E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চুরির অভিযোগে কিশোর নির্যাতন, আটক ৫

২০১৫ নভেম্বর ১২ ১৪:০০:৩৭
চুরির অভিযোগে কিশোর নির্যাতন, আটক ৫

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : কিল, লাথি, ঘুষি মেরে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন ১৪ বছরের কিশোর রাসেল হাওলাদারকে ভ্যান গাড়ির পিছনের রডের সাথে পিছমোড়া করে হাত-পা বেঁধে প্রায় ৫০/৬০ ফুট দূরে টেনে নিয়ে যায়। এতে রাসেল জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে রাস্তায় ফেলে রাখে।

মাত্র আড়াই হাজার টাকা ও দুটি রুপার আংটি চুরির অভিযোগ এনে শত শত মানুষের সামনে আয়নাল হাওলাদারের নেতৃত্বে মামুন, কালু, সানু, রুবেল, ইব্রাহিম, ফারুক ও সোহাগের নেতৃত্বে ৮/১০ যুবক এ নির্যাতন চালায়।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মহিপুর ইউনিয়নের নজিবপুর গ্রামে মঙ্গলবার দুপুরে মহীপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে এ ঘটনা ঘটেছে। এ সময় রুবেলের মা-বাবা ছেলেকে উদ্ধারের জন্য নির্যাতনকারীদের হাত-পা ধরলেও তাদের তাদের ছেলের কাছে যেতে দেয়নি।

এমনকি সংজ্ঞাহীন অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকলেও তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যেতে দেয়নি। পরবর্তীতে স্থানীয় গ্রামবাসী ও সংবাদকর্মীদের সহযোগীতায় সন্ধায় তাকে কলাপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর আগে সোমবার রাতেও বাসা থেকে ডেকে নিয়ে রুবেলকে মারধর করে উপরোক্তরা।

এ ঘটনায় বুধবার কলাপাড়া থানায় রাসেলের পিতা নুরুল ইসলাম ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ নির্যাতনের মুলহোতা আয়নাল হাওলাদার, কালু, রুবেল, মামুন ও ফারুককে মহিপুর থেকে গ্রেফতার করেছে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাসেলের পিতা নুরুল ইসলাম জানান, কয়েকদিন আগে মোটরসাইকেল চালক আয়নালের বাসা থেকে আড়াই হাজার টাকা ও দুটি রুপার আংটি চুরি হয়। নজিবপুর গ্রামে পাশাপাশি বাসা হওয়ায় এ চুরির জন্য রাসেলকে সন্দেহ করে আয়নাল। গত সোমবার রাতে রুবেল কে তার বাসা থেকে ডেকে নিয়ে প্রায় আধা কিলেমিটার দূরে নিয়ে টাকা ও আংটি দাবি করে আয়নাল। রাসেল এ চুরি করেনি জানালে রাস্তায় ফেলে তাকে বেধড়ক মারধর করে। গভীর রাতে রাস্তার মারধরের শব্দ শুনে একই এলাকার মোটরসাইকেল চালক দেলোয়ার, সোনামিয়া, জাকির বয়াতী, খলিল মিয়া রাস্তায় এসে তাকে মারধরের হাত থেকে রক্ষা করে।

তিনি বলেন, পরেরদিন মঙ্গলবার সকালে আবার আয়নাল ও তার সহযোগীরা আবার ঘরে এসে চুরি যাওয়া টাকা ও আংটির খোঁজে ঘরের মালামাল তছনছ করে। এ সময় রাসেলের মা সুফিয়া খাতুন বাঁধা দিলে তাকেও অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে রাসেল কে ধরে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে রাসেলকে রাস্তায় নিয়ে বেধড়ক মারধর করে।

এ সময় গ্রামবাসীরা উপস্থিত থাকলেও তাকে উদ্ধারে কেউ এগিয়ে আসেনি। মারধরের একপর্যায়ে রাসেল জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে ভ্যানের সাথে বেঁধে টেনে নিয়ে যায়।

রাসেলের মা সুফিয়া খাতুন বলেন, সন্ত্রাসীদের হাত-পা ধরলেও ছেলেকে মারধরের হাত থেকে রক্ষা করতে পারি নাই। কতো মানুষ দ্যাখছে , কিন্তু কেউ বাঁচায় নায়। আমার পোলায় চুরি করে নায়, কিন্তু খালি খালি তারে এইরহম মারছে।

কলাপাড়া হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মাহবুবুর রহমান জানান, রাসেলের শরীরের পা,হাত ও মাথায় ইন্টারনাল আঘাত লেগেছে। তবে সে এখন আশংকামুক্ত।
মহীপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই মো. মনির জানান, তারা সন্ধায় এ ঘটনা জানতে পেরেছেন এবং রাতে অভিযান চালিয়ে ওই পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছেন।

কলাপাড়া থানার ওসি (তদন্ত) মো. মনিরুজ্জামান জানান, কিশোর রাসেলকে নির্যাতনের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে।

(এমকেআর/এএস/নভেম্বর ১২, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test