E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষিত ,জামায়াতের দখলে বসত ঘর

দু’ সন্তানকে নিয়ে শ্যামনগরের মলিনা বিশ্বাস পথে পথে

২০১৫ অক্টোবর ৩০ ২১:৫৬:৩৪
দু’ সন্তানকে নিয়ে শ্যামনগরের মলিনা বিশ্বাস পথে পথে

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের মলিনা বিশ্বাসের বিয়ে হয়েছিল বরিশাল জেলা সদরের ঝণ্টু বিশ্বাসের সঙ্গে। শ্বশুর বাড়ি থেকে তাকে মেনে না নেওয়ায় ১৯৯০ সাল থেকে স্বামীর সঙ্গে তার জায়গা হয় বাপের বাড়িতে। মেয়ে শম্পা ও ছেলে সুমন বিশ্বাসকে রেখে ১৫ বছর আগে ব্রেন স্টোকে মারা যান ঝণ্টু।

এরপর থেকে বাপের বাড়ির শত্রু সম্পত্তিতে ঘর বেঁধে দু’ সন্তানকে নিয়ে কোন রকমে বেঁচে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। জামায়াত শিবির ছাড়াও স্থানীয় একটি মহল তার উপর কু-নজনর পড়ে। তাদের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় প্রতি রাতে ঘরের চালে ইট মারা হতো। একপর্যায়ে তাদের তিনজনকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করার জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করা হয়। বিভিন্নভাবে অপপ্রচারও করা হয়। তার বাড়িতে হামলাসহ বিভিন্ন হুমকির ঘটনায় স্থানীয় আজিজ হুজুর, গফুর মাষ্টার, শেল আলী গাজী, উজ্জল, সিরাজ , মুছাসহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেও লাভ হয়নি কোন। অভিযোগ করেছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক বরাবর। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীলিপ কুমার বণিক ২০০৯ সালের ২০ সেপ্টম্বর সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সুশীলনের দেওয়া চাউল ও তেল সহায়তা দেওয়ার জন্য কাশিমাড়ি ইউপি চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে পাঠান। এ সময় কমপক্ষে ৫০ জনের বেশি নারী ও পুরুষের উপস্থিতিতে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে গোবিন্দপুর গ্রামের বাহার আলী তরফদারের ছেলে গ্রাম পুলিশ করিম তরফদার তাকে পিছন দিক থেকে বাঁশের লাঠি দিয়ে এলোপাতড়ি পিটিয়ে বাম কাঁধের হাড় ও মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে দেন। রক্তাক্ত জখম অবস্থায় তাকে প্রথমে শ্যামনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ও পরে ঢাকা সোরাওয়ার্দি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ১৬ আগষ্ট তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হলেও বর্তমানে তিনি ওই হাসপাতালের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ি মাসে চার হাজার টাকার বেশি ইনজেকশান নিচ্ছেন। তবে তার চিকিৎসা ক্ষেত্রে সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রী ডাঃ আ.ফ. ম রুহুল হক ও প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা থাকায় তিনি আজো বেঁচে আছেন। তিনি তার উপর হামলার ঘটনায় এক নারী সাংসদের সহায়তা প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে যেয়ে দেখা করেছেন। সাংসদ স.ম জগলুল হায়দারের সুপারিশকৃত আবেদনপত্রে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ আসাদুজ্জামান সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিলেও তিনি নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।

মলিনা আরো জানান, চলমান পরিস্থিতিতে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে ছেলেকে সাতক্ষীরার একটি স্কুলে ভর্তি করিয়ে নিজে কোন রকমে বসবাস করতে থাকেন তিনি। স্থানীয় গফুর মাষ্টারও তার নামে থানায় মিথ্যা মামলা করে। যা’ আজো বিচারাধীন। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে স্থানীয় ওই মহলটির হুমকি ধামকিতে মা কালিদাসি ও ভাই স্বপন দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। সোহরাওয়ার্দি হাসপাতালে ভর্তি থাকাকাালিন জামায়তের সক্রিয় কর্মী একই গ্রামের আনছার আলীর ছেলে মহসিন আলী স্বপরিবারে তার বসত বাড়ি দখলে নিয়ে বসবাস শুরু করে। তিনি হাসপাতাল থেকে ফিরে বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করলে তাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বিষয়টি জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হলে তাদের নির্দেশে শ্যামনগর উপজেলা সহকারি ভূমি কমিশনার সরেজমিনে তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা প্রমান পেলেও তিনি আজো নিজ বাড়িতে উঠতে না পেরে দারে দারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তার উপর হামলাকারি গ্রাম পুলিশ করিম তরফদার প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। প্রধান মন্ত্রীর নির্দেশে তাকে আয়লা দুর্গত ঘর দেওয়ার কথা থাকলে তাকে আজো ঘর দেওয়া হয়নি। দেওয়া হয়নি কোন আর্থিক সহায়তা। এমনকি একমাত্র ছেলে অর্থাভাবে পড়াশুনা করতে পারছে না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাকে পথে পথে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে। শুক্রবার দুপুরে সাতক্ষীরা মায়ের বাড়িতে এসে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রায় পঙ্গু যন্ত্রনাকাতর মলিনা বিশ্বাস (৫৬)। চোখে মুখে ছিল আতঙ্কের ছাপ।


(আরএনকে/এসসি/অক্টোবর৩০,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test