E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাগেরহাটে গৃহবধূকে নির্যাতন, মামলা নেয়নি থানা পুলিশ   

২০১৫ ডিসেম্বর ২৫ ১৮:২৭:৪২
বাগেরহাটে গৃহবধূকে নির্যাতন, মামলা নেয়নি থানা পুলিশ   

বাগেরহাট প্রতিনিধি : ওরা আমার চার মাসের মেয়ে রাফিয়াকে মেরে ফেলেছে। এবার আমাকেই মেরে ফেলবে। আমাকে বাঁচতে দেন” বলে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ শারমীন আক্তার।

এরপর স্বজনদের অনুরোধে শরীরের নির্যাতনে ক্ষত চিহ্ন দেখান। রীতিমত শিউরে ওঠেন উপস্থিত সংবাদর্মীরা। জোর করে ঔষধ খাইয়ে তাকে মানসিক প্রতিবন্ধি করার চেষ্টাও করা হয়েছে বলে দাবি করেন তার পরিবার। দুপুরে বাগেরহাট সদর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের চিন্তিরখোল গ্রামের দিনমজুর আজিম উদ্দিন ফকিরের মেয়ে শারমীন আক্তার (২৫) এ সাংবাদিকের উপস্থিতিতে তার স্বামীর পরিবারের নির্মম নির্যাতনের বর্ননা দেন।

শারমীন আক্তার অভিযোগ করে বলেন, ২০০৭ সালে পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের মৃত আক্কেল আলী হাওলাদারের ছেলে আইউব আলী হাওলাদারের সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই স্বামী আইউব বিভিন্ন সময় যৌতুকের দাবী করে আসছিল। সে পিতার বাড়ি থেকে সাধ্য অনুযায়ী যৌতুক নিয়েও স্বামীকে দিয়ে খুশি করেছে। এমনকি পিতার বাড়ি থেকে নেয়া সেলাই মেশিনটিও বিক্রি করে স্বামীকে দিয়েছে। কিন্তু যৌতুকের দাবিতে এই আট বছরে অনেক নির্যাতেন সহ্য করেছে সে।

সংসারে ৩টি সন্তানের জন্ম হয়। এর মধ্যে দুটি সন্তান এখন জীবিত আছে। রাফিয়া নামের চার মাসের কন্যা সন্তানকে তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গত ১০ ডিসেম্বর তার স্বামী সাথে ঝগড়া হয়। এঘটনার জের ধরে প্রথমে তাকে নেশা জাতীয় ঔষধ সেবন করায়। এরপর তার চার মাসের সন্তান রাফিয়াকে তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় তার স্বামী আইউব আলী হাওলাদার, তার মেঝভাই ইউছুফ আলী হাওলাদার, বড়ভাইয়ে স্ত্রী সেতারা বেগমসহ কয়েকজন। এরপর কখনও গাছে বেঁধে, কখনও ঘরের খুটির সাথে বেঁধে, কখনও ঘরের আড়ায় ঝুলিয়ে বেদম মারপিট করে তাকে আটকে রাখা হয়। পরের দিন সকালে আবারো তাকে জোর করে ঔষধ খাওয়ানোর চেষ্টা করে।

এক পর্যায়ে সে বাগেরহাট এসে পিতার বাড়ির লোকদের সহায়তা বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। বর্ণনার এক পর্যায় শারমীন জোরে জোরে চিৎকার দিয়ে বলতে থাকেন, সে ওদের হাত থেকে বেঁচে আসলেও তার ছোট মেয়েকে মেরে কবর দিয়ে রাখা হয়েছে। তার কোন বিচার হয়নি।

একপর্যায়ে কাঁপতে থকে সে। নেশা জাতীয় ঔষধ খাওয়ানোর কারণে তার এমন হয়েছে বলে সে জানান। এদিকে ঘটনাস্থল নাজিরপুরে হওয়ায় প্রভাবশালী তার স্বামীর পরিবারের বিরুদ্ধে থানায় মামলাও করতে পারেনি।

নির্যাতনের শিকার গৃহবধুর ভাই শাহেদ আলী জানান, তিনি নাজিরপুর থানায় মামলা করতে গেলে ওসি ওই এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বরকে মোবাইল করে থানায় এনে তাদের গ্রামে গিয়ে মিটিয়ে ফেলার জন্য বলে। এবিষয়ে নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ শারমীন আক্তারের স্বামী আইউব আলী হাওলাদারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

পিরোজপুরের নাজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন জানান, থানায় কেউ অভিযোগ করতে আসেনি।

(একে/এএস/ডিসম্বের ২৫, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test