E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কলাপাড়ার কচ্ছপখালী কমিউনিটি ক্লিনিক পাঁচ মাস ধরে বন্ধ

২০১৫ নভেম্বর ২৬ ১৮:৫৮:০১
কলাপাড়ার কচ্ছপখালী কমিউনিটি ক্লিনিক পাঁচ মাস ধরে বন্ধ

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) থেকে মিলন কর্মকার রাজু : দড়জা জানালা নেই, ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তারা খঁসে পড়ে স্তুপ হয়ে আছে। ভবনের অভ্যন্তরে মলমুত্রসহ বিড়ি,সিগারেটের খোসা। ঔষধের কার্টুন গুলো খোলা ও এলোমেলো অবস্থায় মেঝেতে পড়ে আছে।

এ চিত্র পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কচ্ছপখালী কমিউনিটি ক্লিনিকের। গত পাঁচ মাস ধরে এ ক্লিনিকে সব ধরনের চিকিৎসা সেবা বন্ধ থাকলেও উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কিছুই জানেন না। এ কারনে প্রায় ৩০ সহস্রাধিক মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

জানাযায়, এই ক্লিনিকে দায়িত্বরত সিএইচসিপি মাহমুদা ইয়াসমিন গত ২২ জুন থেকে ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছেন। স্বাস্থ্য সহকারী মো. আলী হোসেন এক বছরেরও বেশি সময় আগে অন্যত্র বদলী হয়ে চলে গেছেন। পরিবার কল্যান সহকারি হাবিবা আক্তারের সপ্তাহে তিনদিন ডিউটি থাকলেও তিনিও ক্লিনিকে আসেন না এ অভিযোগ এলাকাবাসীর।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গত জুন মাসের পর এলাকার কেউই এই ক্লিনিকে স্বাস্থ্য সেবা পায়নি। অথচ প্রতিদিন এখানে ২৫/৩০ জন গর্ভবতী মা ও শিশু চিকিৎসা সহায়তা পেতো। ক্লিনিক বন্ধ থাকায় ২০১৪ সালের ৩০ অক্টোবরের পর গত ১৩ মাসে কমিউনিটি ক্লিনিকে কোন ঔষধ ও বরাদ্ধ করেনি উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কমিউনিটি ক্লিনিকের সামনে তিন/চার জন মা অপেক্ষা করছেন ডাক্তারের জন্য। এদেরই একজন সুফিয়া বেগম বলেন, “চাইর দিন ধইর‌্যা আই। কিন্তু এইহানে কেউরেই দেহি না”। ছয় মাসের অন্তঃসত্বা এই গৃহবধু বলেন, দেড় মাইল হাইট্রা আইছি। রোজই হুনি আইজ এইডা (কমিউনিটি ক্লিনিক) খুলবে। কিন্তু রোজ আইয়া ফিইর‌্যা যাই। এইডা যদি নাই খোলে তয় মোগে এইহানে আইতে কয় কা স্বাস্থ্য আপারা।

কচ্ছপখালী গ্রামের বাসিন্দা আবুল বসার জানান, এই ভবন শ্যাষ কবে খোলছে হেইডা মনে নাই। তবে মাঝে মাঝে একজন টিকা দেতে আয়। কিন্তু দরজা খোলে না। তিনি জানান, ভবনের যে অবস্থা তাতে যেকোন মূহুর্তে ধসে পড়তে পারে। আর ভবনের মধ্যের যে অবস্থা তাতে কোন কোন সুস্থ্য মানুষ আসলেও অসুস্থ্য হয়ে পড়বে।

নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রতি মাসে একজন ডাক্তার ক্লিনিকে বসে রোগী দেখার নিয়ম থাকলেও এখানে গত পাঁচ মাসে একজন ডাক্তারও আসেনি। এ কারনে বাধ্য হয়ে হাজার হাজার রোগীকে তুলাতলী ২০ শয্যা হাসপাতাল ও কলাপাড়া উপজেলা ৫০ শয্যা হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। গ্রামীন মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় প্রত্যন্ত এলাকায় এই কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মান করা হলেও স্বাস্থ্য বিভাগের উদাসীনতায় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপকূলীয় মানুষ।

সিএইচসিপি মাহমুদা ইয়াসমিন জানান, আগামী ২২ ডিসেম্বর তার ছুটি শেষ হওয়ার পর তিনি আবার কাজে যোগদান করবেন। তবে এতোদিন ক্লিনিক বন্ধ ছিলো তা জানেন না।

পরিবার কল্যান সহকারি হাবিবা আক্তার বলেন, তিনি টিকা দেওয়ার সময় ক্লিনিকে যান। তবে ঔষধ না থাকায় এবং সিএইচসিপি ছুটিতে থাকায় ক্লিনিক খোলা হয় না। তাছাড়া ভবনের অবস্থা খুব খারাপ তাই একা বসতে ওই খানে ভয় করে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সিএইচসিপি মাহমুদা ইয়াসমিন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকলেও তার স্থানে আরেকজনকে দায়িত্ব দেয়া উচিত ছিলো। তাহলে এই পাঁচ মাস এলাকাবাসী চিকিৎসা সহায়তা ও বিনামূল্যে ঔষধ পেতো। এভাবে ক্লিনিক বন্ধ করে রাখা ঠিক হয়নি।

ক্লিনিক সংলগ্ন কচ্ছপখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা জানান, এই জায়গায় এখন আর মানুষ আসে না। ভাঙ্গা জানালা দিয়ে ঢুকে বড় ছেলেরা মধ্যে বসে সিগারেট খায়, পায়খানাসহ আরও অনেক কিছু করে। আর ক্লিনিকটি সব সময়ই বন্ধ থাকে।

কলাপাড়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. শাহ আলম হাওলাদার বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক তদারকি করেন স্বাস্থ্য বিভাগ। তাদের একজন পরিবার কল্যান সহকারি ওই ক্লিনিকে কাজ করেন সপ্তাহে তিন দিন। তবে তিনি কেন ক্লিনিকে বসেন না বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।

উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক ডা. লোকমান হাকিম জানান, ওই কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি ছুটিতে আছেন। তবে পাঁচ মাস ক্লিনিকটি বন্ধ তা তিনি জানেন না। প্রতিমাসে কমিউনিটি ক্লিনিক ভিজিট ও একজন ডাক্তারের ওই ক্লিনিকে যাওয়ার নিয়ম থাকলেও কেন যাচ্ছেন না জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি ছয় মাস আগে এসেছি এ কারনে তা নলেজে এ বিষয়টি নেই। তবে সিএইচসিপি সংকট থাকায় ওই খানে অন্যকাউকে দায়িত্ব দিতে না পারায় ক্লিনিকটি বন্ধ থাকতে পারে।

(এমকেআর/এএস/নভেম্বর ২৬, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test