E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কলাপাড়ায় শতশত শিশু নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত

২০১৬ জানুয়ারি ২১ ১৯:৪৮:৪৯
কলাপাড়ায় শতশত শিশু নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত

কলাপাড়া (পটুয়াখালী)প্রতিনিধি :চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে লাবি বেগমের (২০)। অসুস্থ্য আট মাসের শিশু সাকিল আহমেদ তান্না’র চিন্তায় টানা পাঁচদিন ঘুম নেই। কখন সন্তানের হাসি মাখা মুখ দেখবেন এই আশায় চোখভরা জল নিয়ে শুধুই সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে সে। কলাপাড়া হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় এ চিত্র।

হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে এখন অভিভাবক ও অসুস্থ্য শিশুদের শুধুই কান্নার রোল। নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া আক্রান্ত এ শিশুদের ভীড় ক্রমশ বাড়ছে। গত তিনদিনে দুই শিশুর মৃত্যুর খবরে আরও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে অভিভাবকরা। নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের ভীড়ে এখন চিকিৎসকরাও হিমশিম খাচ্ছে।

হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, শিশু ওয়ার্ডে শুধুই কান্নার রোল। অসুস্থ্য সন্তানদের নিয়ে তাদের অভিভাবকরা ছোটাছুটি করছে। তাদের কষ্টের কারনে দিশেহারা অভিভাবকরা ছুটছে ডাক্তার,নার্সদের কাছে। কেউ ব্যস্ত সন্তানকে নেব্যুলাইজার দিতে। অসুস্থ্য সন্তানদের কান্নার সাথে অভিভাবকরা ও কাঁদছে। এ ওয়ার্ডের এক কোনের বেডে ঘুমন্ত তান্নাকে কাজল পড়াচ্ছে তার মা। তখন তার চোখ দিয়েও জল গড়িয়ে পড়ছে।

প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরের গ্রাম কলাপাড়ার মহীপুর ইউনিয়ন থেকে অসুস্থ্য তান্নাকে নিয়ে তিনদিন আগে হাসপাতালে আসেন লাবি বেগম। গত পাঁচদিন ধরে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত সে। মহীপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু দুইদিনেও ভালো না হওয়ায় তাকে কলাপাড়া হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।

লাবি বেগম জানায়, পাঁচদিন পর আজ একটু ঘুমিয়েছে তান্না। এ কয়দিন অসুস্থ্য ছেলেকে কোলে নিয়েই বসে থাকতে হয়েছে। চোখের পাতা এক করতে পারেন নি। তাই এখন ছেলের কপালে কাজল একে দিচ্ছেন। এ কাজল লাগানো হচ্ছে “অশুভ” কিছু যেন ছেলেকে নজর না দেয়। কারন এখানে সবাই অসুস্থ্য। আজ একটু সুখের ঘুম দিয়েছে তান্না। আর এ চোখের জল কষ্টের না, আনন্দের। কি কষ্টের মধ্যেই না কেটেছে এই পাঁচটা রাত এ কথা বলেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন তিনি। তার প্রার্থনা সব শিশুরা যেন সুস্থ্য হয়ে ওঠে।

এদিকে সন্তান হারিয়ে সৈকতের মা-বাবা এখন শোকে পাথর। অসুস্থ্য ছেলেকে সঠিক চিকিৎসা করাতে না পেরে হাসপাতালে আনার আগেই মৃত্যু হয় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত সৈকতের। তার পিতা বকুল মিয়া বলেন, আমরা বুঝতে পারি নাই,এইটুকুতেই তাদের মানিক মইর‌্যা যাইবে।
কলাপাড়া হাসপাতাল সূত্রে জানাযায়, গত পাঁচদিনে শতশত নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। রোগীর চাপে অধিকাংশ রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।

কলাপাড়া হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. রেফায়েত হোসাইন জানান, হঠাৎকরে শিশুরা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়ায় তারাও চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
মেডিকেল অফিসার মাহাবুবুর রহমান (সজিব) জানান, এতে অভিভাবকদের আতংকিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। বেশি অসুস্থ্য হয়ে পড়লে হাসপাতালে ভর্তি করলে ৪/৫ দিনের মধ্যেই তারা সুস্থ্য হয়ে উঠবে।

(এমকেআর/এস/জানুয়ারি২১,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test