E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সুন্দরবনে ১০ দিনের রেড এলার্ড জারি

২০১৫ নভেম্বর ২১ ১৮:৪৩:২৩
সুন্দরবনে ১০ দিনের রেড এলার্ড জারি

বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের দুবলারচরের আলোরকোলে এবার তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব ‘তিথীর’ কারণে একদিন পিছিয়ে শুরু হবে মঙ্গলবার থেকে।

বৃহস্পতিবার আলোরকোলে সমুদ্রের প্রথম জোয়ারের পানিতে হাজার-হাজার সনাতন হিন্দু নর-নারীরা তাদের পাপ মোচনের প্রত্যাশায় পূণ্যস্নানে অংশ নেবেন। ৬ শত বছরের অধিককাল ধরে দরবেশ গাজী-কালুর পূণ্যভূমি সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোরকোলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পূণ্যস্নান প্রতি বছর হয়ে আসছে।

সুন্দরবন বিভাগের হিসাব মতে এবছর হবে ১৩২তম রাস উৎসব। রাস উৎসব উপলক্ষে শনিবার থেকে গোটা সুন্দরবনে ১০ দিনের রেড এলার্ড জারি করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে সুন্দরবন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের ছুটি। শরিবার দুপুরে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) তার কার্যালয়ে প্রেসবিফিংএ এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) সাইদুল ইসলাম সাংবাদিকদের আরো জানান, তিথী নক্ষত্রের কারণে এ বছর তিন দিনের রাস উৎসব একদিন পিছিয়ে মঙ্গলবার শুরু হবে।

বৃহস্পতিবার দুবলার আলোরকোলে দিনের প্রথম জোয়ারে পূণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে তিনদিনের এই রাস উৎসব। মঙ্গলবার প্রথম ভাটার সময়ে নিদৃষ্টি ৮টি নৌ রুট দিয়ে লঞ্চ, নৌকা ও ট্রলার যোগে পূণার্থী ও দর্শনার্থী আলোরকোলের উদ্দেশে যাত্রা করবে। তাদেরকে সুন্দরবন বিভাগের নির্ধারণ করে দেয়া ১৩টি বন অফিস থেকে জন প্রতি ৫০ টাকা রাজস্ব প্রদান করে রাস মেলায় যেতে অনুমতিপত্র নিতে হবে।

পূণার্থী ও দর্শনার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তাসহ হরিণ শিকার রোধে বনরক্ষীদের ২০টি ভ্রম্যমাণ টিমসহ এবার র‌্যাব, কোষ্টগার্ড, নৌবাহিনী ও পুলিশের নিয়মিত টহল জোরদার করা হয়েছে। থাকবে তিন জন ডাক্তারসহ ১০ সদস্যের মেডিকেল টিম। এছাড়া দর্শনার্থীর অগ্নেয়াস্ত্র-বিস্ফোরক দ্রব্য সাথে নেয়া, রান্নার কাঠ আহরণ ও হাঁস- মুরগীর মাংস ছাড়া সব ধরনের মাংস নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

রাস মেলায় কোন ভাবেই যেন হরিণ শিকার, ও বনজ সম্পদের ক্ষতি না হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় সব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সুন্দরবন বিভাগের জারি করা এসব নিষেদ্ধাজ্ঞা অমান্যকারীদের জেলা প্রশাসনের একাধিক ভ্রম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা নিশ্চিত করা হবে তিনি জানান।

সুন্দরবনের আলোরকোলে প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন ধর্মের প্রায় অর্ধ লাখ মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের কয়েক হাজার ইকো ট্যুরিষ্ট (প্রতিবেশ পর্যটক) ঐতিহ্যবাহী এই রাস উৎসবে যোগ দিয়ে থাকেন। এ উপলক্ষে আলোরকোলে বসে দিনব্যাপী মেলা। এই উৎসবকে সামনে রেখে দর্শনার্থীর ছদ্মবেশে চোরা শিকারীর দল সুন্দরবনের হরিণ শিকারে মেতে ওঠে।

রাস উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি মেজর (অব:) জিয়া উদ্দিন জানান, বঙ্গোপসাগর উপকূলে সুন্দরবনের দুবলারচরের আলোরকোলে মঙ্গলবার থেকে ১৩২তম শুরু হবে রাস উৎসব।

সুন্দরবন বিভাগের হিসেবে এতথ্যটি পাওয়া গেলেও ঐতিহাসিকদের মতে, ১৪০০ খ্রিস্টাব্দের পূর্ব থেকেই সুন্দরবনে রাস উৎসব হয়ে আসছে। প্রতি বছর বাংলা কার্ত্তিক মাসের শেষে বা অগ্রহায়ণের প্রথম দিকের রাস পূর্ণিমার তিথিতে এই রাস উৎসব উদযাপিত হয়ে থাকে। হিন্দু ধর্মালম্বীরা রাস পূর্ণিমার পর দিন প্রথম জোয়ারে বঙ্গোপসাগরের লোনা পানিতে পূণ্যস্নান করে তাদের পাপ মোচন হবে, এমন বিশ্বাস নিয়ে রাস উৎসবে যোগ দিয়ে থাকে। কালের বির্বত্তণে জেলে ও বনজীবীসহ অন্যান্য ধর্মলম্বীরাও সুন্দরবনের দরবেশ গাজী-কালুর স্মরণের মানত দিতে এই উৎসবে যোগ দিয়ে থাকেন। হাজার-হাজার মানুসের পদচারণায় এই রাস উৎসব মেলায় পরিণত হয়। রাস উৎসবে তীর্থ যাত্রী, ইকোটুরিস্ট ও দর্শনার্থীদের ট্যুরিষ্ট লঞ্চ, ট্রলার ও নৌকা যোগে এসে থাকে। আসে অসংখ্য বিদেশী পর্যটকও। এই রাস উৎসবের সময় তিনদিনব্যাপী মেলায় কুটির শিল্পের বিভিন্ন পন্যের পসরা সাজিয়ে বসে ব্যবসায়ী। এ ছাড়া, নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আযোজন করা হয় থাকে।

বেসরকারি একাধিক ট্যুর অপারেটর কোম্পানী সূত্রে জানা গেছে, এবার রাস উৎসবকে সামনে রেখে অক্টোবর মাসের শুরুতে তারা আর্কষণীয় প্যাকেজ ঘোষণা করে। ইতোমধ্যে অনেক তীর্থ যাত্রী, ইকোটুরিস্ট ও দর্শনার্থীরা ট্যুরিষ্ট লঞ্চ ও ইঞ্চিন চালিত বোট বুকিং নেয়ার কাজ প্রায় শেষ করেছেন। দেশী-বিদেশী হাজার-হাজার তীর্থ যাত্রী, ইকোটুরিস্ট ও দর্শনার্থীদের সামাল দিতে তাদের হিমসিম খেতে হচ্ছে। অনেকে আবার সুবিধা মত বুকিং না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন।

(একে/এএস/নভেম্বর ২১, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test