E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বড়দিন, কিন্তু টুম্পার মুখে হাসি নেই...

২০১৫ ডিসেম্বর ২৪ ১৯:২২:৩৯
বড়দিন, কিন্তু টুম্পার মুখে হাসি নেই...

কলাপাড়া(পটুয়াখালী) প্রতিনিধি :শুক্রবার বড়দিনের উৎসব। পাড়ার অন্যসব ঘরের উৎসবের আয়োজন চললেও রুবেন বিশ্বাসের (৬৫) ঘরে নেই কোন আয়োজন। এই পরিবারের একমাত্র মেয়ে টুম্পা’র কেনা হয়নি নতুন পোষাক। পাড়ার তার বয়সী শিশুরা নতুন পোষাক, নানা ধরনের খেলনা নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়ালেও ঘরের এক কোনে ছলছল চোখে সে বসে আছে। ঘরে চাল নেই,তাই দুইদিন আগে পাশের ঘর থেকে তিন কেজি চাল ধার এনেছিলেন টুম্পার মা। তাও শেষ হয়ে গেছে। বড়দিনের উৎসবে ঘরে অতিথি আসলে কিভাবে আপ্যায়ন করবেন তা নিয়ে এখন চিন্তিত তিনি।

বুধবার দিনভর পটুয়াখালীর কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের সদরপুর খ্রিষ্টান পল্লী গিয়ে জানা যায় এই পরিবারের বর্তমান করুন অবস্থার বাস্তব চিত্র।

সদরপুর চার্চের পাশেই বাড়ি রুবেন বিশ্বাসের। ভেঙ্গে পড়া ঘরের বেড়া অসুস্থ্য শরীর নিয়ে ঠিক করতে ব্যস্ত তিনি। পাঁচ বছর আগে ত্রান হিসেবে ঘরটি পেয়েছিলেন। উৎসবে ঘরে কোন আয়োজন না থাকলেও বাড়ির আঙিনা গোবড় দিয়ে লেপন করে পরিস্কার করছেন তার স্ত্রী রোজী বিশ্বাস। ঘরের বাড়ান্দায় বসে কথা হয় এ দম্পত্তির সাথে। রুবেন বিশ্বাস বলেন, চাইর (চার) বছর ধইর‌্যা অসুস্থ্য। মাসে ২-৩ হাজার টাকার ওষুধ কেনতে হয়। আমার একটা কিডনী নষ্ট হয়ে গেছে। পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত যা সম্পদ ছিলো তার বেশির ভাগ বিক্রি করে চিকিৎসা খরচ জোগাড় করেছেন। এই চাইর বছরে কোন অনুষ্ঠান হয়নি বাসায়। খাওন জোগাড় হয়না,উৎসব করমু ক্যামনে। একটা মাইয়া। হ্যারেও কিছু দিতে পারি নাই।

রুবেন বিশ্বাস বলেন, অসুস্থ্য হলেও ছোট্র মাইয়া আর বউয়ের মুহের দিক চাইয়া বর্ষা ও গরমের কয়দিন কোলা, বিলে, খালে ঝাহি জাল দিয়া কয়ডা মাছ ধরতাম। কিন্তু শীতকালে সব শুকাইয়া গ্যাছে। তাই মাছ ধরা বন্ধ।

এ দম্পত্তির সদা হাস্যোজ্জ্বল কিশোরী মেয়ে ঐশর্য টুম্পা (১৪)। লেখাপড়া করলে এবার জেএসসি পরীক্ষা দিতো। কিন্তু আর্থিক সংকটে তিন বছর আগে তার লেখাপড়া শেষ। ২০১২ সালে পিএসসি পরীক্ষা দিয়ে এক বিষয়ে ফেল করার পর আর্থিক সংকটে আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। এক বছর আগে বাকেরগঞ্জ কারিতাস ট্রেড স্কুল থেকে ছয় মাসের প্রশিক্ষন নিয়েছিলো দর্জির কাজের। কিন্তু সেলাই মেশিনের অভাবে আর কাজ করা হয়নি।

টুম্পার মা রোজী বিশ্বাস বলেন,এইবার জমি চাষ কইর‌্যা ১২ মন ধান পাইছি। আর বছরে মোগো লাগে ১২ মন চাউল। আয়ের কেউ নাই। আমরা উৎসব করমু ক্যামনে। চার্চের লগে বাড়ি তাই পরিস্কার করছি।
টুম্পা জানায়, তার লেখাপড়া করার ইচ্ছা। কিন্তু স্কুলে পড়তে অনেক টাকা লাগে। আমার বাবাতো অসুস্থ্য গরীব। আমরা এ্যাতো টাহা কোথায় পামু। বড়দিনে জামা পেয়েছো কিনা জানতে চাইলে মাথা নিচু করে থাকে। তার এই নিরবতায় উপস্থিত সকলের চোখে জল চলে আসে।

সদরপুর ক্যাথলিক চার্চের সিস্টার হানিমা (এলএসসি) জানান, এই পরিবারকে একমাত্র প্রভুই রক্ষা করতে পারেন। কারন যে পরিবারে কোন উপার্জনক্ষম ব্যক্তি নেই তাদের সংসার চালানো খুবই কষ্টকর।
সদরপুর গ্রামের যুবক রাফায়েল মানিক বিশ্বাস জানান, এই পরিবারের মতো গ্রামে আরও বহু গরীব পরিবার আছে। তারা চেষ্টা করছেন এই পরিবারগুলোর মুখে বড়দিনের উৎসবের হাসি ফোটাতে।
চার্চের সহকারি ফাদার বিপুল ডেভিড দাস জানান, সদরপুরে এখনও বহু পরিবার দরিদ্র। তারা কোন সহযোগীতা পাচ্ছেন না। আর আমরা এতোটাই অসহায় একটি মেয়ের রুখেও হাসি ফোটাতে পারছি না।




(এমকেআর/এস/ডিসেম্বর২৪,২০১৫)




পাঠকের মতামত:

১৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test