E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাগুরা মেয়র পদে তৎপর এক ডজন প্রার্থী

২০১৫ নভেম্বর ০৮ ১৫:৩২:৪৯
মাগুরা মেয়র পদে তৎপর এক ডজন প্রার্থী

মাগুরা প্রতিনিধি :ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে মাগুরায় তৎপর আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, স্বতন্ত্রসহ প্রায় একডজন প্রার্থী। তফসিল ঘোষনার আগেই ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য ব্যানার, পোষ্টার, বিলবোর্ড কেন্দ্রিক প্রচারণার পাশাপাশি সম্ভাব্য প্রার্থীর তৃর্ণমূল থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের কাছে গিয়ে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন।

দলীয় টিকেটের জন্য জেলা শীর্ষ নেতাদের সাথে সখ্যতা গড়ার সাথে-সাথে কেউ-কেউ ছুটছেন কেন্দ্রিয় নেতাদের কাছে। বর্তমান মেয়র থেকে শুরু করে তরুন প্রজন্মের হাফ ডজন নেতা রয়েছেন আগাম নির্বাচনী তৎপরতায়।

২০১১ সালের ২৭ জানুয়ারী মাাগুরা পৌর সভার নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ আলতাফ হোসেন। আলতাফ হোসেন সে সময় আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনিবার্হী কমিটির সদ্য ছিলেন। প্রবীন আওয়ামীলীগ নেতা আলতাফ হোসেন মেয়র থাকা অবস্থায় ২০১৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারী মুত্যু রবণ করেন।

১৩ সালের ৬ মে অনুষ্ঠিত হয় মাগুরা পৌর সভার উপ-নির্বাচন। এ উপ-নির্বাচনে জেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল আকতার খান কাফুর মেয়র নির্বাচিত হন। বিদ্রোহী প্রার্থী ও দলের এক অংশের বিরোধিতার কারনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দি হয়ে পরাজিত হন আওয়ামীলীগ প্রার্থী প্রায়ত মেয়র আলতাফ হোসেনের পুত্র খুরশিদ হায়দার টুটুল।

বর্তমান মেয়র বিএনপি নেতা ইকবাল আকতার খান কাফুর আবারো মেয়র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করেছেন। এবার প্রথমবারের মত দলীয়ভাবে পৌরসভাসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিধান করা হয়েছে। যে কারনে তিনি দলীয় সমর্থন নিয়ে মেয়র প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে বিগত নির্বাচনে দলের পাশাপশি তিনি সাধারণ ভোটারদের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছিলেন। কিন্তু মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর মাগুরা শহরের রাস্তা ঘাটের চরম দুরাবস্থা ও গেল বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক জলাবদ্ধতার কারনে সাধারণ ভোটাদের কাছে তিনি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছেন। যদিও অতি সম্প্রতি তিনি মূল শহরে রাস্তার কাজ সম্পন্ন ও কিছু-কিছু এলাকায় ড্রেন নির্মানের কাজ চলমান রয়েছে। যদিও পৌর প্রকৌশল বিভাগ জানিয়েছে, বর্তমানে চলমান সব কাজই বিগত মেয়রের আলতাফ হোসেনের সময়কালে বরাদ্দকৃত। তবে তার বিরুদ্ধে একাধিক বিএনপি নেতা-কর্মীর অভিযোগ বিগত সরকার বিরোধী আন্দোলনে দলীয় নেতা-কর্মীরা যখন মালি মামলায় জড়িয়ে দিশেহারা, তখন তিনি অন্দোলন-তো দূরের কথা দলীয় নেতা-কর্মীদের খোঁজ খবর পর্যন্ত নেননি। বরং বিপদগ্রস্থ কোন নেতা-কর্মী তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি বিব্রত বোধ করেছেন। অন্যদিকে সরকারি দলের প্রভাবশালীদের সাথে গোপন আতাত করে নিরাপদে মেয়রের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন । তবে ইকবাল আকতার খান কাফুর এ সব অভিযোগ অস্বিকার করে বলেন, নানা সীমাবদ্ধতার পরেও তিনি স্বল্প সময়ে পৌরবাসীকে সাধ্যমত সেবা দেওয়ার চেষ্ঠা করেছেন। আগামী নির্বাচনেও তিনি মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন। এ লক্ষে দলীয় সমর্থন লাভের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে শেষ পর্যন্ত দলীয় সমর্থন না পেলে নেতা-কর্মীদের সাথে পরামর্শ করে নির্বাচনে অংশগ্রহনের সিদ্ধান্ত নেবেন।

ইকবাল আকতার খান কাফুরের পাশাপাশি বিএনপি থেকে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফারুকুজ্জামান ফারুক ও জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান খান পিকুলের নামও মেয়র প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছে। তারা দুজনই নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষার পাশাপাশি দলীয় সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করার জন্য তৎপরতা শুরু করেছেন।

এ ছাড়া বিএনপি’র নির্ভযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, কেস-মামলা ও প্রশাসনিক চাপে প্রার্থীতার ব্যাপারে অনেকেই মুখ খুলছে না। শেষ মুহুর্তে বিএনপি থেকে আরো একাধিক প্রার্থী দেখা যাবে।

এদিকে ক্ষমতাশীন দল আওয়ামীলীগ থেকে হাফ ডজন মেয়র প্রার্থী নির্বাচনী তৎপরাতায় শুরু করেছেন। এ লক্ষে তারা শহরের বিল বোর্ড ব্যানার লাগিয়ে পৌরবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। পাশাপাশি কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ঘরোয়া বৈঠক করছেন। আবার কোন কোন প্রার্থী পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে তৃর্ণমূলের নেতা-কর্মীদের সমর্থন আদায়ের চেষ্ঠা করছেন। প্রার্থীরা দলীয় প্রার্থীতা লভের আশায় জেলার গুরুত্বপুর্ণ শীর্ষ নেতাদের সাথে সখ্যতার পাশাপাশি ঢাকায় দৌড় ঝাপ করে যোগাযোগ রাখছেন কেন্দ্রিয় নেতাদের সাথে।

