E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরার কুখ্যাত জামায়াত ক্যাডার নূর ইসলামের খুঁটির জোর কোথায়?

২০১৫ নভেম্বর ০৮ ১৯:৪৬:২৭
সাতক্ষীরার কুখ্যাত জামায়াত ক্যাডার নূর ইসলামের খুঁটির জোর কোথায়?

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি :সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙা ইউনিয়নের ছাতিয়ানতলা গ্রামের কুখ্যাত জামায়াত ক্যাডার নুর ইসলাম ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে হিন্দু সম্প্রদায়। একের পর এক জাল দলিল তৈরি করে তাদের জমি জবরদখল, নারী ধর্ষণ, ডাকাতি, মিথ্যা মামলায় হয়রানি করার  অভিযোগ রয়েছে নূর ইসলামের বিরুদ্ধে।

প্রতিবাদ করায় এলাকার সাধারণ মানুষকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে ওই চক্রটি। ওই চক্রটি ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ফাঁসির রায় পরবর্তী সাতক্ষীরায় সহিংসতা সৃষ্টির অভিযোগ থাকলেও প্রতিকার চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও লাভ হয়নি।

এলাকাবাসী জানায়, রাজনগর গ্রামের বলদেপাড়ার মৃত হেরাজতুল্লার ছেলে ইসমাইল সরদার, ইসরাইল সরদার ও নূর ইসলাম সরদার। তারা ওই গ্রামের ওহাব ডাকাত পরিবারের সদস্য। বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সময়ে নূর ইসলাম ছিলেন ওই দলের সক্রিয় ক্যাডার ও গ্রাম সরকার প্রধান। ২০০১ সালে চার দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর নূর ইসলাম জামায়াতের ছত্রছায়ায় এসে তাদের পৃষ্টপোষকতা শুরু করেন। ছাতিয়ানতলা গ্রামের জ্ঞানেন্দ্র নাথ দাসের কাছ থেকে দু’ একর নয় শতক জমি কিনে এক যুগ আগে থেকে সেখানে বসবাস শুরু করে নূর ইসলাম। জমি রেজিষ্টির পর বাকি থাকা ৬৫ হাজার টাকা নিয়ে শালিস করে নয়জন ইউপি সদস্য ও ইউপি চেয়ারম্যান এমএ মজিদ শালিসনামায় সাক্ষর করে আজো ওই টাকা ফেরত পাননি জ্ঞানেন্দ্র। এরপর ১৯৮৬ সালে রবিন হাজরার স্ত্রী সন্ধ্যা রানী হাজরার আড়াই বিঘা জমি শার্শা সাবরেজিষ্ট্রি অফিসের জাল দলিলের মাধ্যমে সম্প্রতি জবর দখলে নিয়েছেন তিনি।

