E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

বাগেরহাটে অন্ধত্ব থেকে আলোয় এসেছে ৬ শতাধিক ব্যক্তি

২০১৬ জানুয়ারি ২৬ ১৪:৩১:২৫
বাগেরহাটে অন্ধত্ব থেকে আলোয় এসেছে ৬ শতাধিক ব্যক্তি

বাগেরহাট প্রতিনিধি : ৯৫ বছর বয়সী শহর আলী শেখ বাগেরহাটের রামপাল এলাকার বাসিন্দা। নেত্রনালীতে সমস্যা থাকার কারণে বেঁচে ছিলেন অনেকটা না বাঁচার মতোই। হতদরিদ্র পরিবারে এই বৃদ্ধের চিকিৎসায় অর্থ জোগানোর সাধ্য নেই সন্তানদের। মৃত্যুর জন্য অপেক্ষায় থাকা এই বৃদ্ধের অবশেষে লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালে নেত্রনালী অপারেশন হয়েছে। ভালোই আছেন তিনি।

একই এলাকার ৯০ বছর বয়সী শেখ সৈয়দ আলীর ছানি অপারেশনও সম্পন্ন হয়েছে এখানে। মোংলার সাহেবেরমেঠ গ্রামের বাঁধন নামে ৫ বছরের একটি অসহায় শিশু মায়ের সাথে এসে এবছর বাম চোখের অপারেশন হয়েছে। সে জন্মের দুই বছর পর থেকে ঠিকমত দেখতে পেত না, এখন সম্পূর্ণ সুস্থ্য এবং স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। এই রকম ৬ শতাধিক চক্ষু রোগীকে ঢাকায় নিয়ে এনে লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালে অপারেশন করিয়ে দিয়েছেন ঢাকা মেগা সিটি লায়ন্স ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট লায়ন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম। এসব রোগিদের চিকিৎসা খরচ তো লাগেইনি, উল্টো আসা-যাওয়া, থাকা-খাওয়ার পর প্রত্যেকেই হাত খরচের টাকাও পেয়েছেন। এভাবে শুধু বাগেরহাটের রামপাল-মোংলা এলাকার চিত্রই নয়, গত ৭ বছর ধরে বাগেরহাট ও খুলনা অঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত ও হতদরিদ্র পরিবারের হাজার হাজার লোক এভাবেই উপকৃত হচ্ছেন।

বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার বড়দিয়া গ্রামের আলহাজ শেখ আব্দুর রহমান ও আলহাজ সখিনা বেগম দম্পতির এই সন্তানটি শিক্ষা, সম্পদ, প্রভাব-প্রতিপত্তি সবকিছুতে অন্য অনেককে ছাড়িয়ে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে সর্বশেষ আশ্রয়স্থলে পরিনত হয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করে পরবর্তীতে পিএইচডি ডিগ্রীও অর্জনের পর ড. ফরিদ ১৯৯২ সালে সিঙ্গাপুরের জাতীয় শিপিং কোম্পানী ’নেপচুন ওরিয়েন্ট লাইন্স’ এ চাকুরী দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। চাকুরী করে সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করা যাবে না বলে ১৯৯৯ সালে চাকুরী ছেড়ে ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে তিনি শিপিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মানব সেবার প্রতিটি ক্ষেত্রে এই মানব সেবীর বিচরন রয়েছে। চক্ষু রোগীদের চিকিৎসার পাশাপাশি, দরিদ্রদের সহায়তা, গরিব ছাত্রদের লেখাপড়া চালানো, মসজিদ নির্মানসহ এলাকার বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন।

বিগত ২০০৯ সাল থেকেই সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন এই নিভৃতচারী মানবপ্রেমিক। এপর্যন্ত নেত্রনালী, মাংস বৃদ্ধি, টেরিজম (ট্যারা রোগ) ও ছানী অপারেশন করেছেন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার রোগীর। এছাড়া আরও হাজার হাজার রোগীকে মাঠে ক্যাম্প পরিচালনার মাধ্যমে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ড. ফরিদ জানান, প্রতি বছরই বিভিন্ন এলাকায় আই ক্যাম্প পরিচালনা করা হয়ে থাকে।

লিফলেট, পোস্টার, ব্যানার ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালানোর সুবাধে হাজার হাজার রোগী নির্দিষ্ট সময় ও স্থানে চলে আসেন। সেখানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মাধ্যমে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। যাদের অপারেশন প্রয়োজন হয় তাদের তালিকা হয় এই ক্যাম্পেই। পরে তাদের ঢাকায় লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালে এনে অপারেশন সম্পন্ন করা হয়। এজন্য প্রতি বছরই খরচ হয় লাখ-লাখ টাকা।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালে গিয়ে দেখা মেলে এই মানব প্রেমিকের। অপারেশন হওয়া ৬ শতাধিক চক্ষু রোগীদের পাশে বসে কারো মাথায় হাত বুলাচ্ছেন, কারো কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা খোঁজ- খবর নিচ্ছেন। ওষুধ, খাবার ঠিকমতো পাচ্ছেন কিনা জেনে নিচ্ছেন। অপারেশনের পর রোগীদের কি করণীয় তাও বলে দিচ্ছেন তিনি। এভাবে করে চলেছেন অসহায়ের সেবা।

(একে/এএস/জানুয়ারি ২৬, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test