আওয়ামীলীগের যে সকল প্রার্থী দলীয় সমর্থন নিয়ে মেয়র নির্বাচনের অংশ নিতে প্রত্যাশা ব্যক্ত করে নানাভাবে তৎপরতা চালাচ্ছেন তারা হলেন, সত্তরের দশকের শুরুতে একাধারে মাগুরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং পরবর্তীতে জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী জেলা আওয়ামীলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মুন্সি রেজাউল হক, প্রয়াত মেয়র আলতাফ হোসেনের পুত্র আওয়ামীলীগ নেতা খুরশিদ হায়দার টুটুল, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আওয়ামীলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটি’র সহ-প্রচার সম্পাদক অ্যাড. শাখারুল ইসলাম শাকিল, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহবায়ক রানা আমির ওসমান রানা, সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আনিচুর রহমান খোকন, জেলা আওয়ামীলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির বিজ্ঞান তথ্য প্রযুক্তি সম্পাদক জেলা আইজীবি সমিতি ও পৌর আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত অ্যাড. রফিকুল আকবর নান্না’র পুত্র অ্যাড. মাহবুবুল আকববর কল্লোল।

মেয়র প্রার্থীতার ব্যাপারে প্রত্যাশা ব্যক্তকারী উল্লেখিত ব্যাক্তিদের বাইরে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে কোন-কোন নেতা-কর্মীদের মুখে আনিচুজ্জামান সাচ্চু’র নাম শোনা যাচ্ছে। আনিচুজ্জামান সাচ্চু মাগুরা জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও মাগুরা-২ আসন থেকে একধিকবার নির্বাচিত এমপি মরহুম জননেতা আছাদুজ্জামানের পুত্র।

তবে ক্ষমতাশীন দলের মেয়র প্রার্থী হিসেবে প্রত্যাশা ব্যক্তকারীরা জানিয়েছেন তারা দলের সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থাশীল। শুধু দলীয় সমর্থন পেলে নির্বাচনে অংশ নেবেন।

প্রধান দুইটি রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক অ্যাড. হাসান সিরাজ সুজা মেয়র প্রার্থী হতে পারেন। তিনি নিজের কর্মী-সমর্থকদের সাথে যোগাযোগ রক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন দলের প্রার্থীতা ও নির্বাচনী পরিবেশ উপর নজর রাখছেন। নির্বাচনের অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি হলে প্রার্থী ঘোষণা করবেন।

এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী তৎপরাতা শুরু করেছেন মাগুরা পৌর সভার সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র তপন কুমার রায় (তপন ঠাকুর)। প্রচার রয়েছে সাবেক এই আওয়ামীলীগ নেতা বরাবরের মত ক্ষমতাশীন দলের একটি অংশের সাথে সখ্যতা রেখে নির্বাচনী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।

জেলা অওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ কুমার কুন্ডু বলেন, আওয়ামীলীগ একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। বড় রাজনৈতিক দল থেকে পৌর-নির্বাচনের একধিক নেতা প্রার্থীতার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে পৌর নির্বাচনে প্রার্থীতার ব্যাপারে কেন্দ্র থেকে এখোনও কোন নির্দেশনা আসেনি। কেন্দ্রিয় নির্দেশনা অনুযায়ী দলীয় প্রার্থী নির্ধারণ করা হবে।

জেলা বিএনপি’র সভাপতি কবীর মুরাদ বলেন, দলীয় সমর্থন নিয়ে মেয়র, কাউন্সিল প্রার্থী হতে অনেক নেতা-কর্মী আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তবে বিএনপি দলীয়ভাবে পৌর-নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা সেটা এখনো নিশ্চিত নয়। দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফিরে পৌর নির্বাচনের ব্যাপরে যে নির্দেশনা দেবেন সেভাবে কাজ করা হবে।

এক লাখ ১২ হাজার জনসংখ্যা অধ্যুষিত মাগুরা প্রথম শ্রেণীর পৌরসভার সীমানা ৪৪.৩৬ বর্গ কিলোমিটার। ভোটারসংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৮৯ জন। ১৯৯৩ সালে প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত হওয়ার পর পৌরসভার সাথে আশপাশের বেশ কিছু গ্রাম সংযোজিত হয়। কিন্তু দীর্ঘদিনেও এসব এলাকায় লাগেনি কোন উন্নয়নের ছোঁয়া। অধিকাংশ এলাকার রাস্তাঘাট এখনো রয়েছে কাঁচা। নেই পৌরসভার পানি সরবরাহ ও বৈদ্যুতিক সুবিধা। পৌর নাগরিক সুবিধা না বাড়লেও উপরন্তু পৌরবাসির কাঁধে চেপেছে বর্ধিত পৌরকরসহ নানা ধরণের করের বোঝা। অন্যদিকে, প্রধান দুইটি দলে রয়েছে আত্ম কোন্দল। সাধারন ভোটারদের অভিমত আত্মকোন্দল মিটিয়ে যিনি দলীয় টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন আমরা তাদের পক্ষেই কাজ করবো। এলাকা উন্নয়নের জন্য আমরা চাই একজন সৎ ও যোগ্য মেয়র।

(ডিসি/এসসি/নবেম্বর ৮ ,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test