এলাকাবাসী আরো জানায়, ছাতিয়ানতলা গ্রামের শরৎ দাসের প্রথম স্ত্রী কার্তিক দাসকে নাবালক অবস্থায় রেখে মারা যান। শরৎ দাসের দ্বিতীয় স্ত্রীর পাঁচ ছেলে। কার্তিক দাস ১৯৬৪ সালে নাবালক অবস্থায় ভারতে চলে যায়। নাবালক কার্তিক দাসের পক্ষে বাবার জাল দানপত্র সৃষ্টি করে তাকে ১৯৮১ সালে দাতা দেখিয়ে শার্শা থানায় পৃথক দু’টি জাল দলিল তৈরি করেন ইসমাইল সরদার ও ইসরাইল সরদার। দু’ ভাইকে জেল খাটানোর ভয় দেখিয়ে ১৯৮৮ সালে ওই জমি কাদের দালালের নামে এক বিঘা ও বাকী অংশ নিজের নামে লিখে নেয় নূর ইসলাম। এ ঘটনা জানতে পেরে হরিপদ দাস ও তার চার ভাই সাতক্ষীরা সদর সহকারি জজ আদালতে ৩১২/৮৮ নং দেওয়ানী মামলা করেন। মামলার রায় নূর ইসলামের বিপক্ষে গেলে নূর ইসলাম উচ্চ আদালতে আপিল করেন। ১৯৯৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর আদালতের রায় ও একই বছরে ৩ অক্টোবর ডিক্রি নূর ইসলামের পক্ষে যায়। আদালতে সাক্ষীর জবাবন্দিতে দলিলে সনাক্তকারী হিসেবে গনেশ দাস উল্লেখ করেন যে তাকে একটি মুদ্খিানা দোকানে বসিয়ে একাধিক লিখিত কাগজে সাক্ষর করিয়ে নেওয়া হয়। তৎকালিন ইউপি চেয়ারম্যান এমএ মজিদ কার্তিক দাস ১৯৬৪ সালে ভারতে চলে যান বলে উল্লেখ করেন। জেলার বাইরে শার্শা থানার আওতাধীন কার্তিক দাসের নামে এক শতক জমি না থাকার পরও কাল্পনিক কাগজপত্র দেখিয়ে সেখানে সাতক্ষীরার যোগরাজপুর মৌজার জমি রেজিষ্ট্রি করা জালিয়াতির সামিল হিসেবে হরিপদ দাসের আইনজীবী উল্লেখ করেন। এরপরও রায় নূর ইসলামের পক্ষে কিভাবে গেল তা নিয়ে বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয় আদালত পাড়ায়। একপর্যায়ে ১৯৯৯ সালে কার্তিক দাস পাসপোর্টে ভারত থেকে গ্রামে ফিরে সাতক্ষীরা কোর্টে এক এফিডেফিড সম্পাদন করেন। এফিডেফিডে কার্তিক দাসের নামে তার বাবা কোন জমি দানপত্র করেন নাই, তিনি ইসমাইল, ইসরাইল, নূর ইসলাম বা কারো নামে জমি রেজিষ্ট্রি বা হসান্তর করেন নাই বলে উল্লেখ করেন। এরপরও ডিক্রি জারির মোকদ্দমার মাধ্যমে উচ্ছেদের মামলা না করে স্বত্ব জারির মামলা করেন নূর ইসলাম। একপর্যায়ে হরিপদ পৈতৃক বাস্তু ভিটার এক বিঘা ব্যতীত বাকি অংশ জবর দখল হয়ে যাওয়ায় পাগলপ্রায় হয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ান। এরপর থেকে শুরু হয় হরিপদ দাসের পরিবার ও তার ভাইদের উচ্ছেদের অভিযান। মথুরাপুরের মধু ও দেবনগরের মুকুল সন্ত্রাসী লেলিয়ে দেওয়া হয় ওই পরিবারগুলোর বিরুদ্ধে। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে মধু ও মুকুল অধিকাংশ সময় অবস্থান করতো জামায়াতের কুখ্যাত ক্যাডার নূর ইসলাম ও রবিউল ইসলামের বাড়িতে। নূর ইসলামের পরামর্শে ’৮০ দশকে ১৯৭৪ সালে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে মৃত্যুবরণকারি ছাতিয়ানতলা গ্রামের সাবেক সেনা সদস্য ধীরেন্দ্র নাথ হাজরার জমির জাল দলিল সৃষ্টি করে গোপন রাখেন রবিউল ইসলাম ও তার ভাইয়েরা। এরপরও নূর ইসলামের পরামর্শে স্বামীর পৈতৃক ভিটা থেকে স্বর্ণলতা হাজরা ও তার সন্তানদের উচ্ছেদের যাবতীয় চেষ্টা করে ব্যর্থ হন সমছেল ও রবিউল ইসলাম। এরপরও নূর ইসলামের পরামর্শে বেআইনি জবরদখলের চেষ্টা অব্যহত রেখেছেন রবিউল, রফিকুল, শফিকুল ও সাইফুল।

