E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরায় বিচারকের বাড়িতে নির্যাতিত শিশু বীথি বাড়ির ঠিকানায়

২০১৬ জানুয়ারি ১৩ ২০:০৯:০৩
সাতক্ষীরায় বিচারকের বাড়িতে নির্যাতিত শিশু বীথি বাড়ির ঠিকানায়

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার বিচারিক হাকিম নূরুল ইসলামের বাসার নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মী  দশ বছর বয়সের শিশু বীথি প্রায় পাঁচ মাস পর ফিরে পেল তার বাবার কোল।

নির্যাতিত বীথির বাবা মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার বড় আমিনিয়া গ্রামের গোলাম রসুল বিশ্বাস গত ৫ জানুয়ারি সাতক্ষীরার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে মেয়েকে জিম্মায় নেওয়ার আবেদন জানালে বুধবার শুনানী শেষে বিচারক মহিবুল হাসান বীথিকে তার বাবার কাছে ফিরিয়ে দেন।

গোলাম রসুল বিশ্বাস জানান, ২০১৪ সালের জুন মাসে তার গ্রামের রুস্তুম আলি বিশ্বাসের ছেলে সাতক্ষীরা বিচারিক আদালতের কর্মচারি সোহরাব হোসেন ওরফে সাগর তার মেয়ে বীথিকে ভাল কাজ ও পাশাপাশি লেখাপড়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রতি দিয়ে বাড়ি থেকে নিয়ে আসে । কয়েক মাস ঢাকার মোহাম্মদপুরের একটি বাসায় তাকে রাখা হয়। গত বছরের মে মাসের প্রথম দিকে বীথিকে সাতক্ষীরার বিচারিক হাকিম নুরুল ইসলামের পলাশপোলের ভাড়া বাড়িতে গৃহকর্মী হিসাবে রেখে দেয় । এরপর থেকে মোবাইলে ও সশরীরে এসে মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে বা কথা বলতে পারতেন না তিনি। একপর্যায়ে গত বছরের ১৭ মে দেখা করতে এসে না পেয়ে মুখ্য বিচারিক হাকিম নিতাই চন্দ্র সাহার বাসায় এসে দেখা পান মেয়ের। এরপরও কথা বলার সুযোগ হয়নি তার।

গত ১৯ অগাস্ট সন্ধ্যা ৭টায় তিনি জানতে পারেন যে তার মেয়ে বীথিকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন বিচারিক হাকিম নুরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী নাতাশা । তাকে গুরুতর আহত এবং বহু ক্ষত চিহ্ণসহ সাতক্ষীরার প্রধান বিচারিক হাকিম নিতাই চন্দ্র সাহা , সদর থানার পুলিশ এবং সাংবাদিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা তাকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা হাসপাতালে ভর্তি করেন । রাতেই তিনি সাতক্ষীরা হাসপাতালে এসে তার কংকালসার মেয়েকে দেখতে পান । মেয়ের সঙ্গে কথা বলে তার উপর নির্যাতনের বিষয়টি নিশ্চত হন তিনি।

এ ঘটনায় তিনি ওই বিচারক, তার স্ত্রী নাতাশা ও জজ কোর্টের কর্মচাাির সোহরাব হোসেনের নামে থানায় অভিযোগ দিলেও মামলা নেয়নি পুলিশ। এ ঘটনায় সাতক্ষীরায় প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। বীথির নির্যাতনকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। পুলিশ বীথিকে চিচারকের বাড়ি থেকে উদ্ধারের আগে ঘটনার দিন কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বিশ্বাস মোজাফফর রহমান থানায় ৯৪১ নং সাধারন ডায়েরী করেন। ঘটনার প্রায় পাঁচ মাসেও বিচার হয়নি বীথির নির্যাতনকারিদের।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম সাতক্ষীরা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর পাঠানো একটি চিঠিতে বীথির গায়ের ক্ষত চিহ্ন ইলেকট্রিক শকের ও বাথরুমে পড়ে আঘাত বলে বীথির বক্তব্য বলে দাবি করেন। যদিও হাসপাতালের চিকিৎসকরা আঘাতগুলোর মধ্যে কয়েকটি পুরাতন ও কয়েকটি এক সপ্তাহের মধ্যের বলে উল্লেখ করেন।

সাতক্ষীরার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বীথির ২২ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। বিচারক নূরুল ইসলামের বিচারিক ক্ষমতা তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করা হয়। পরিবারের কারো কাছে যেতে রাজী না হওয়ায় গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মহিবুল হাসান বীথিকে বাগেরহাট জেলার দশানি পচা দীঘির পাড়ের নারী ও শিশু উদ্ধার আশ্রমে পাঠিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন।

গত ৫ জানুয়ারি গোলাম রসুল বিশ্বাস তার মেয়ে বীথিকে নিজের জিম্মায় পাওয়ার জন্য অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে আবেদন জানান। বিচারক মহিবুল হাসান ১৩ জানুয়ারি বীথিকে স্বশরীরে আদালতে হাজির করানোর জন্য নির্দেশ দেন।

(আরএন/এস/জানুয়ারি১৩,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test