E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দেশীয় মাছের ভান্ডার ‘বাড়িভাঙা খাল’ খনন ও সংস্কারের দাবি

২০১৫ নভেম্বর ২৪ ১৪:৫১:৩৩
দেশীয় মাছের ভান্ডার ‘বাড়িভাঙা খাল’ খনন ও সংস্কারের দাবি

লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধি : নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার নোয়াগ্রাম ইউনিয়নে দেশি প্রজাতির ‘মাছের ভান্ডার’ হিসেবে পরিচিত বাড়িভাঙা খাল। এ খালে সারা বছর পাওয়া যায় দেশী প্রজাতির বিভিন্ন মাছ।

এ সব মাছ শিকার করে স্থানীয় এলাকাবাসীর চাহিদা যেমন পূরণ হয়, তেমনি মাছ বিক্রয় করে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। কিন্তু প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এ খালের ডিমওয়ালা মাছ নিধন বন্ধ ও খালটি খনন এবং সংস্কার করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।

অভিযোগ রয়েছে, এলাকার একটি চিহিৃত স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধনে বর্ষা মৌসুমে খালের ওপর আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে ডিমওয়ালা মাছ শিকার করা হয়। এ নিয়ে এলাকায় দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

এলাকার মানুষজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় তিন কিলোমিটার দৈর্ঘের এ খালটি নবগঙ্গা নদীর সঙ্গে জেলার সর্ববৃহৎ ইছামতি বিলের সংযোগ সৃষ্টি করেছে। খালটি বাড়িভাঙা গ্রাম এলাকায় নবগঙ্গা নদীর সঙ্গে সংযোগস্থল। এখান থেকে খালটি ব্রাক্ষ্মণডাঙ্গা ও চর ব্রাক্ষ্মণডাঙ্গার ভেতর দিয়ে বড়কুড়ি ও কানাবিলের মাঠ হয়ে গাছবাড়িয়ায় ইছামতি বিলের সঙ্গে মিশেছে।

স্থানীয় এলাকাবাসী ও মৎস্যজীবীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ খালে সারা বছর বাইন, পুঁটি, টেংরা, খয়রা, রয়না, পাবদা, টেপা, টাকি ও শোল-গজাল মাছসহ দেশি প্রজাতির বিভিন্ন মাছ পাওয়া যায়। মাঝে-মধ্যে খালে ‘গোন’ (একটানা দুতিন দিন পর্যাপ্ত পরিমান মাছ ধরা পড়ে) পড়ে।

খবর রটে যায় মাছের ‘গোন’ পড়েছে। তখন আশপাশের নারী, পুরুষ ও শিশুরাও জড়ো হয়ে এখানে মাছ শিকার করে থাকে। চালন, ডালা, হাংকুরা, খেপলা জাল, টানা জাল, আরিন্দা, ঘুনি, দোয়াড়, বঁড়শি, উছা ও ভেসালসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে মাছ শিকারের উৎসবে মেতে উঠেন স্থানীয় মানুষেরা। এ যেন মাছ শিকারের মহাউৎসব !

মঙ্গলবার বাড়িভাঙ্গা খালে গিয়ে দেখা গেছে, জেলেরা যেমন মাছ শিকার করছেন, পাশাপশি স্থানীয় লোকজন নিজেদের খাওয়ার জন্যেও মাছ শিকার করছেন। ব্রাক্ষ্মণডাঙ্গা গ্রামের সোহাগ শেখ (২০) ও দেলোয়ার শেখ (৬০) খেপলা জাল দিয়ে মাছ ধরছেন। তাঁরা জানালেন, নিজেদের খাওয়ার জন্য এ মাছ শিকার করছেন। অল্প সময়েই অনেক মাছ শিকার করতে পারবেন বলে তারা জানান।

মৎস্যজীবী কলাগাছি গ্রামের শ্যামল সরকার ও কাঞ্চনপুর গ্রামের চিত্তরঞ্জন শিকদার জানান, ‘গোন’র সময় একবার খেপলা জাল ফেলে দুই-তিন কেজি এবং সুতিজাল ফেলে আট-নয় ঝাঁকা মাছ পাওয়া যায়। বছরের অন্য সময়েও ৪০-৫০টি জেলে পরিবারের সংসার চলে এ খালের মাছ শিকার করে।

খালপাড়ের বাসিন্দা ব্রাক্ষ্মণডাঙ্গা গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি গোলাম কুদ্দুস বলেন, ‘এক সময় এ খালে প্রচুর পরিমাণ দেশি প্রজাতির কই, সিং, মাগুরসহ বড় বড় রুই, কাতলা, আইড় ও বোয়াল মাছ পাওয়া যেত। এখন তা নেই, তবে অন্য দেশি প্রজাতির মাছ আছে।’

স্থানীয় এলাকাবাসী আরও জানান, জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে নবগঙ্গা নদী থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ডিমওয়ালা মাছ এ খাল দিয়ে ইছামতি বিলে প্রবেশ করে। আর আশ্বিন-কার্তিক মাসে বিলের পানি শুকাতে শুরু করলে বিল থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ নবগঙ্গা নদীতে নেমে আসে। অভিযোগ রয়েছে, এলাকার একটি চিহিৃত স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধনে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে ডিমওয়ালা মাছ শিকার করে থাকে। এলাকাবাসী জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে ডিমওয়ালা মাছ শিকার বন্ধ ও খাল খনন এবং সংস্কার করার দাবি জানান।

নোয়াগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফয়জুল হক বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে ডিমওয়ালা মাছ ধরা ও সুতিজাল ব্যবহার বন্ধ এবং খালটি খননসহ সঠিক ব্যবস্থাপনা করলে নড়াইল জেলাসহ আশপাশের জেলার মাছের চাহিদাও মেটানো সম্ভব হতো।’

উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান জানান, ‘বাড়িভাঙ্গা খালের ডিমওয়ালা মাছ শিকার বন্ধে মৎস্য বিভাগ সচেতনা সৃষ্টিতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। খাল খনন ও সংস্কারের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে।’

(আরএম/এএস/নভেম্বর ২৪, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test