সরেজমিনে রোববার সকালে হরিপদ দাসের বাড়িতে গেলে দেখা গেছে হরিপদ দাস ও তার ছোট ভাইয়ের বসতঘরের চারিধারে বিচালী গাদা, কুলের শুকনা ডালসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তাদেরকে উচ্ছেদের পায়তারা করে চলেছেন নূর ইসলাম ও তার ছেলে হুমায়ুন কবীর মিণ্টু। সাংবাদিক পরিচয় জানতেই ছুটে আসেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও স্থানীয় পুলিশিং কমিটির সভাপতি সামছুদ্দিন, পরিতোষ দাস, সাবেক ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন। জালদলিল সৃষ্টি, মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি, বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ করার চেষ্টাসহ হরিপদ দাস ও তার ভাইদের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদ করায় তাকে বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করার কথা বলেন সামছুৃদ্দিন। নূর ইসলাম ও তার বাহিনীর হাতে একের পর এক নির্যাতনের কাহিনী তুলে ধরেন হরিপদ দাসের স্ত্রী অর্পণা দাস, ছেলে কলেজ ছাত্র পলাশ দাসসহ স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, ১৯৮১ সালের ২৮ ডিসেম্বর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এমএ মজিদের নির্দেশে গ্রাম পুলিশ নুর ইসলামের বাড়ি থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি ক্রেস উদ্ধার করেন ( মেমো নং- ৬৪)। এ সময় নূর ইসলাম পাইপগানসহ অন্য অস্ত্র সরিয়ে ফেলেন। নূর ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারি রাস্তা দখল করা ছাড়াও বিরাজ গোসাইয়ের জমি জাল দলিল সৃষ্টিকারি সহোদর ইসমাইল ও ইসরাইলের কাছ থেকে নিয়ে মেয়েকে স্ত্রী সাজিয়ে হামজের আলীর সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। এলাকায় ডাকাতির অভিযোগে গ্রাম সরকার থাকা অবস্থায় ১৯৮১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি গণপিটুনির শিকার হন নূর ইসলাম।(দৈনিক ইত্তেফাক)। ১৯৮২ সালের ১১ জানুয়ারি ডাকাতির অভিযোগে গণপিটুনি খান নূর ইসলাম। (দেশ হিতৈষী)। কয়েকদিন পর আনছারের স্ত্রী আলেয়াকে মারপিটের অভিযোগে গ্রাম সরকারের পদ হারান তিনি। এ ছাড়া নূর ইসলামের বিরুদ্ধে ঠিকাদার কার্তিক দাসের বাড়িতে ডাকাতি ও তার ছেলে সুমনকে অপহরণের পরিকল্পনা করে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনার অভিযোগ করেন গ্রামবাসি। দত্তবাগের দেছারত আলী ও আনসার মুন্সি পরিবারের উপর অত্যাচার চালিয়ে তাদেরকে তার কাছে কমদামে জমি বিক্রি করতে বাধ্য করান নূর ইসলাম। সম্প্রতি নূর ইসলামের বিরুদ্ধে প্রতিবেশি এক হিন্দু নারীকে ধর্ষণ করে বিষয়টি কাউকে জানাজানি করলে তার মেয়ে বিয়ে দিতে সমস্যা হবে বলে ওই মহিলাকে বিষয়টি গোপন রাখার হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন ওই ভুক্তভোগী নারী। নূর ইসলামের বিরুদ্ধে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও কোন লাভ হয়নি বলে জানান তারা। জামায়াতের সক্রিয় কর্মী নূর ইসলাম ও তার সহযোগি রবিউল ইসলাম সহিংসতা সৃষ্টি করলেও বহাল তবিয়তে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে রয়েছেন বলে দাবি করেন এলাকার আওয়ামী লীগ ও পুলিশিং কমিটির নেতৃবৃন্দ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নূর ইসলামের সঙ্গে রোববার সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে তার ০১৭৪৯-৫৬৩৯৯৪ মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে এক মহিলা পরিচয় না দিয়ে মুঠোফোনটি রিসিভ করে বলেন এটি কিশোরগঞ্জের নাম্বার।

তবে নূর ইসলামের ছেলে হুমায়ুন কবীর মিণ্টুর সঙ্গে তার ০১৭৫৭-৮০৮৭৩৪ নম্বরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।



(এমএইচএম/এসসি/নবেম্বর০৮,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test