E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

না চলে নাও, না চলে পাও

২০১৬ জানুয়ারি ১৩ ১২:২১:৩৩
না চলে নাও, না চলে পাও

মোজাম্মেল হোসেন মুন্না, গোপালগঞ্জ :গোপালগঞ্জ জেলা সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার রাস্তা গাড়িতে করে পেরোলেই কোটালীপাড়ার কান্দি বাজার। সেখান থেকে ভাঙ্গা-চোরা ইট বিছানো প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা পার হয়ে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় আরো অন্ততঃ ৩/৪ কিলোমিটার যাবার পর হঠাৎই একটি যায়গায় চোখ থমকে যায়।

প্রায় হাঁটু পানি ঠেলে ছোট ছোট শিশুরা নীল রঙের পোশাক পরে প্রাথমিক বিদ্যালয় যাচ্ছে। অগত্যা সেখানেই নৌকা ভিড়ানো হলো। স্কুল শিক্ষার্থী শুভ, পলি, সাথি হালদারদের সাথে কথা হলে তারা জানায়, এ সময়টা এলাকায় না চলে নাও, আর না চলে পাও। যে কারনে অনেকটা বাধ্য হয়েই আশ-পাশ এলাকা থেকে তাদেরকে পানি ঠেলেই স্কুলে আসা-যাওয়া করতে হয়। বর্ষা মৌসুমে স্কুল ছাত্র-ছাত্রীরা বাড়ির ডিঙ্গি নৌকায় করে যাতায়াত করলেও এসময়টাতে পানি কমে গেলে নৌকা চালানো যায়না। মাস খানেক তাদেরকে এভাইে কষ্ট করতে হয়। স্কুলে আসা যাওয়ার কোন রাস্তা নাই। তা’ছাড়া বিল এলাকা হওয়ায় এক একটা বাড়ি দুরে দুরে। এরা এখন অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে গেছে। এটা যেন তাদের ভবিতব্য। স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও সন্তোষ জনক বলে জানালেন স্কুলের শিক্ষকরা।

এটা কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের লেবু বাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিভুরঞ্জন বাড়ৈ জানালেন, তিনি নিজে তার গ্রামের বাড়ি থেকে প্রতিদিন নৌকা চালিয়ে স্কুলে আসেন। অন্যান্য শিক্ষকদেরকেও একইভাবে আসতে হয়। এতো প্রতিকুলতার মধ্যে ছাত্র-ছাত্রীরা কিন্তু স্কুলে আসতে ভুল করেনা। উপস্থিতির হার ৮৫ ভাগ। তা’ছাড়া স্কুলের ফলাফলও ভালো বলে জানালেন তিনি। তিনি বলেন, বছরের অন্যান্য সময়টাতে ছেলে-মেয়েরা নিজেরা নৌকা বেয়ে স্কুলে আসে। কিন্তু, বিপত্তি বাধে এসময়টা। পানি কমে গিয়ে এমন একটা পর্যায় হয় যে, পানি ভেঙ্গেই আসতে হয়। এলাকার লোকজন শতভাগ শিশুদেরকে স্কুলে পাঠান। তবে হাইস্কুল অনেক দুরে থাকায় অনেকেই হাইস্কুলে গিয়ে ঝরে পড়ে। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হলে এ এলাকার শিশুরাও অন্য এলাকার ছেলে-মেয়েদের সাথে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতো পারতো।

এলাকার মুরব্বী আজগর শেখ বলেন, এলাকার মানুষ দরিদ্র থাকা সত্যেও শত কষ্টের মধ্যে তাদের সন্তানদেরকে স্কুলে পাঠাতে ভোলেন না। তিনি বলেন, বিলের পানি দ্রুত সরানোর জন্য ওয়াপদা বেড়ি বাঁধের যে লক গেট রয়েছে তা আরো বাড়নো অথবা মুখ আরো বড়ো করলে সময় মতো পানি নেমে যেত। তাহলে সমস্যা কিছুটা হলেও কমতো আর এলাকার মানুষ সুবিধা পেতো।

কান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উত্তম কুমার বাড়ৈ জানান, এ সময় এ অঞ্চলের মানুষে না চলে নাও, আর না চলে পাও। কষ্টের মধ্যে জীবন চলে এলাকার মানুষের। স্কুলের ছেলে-মেয়েদেরকে এসময়টা বাধ্য হয়েই কাঁদা-পানি ঠেলে অন্ততঃ মাস খানেক সময় এভাবেই যাতায়াত করতে হয়। তিনিও এলাকার মানুষের বিশেষ করে ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য স্কুল সংযোগ সড়ক নির্মান করা জরুরী বলে জানালেন। তা’ছাড়া ওয়াপদা বেড়ি বাঁধের লক গেটের মুখ বড় করা হলে বিলের পানি সময় মতো নেমে গেলে অবস্থার কিছুটা উন্নতিও হবে। শিক্ষার্থীদের কষ্টের লাঘব হবে।



(এমএইচএম/এস/জানুয়ারি১৩,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test