E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

 বাগেরহাট পৌরসভায় নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা

২০১৫ ডিসেম্বর ০১ ১২:১৪:০৬
 বাগেরহাট পৌরসভায় নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা

বাগেরহাট প্রতিনিধি : নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত তফশীল অনুযায়ী ৩০ ডিসেম্বর বাগেরহাট পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কী না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সম্প্রসারিত পৌর এলাকার চুড়ান্ত গেজেট প্রকাশ না হওয়ায় এবং ওই এলাকার ভোটাররা পৌরসভার ভোটার তালিকা থেকে বাদ পাড়ায় এ সংশয় ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। খোদ জেলা নির্বাচন অফিসও এই সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ বের করতে পারে নি। এ অবস্থায় বাগেরহাট পৌরসভার নির্বাচন নিয়ে করণীয় জানতে চেয়ে ইসি সচিবকে চিঠি পাঠিয়েছে জেলা অফিস। বুধবার পাঠানো ওই চিঠির জবাব এখনও পায়নি জেলা নির্বাচন অফিস।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে বিলম্বের কারণে বাগেরহাট পৌরসভার সম্প্রসারিত এলাকার সীমানা চিহ্নিতকরণ ও ভোটার তালিকা হালনাগাদীকরণ বিলম্বিত হয়ে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বাগেরহাট পৌরসভা ও বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৮ অক্টোবর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের গোবরদিয়া মৌজার ৬৫৬টি দাগের জমি বাগেরহাট পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করে। ঐ বছরের ৩০ নভেম্বর তৎকালীন জেলা প্রশাসক মু. শুকুর আলী আনুষ্ঠানিকভাবে শহরের সাহাপাড়া এলাকায় ‘খানজাহান পল্লী হিসাবে’ সম্প্রসারিত পৌরসভার ফলক উন্মোচন করেন।


এর প্রেক্ষিতে ভোটার অনুপাতে নতুন করে বাগেহরাট পৌরসভার সিমানা নির্ধারণ প্রসঙ্গ সামনে আসে। ২০১৪ সালের ৭ জানুয়ারী স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. খলিলুর রহমান স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন ২০০৯ এর ১৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসককে সীমানা নির্ধারণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়ে চিঠি দেন। চিঠিতে জেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে সহকারী সীমানা নির্ধারণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং নতুন করে সিমানা নির্ধারণের কথা বলা হয়। কিন্তু এর পর প্রায় দুই বছর পার হলেও এ বিষয়ে তারা আর কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

জেলা নির্বাচন অফিসের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, চলতি ২৯ অক্টোবর জনৈক ডাবলু হাওলাদার (কাড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ভোটার নং ৬০০) জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে একটি আইনগত বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে ৭ দিনের মধ্যে বাগেরহাট পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত গোবরদিয়া এলাকার ভোটারদের পৌরসভার ভোটার তালিকাভুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান। কিন্তু স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে সীমানা নির্ধারণ কাজ শেষ না করতে পারায় জেলা নির্বাচন অফিসের পক্ষে কোন পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়নি। ২৮ অক্টোবর বাগেরহাট পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের জনৈক সরদার মাসুদুর রহমান জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবরে একটি চিঠি দেন। ওই চিঠিতে তিনি আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে ‘মেয়র‘ পদে নির্বাচন করতে আগ্রহী উল্লেখ করে বাগেরহাট পৌরসভার সম্প্রসারিত এলাকা বর্তমানে কোন ওয়ার্ডের আওতায় এবং সেখানকার ভোটাররা পৌরসভার ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন কি না তা জানতে চান। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বিষয়টি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন উল্লেখ করে আবেদনটি জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার শাখায় পাঠান। মূলত এর পর বাগেরহাট পৌরসভার সম্প্রসারিত এলাকার সীমানা নির্ধারণ বিষয়টি নতুন গতি পায় বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। এদিকে পৌরসভার সম্প্রসারিত গোবরদিয়া এলাকায় ভোটারদের মাঝেও আসন্ন নির্বাচনে ভোট দিতে পারা, না পারা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। পৌর নির্বাচনে তাদের ভোটার তালিকাভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

খানজাহান পল্লী হিসাবে পৌরসভায় অন্তরভূক্ত এলাকার বাসিন্দা বাগেরহাট কাঁচা বাজারের ব্যাবসায়ী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই এলাকায় আড়াই থেকে তিন হাজার ভোটটার। তাগো ভোটের কি তাহলি দাম নেই। ভোট দিতি না পররি আমরা তো বঞ্চিত হবো। আমরা তালি কোথায় যাব ? পৌরসভাও যাতি পারবো না ইউনিয়নেও না।’

বাগেরহাটের স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সীমানা নির্ধারণ কর্মকর্তা ও বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক সম্প্রসারিত এলাকাকে পৌরসভার ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত করে গত ২৩ নভেম্বর গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন। বিধি অনুযায়ী পরবর্তি পনেরো দিনের ভেতর সংক্ষুব্ধরা এই বিষয়ে আপত্তি দাখিল করতে পারবেন। এখন আর সম্প্রসারিত এলাকার ভোটারদের পৌর এলাকার ভোটার তালিকাভুক্ত করতে বাধা আছে বলে আমার মনে হয় না।’

তবে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন মল্লিক জানান, ‘সীমানা নির্ধারণ প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় পৌর নির্বাচনের তফশীল ঘোষণার আগে সম্প্রসারিত এলাকার ভোটারদের পৌর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি। এখন সীমানা নির্ধারণ করে গণ বিজ্ঞপ্তি জারি হলেও মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। ফলে আমরা নির্বাচন কমিশনের তফশীল অনুযায়ী পুরানো সীমানায় নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

নির্দেশনা চেয়ে ইসিতে চিঠি পাঠানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘উদ্ভুত পরিস্থিতি সম্পর্কে আমি বিভিন্ন সময়ে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করেছি। গত বুধবারও (২৫ নবেম্বর) একটি চিঠি দিয়েছি। নির্বাচন কমিশন বা আদালত থেকে নতুন কোন নির্দেশনা না পেলে আমরা যথা সময়ে পুরানো সীমানা অনুযায়ী নির্বাচন সম্পন্ন করবো।’

(এসএকে/এইচআর/ডিসেম্বর ০১, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test