সুন্দরবন উপকূলে ভেসে আসছে জেলেদের লাশ

বাগেরহাট প্রতনিধি :  বঙ্গোপসাগরে ফেয়ারওয়ে বয়া এলাকায় শনিবার ভোরে ও রবিাবর বিকেলে ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যাওয়া অর্ধশত ফিশিং ট্রলারের নিখোঁজ জেলেদের লাশ সুন্দরবন উপকূলে ভেসে আসছে শুর করেছে। মঙ্গলবার বিকালে সুন্দরবনের দুবলা জেলে পল্লীর আলোরকোল ও মেহেরআলীর চরে ভেসে আসা লাশ তিনটি উদ্ধার করে স্থানীয় জেলেরা।

হতভাগ্য তিন জেলের লাশের পরিচয় এখনো পাওয়া যাযনি। সুন্দরবর উপকূলে ভাসছে আরো একটি লাশ। এই লাশ উদ্ধারে নেই কোন সরকারী প্রচেষ্টা। সুন্দরবন দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপ ও সুন্দরবন পূর্ব বিভাগ এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।

দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহানূর রহমান শামীম জানান, বঙ্গোপসাগরের সুন্দরবন উপকূলের আলোর কোলের লাইটহাউজ এলাকা থেকে দু’টি ও মেহেরআলীর চরের কাছ থেকে জেলেরা একটি লাশ উদ্ধার করে। উদ্ধারকৃত জেলেদের লাশের পরিচয় পাওয়া যায়নি। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সুন্দরবন উপকূলে হতভাগ্য আরো এক জেলের লাশ ভাসতে দেখাগেছে বলে জানিয়েছেন এই মৎসজীবি নেতা। তিনি আরো জানান, জোয়ারের সাথে সাথে আরো বাড়তে পারে ভেসে আসা জেলেদের লাশের সংখ্যা।

রবিবার বিকেলে বঙ্গোপসাগরের সুন্দরবন উপকূলে ফেয়ারওয়ে বয়া এলাকায় ঝড়ের কবল থেকে এফবি সাদিয়া ট্রলার নিয়ে বেঁচে আশা কচুয়ার বগা গ্রামের মালেক সরদারের ছেলে আনিস সরদার (৬৫) মঙ্গলবার বিকেলে বাগেরহাটের মৎস বন্দর কেবি ঘাটে বসে জানান, গত ৫০ বছরেও সাগরে জেলেদের এমন বিপর্যয় ঘটেনি। তার চোখের সামনেরই দেখতে দেখতে মুহুর্তের মধ্যে একে একে ৪০/৪৫টি মাছধরা ট্রলার ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায়। হটাৎ করে সাগরে আছড়ে পড়তে থাকে বিশাল বিশাল ঢেউ। ঝড়ো বাতাস ও ঠেউয়ের সাথে শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। বাচাঁও বাচাঁও বলে জেলেদের আর্তচিৎকার তিনি শুনতে পেলেও উপায় ছিলনা কাউকে উদ্ধার করার। তিনি তখন নিজের ট্রলারটি ঝড়ের কবল থেকে বাঁচাতে মরনপন চেষ্টায় লিপ্ত। ঝড়ের সাথে লড়াই করে তিনিসহ ওই ট্রলারে থাকা বাগেরহাটের ১৪ জেলে সন্ধা নাগাদ সুন্দরবন উপকূলে এসে পৌছায়। এরপর তারা মঙ্গলবার সকালে ট্রলার নিয়ে বাগেরহাটে ফিরে আসে। তিনি আবহাওয়া বিভাগের প্রতি চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, তারা ঝড়ের কোন পূর্বাভাস জানায়নি। ঝড়ের পূর্বাভাস থাকলে আজ শতশত জেলে সাগরে হারিয়ে যেতনা।

উপকূলীয় মৎসজীবি সমিতির সভাপতি শেখ ইদ্রিস আলী ও বাগেরহাট মৎস আড়ৎদার সমিতির সভাপতি এসএম আবেদ আলী বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে নিখোঁজ থাকা কয়েকশ জেলেকে উদ্ধারে হেলিকপ্টার ও যুদ্ধ জাহাজ দিয়ে দ্রুত তল্লাশীর দাবী জানান। সরকারী কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এখনো নিখোঁজ জেলে পরিবারগুলোর কোন খোঁজ খবর নিচ্ছেন না বলে এই দুই জেলে নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা জানান, বাগেরহাটের এখনো ৬২ জন নিখোঁজ জেলের কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছেনা। তারা স্ব-উদ্দ্যোগে সাগরে কয়েকটি ট্রলার পাঠিয়ে নিখোঁজ জেলেদের খুজেঁ ফিরছেন। বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার বগা জেলেপল্লীর নিখোঁজ ৪৯ জেলের সন্ধার এখনো মেলেনি। তবে বাগেরহাটের অন্যান্য এলাকার জেলেপল্লীর নিখোঁজ ১৩ জেলের সন্ধান মিলেছে। খোঁজ মেলেনি বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের কবলে পড়া বাগেরহাটের নিখোঁজ এফবি শাহজালাল, এফবি রুপক, এফবি সাগর - ২, এফবি সজলসহ ১০টি ট্রলারের।

কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের দুবলার চর স্টেশনের ইনচার্জ আব্দুল কাইয়ুম বলেন, সোমবার সন্ধায় উদ্ধারকৃত ১৬ জেলেকে খাবার ও চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠানোর জন্য মাহাজনদের খবর দেওয়া হয়েছে।

শনিবার ভোরে ও রবিবার বিকেলে বঙ্গোপসাগরের সুন্দরবন উপকূলের দুবলার চর উপকূল ও ফেয়ারওয়ে বয়া এলাকায় ঝড়ের কবলে পড়ে অর্ধশত ট্রলার ডুবিতে নিখোঁজ হয় বাগেরহাটসহ বিভিন্ন এলাকার কয়েকশ জেলে। এদের মধ্যে এখনও সন্ধান মেলেনি শতাধিক জেলের। কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী, র‌্যাব, সুন্দরবর বিভাগ ও বিভিন্ন ফিশিং ট্রলারের মাধ্যমে উদ্ধার হয়েছে বাগেরহাট, খুলনা, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের প্রায় ৫০০ জেলে।#


(একে/এসসি/সেপ্টেম্বর২২,২০১৫)