্রধান মৎস্য আড়তে গিয়ে নিখোজ ট্রলার ও জেলেদের বিষয়ে খোজ নিতে দেখা গেছে। মৎস্য বিভাগের এ কর্মকর্তা বলেন, রবিবার রাত পর্যন্ত নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড শতাধিক জেলেকে সাগরে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করে নিরাপদে নিয়েছেণ। সোমবার সকাল পর্যন্ত বাগেরহাট ,কচুয়া ও শরনখোলার ৭টি ট্রলার ডুবি এবং ২৭ জন নিখোজ রয়েছে বলে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোঃ জাহংঙ্গীর আলম বলেন, দুরলার অদুরে সাগরে দুজনের লাশ ভেসে থাকার খবর তিনি জানতে পেরেছেন। সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিখোজ জেলেদের বিষয়ে খোজ নিতে বলা হয়েছে।

(একে/এএস/সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test