E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মৌলভীবাজারে  স্কুল শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় গ্রেফতার হয়নি খুনিরা

২০১৬ জানুয়ারি ২৭ ১৫:২২:৩৯
মৌলভীবাজারে  স্কুল শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় গ্রেফতার হয়নি খুনিরা

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি :গত ১৬ জানুয়ারী শনিবার রাত ৮ ঘটিকার সময় মৌলভীবাজার জেলা শহরে শাহ মোস্তফা রহঃ ৬৭৫ তম উরস উপলক্ষে মেলা চলাকালিন সময়ে শ্রীমঙ্গল সড়কের বেরিরপারে হেলাল মিয়ার ব্যাটারীর দোকানের সামনে শহরের শাহ্মোস্তফা একাডেমীর দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাদিম হোসেন অনিককে নির্মমভাবে ধারালো ছুরি দিয়ে খুন করে একই এলাকার কিশোর ইমন। ঘটনার এগারো  দিন পার হয়ে গেলেও এখনো সদর মডেল থানা পুলিশ মূল আসামীদের গ্রেফতার করতে পারেনি এখন পর্যন্ত।

আলোচিত এ পাশবিক হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহত অনিকের বাবা স্থানীয় শুটকি ব্যাবসায়ী আবুল হোসেন ছেলে হারিয়ে অনেকটা পাগলপ্রায়, স্বপ্ন ছিল ছেলে বড় হয়ে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে ভালো মানুষ হবে সে সপ্ন অংকুরেই বিনষ্ট হয়ে গেলো। এদিকে ঘটনার পর পরই নাদিম হোসেন অনিকের বাবা বাদী হয়ে মৌলভীবাজার মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ধারা নং ৩০২/৩৪ দণ্ডবিধি। মামলায় আসামী করা হয় একই এলাকার কিশোর ইমন(১৯) সামি (১৮) রাসেল (১৮) সহ অজ্ঞাত আরো ৩-৪ জনকে । নিহত অনিকের বাবা আবুল হোসেন ঘটনার সুষ্টু বিচার চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে র‌্যাব এর মহাপরিচালক,বাংলাদেশ পুলিশের মহাপদির্শক,সিলেট বিভাগের ডি,আই,জি,র‌্যাব ৯ শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার,জেলা প্রশাসক সহ প্রশাসনের উচ্চ পর্য়ায়ের ব্যাক্তিবর্গের সহায়তা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন,কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন আসামীকেই পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি।

নাদিমের বাবা অভিযোগ করে বলেন আমার ছেলে খুন হয়েছে আজ এগারো দিন পার হলো কিন্তু পুলিশ নৃশংস এ হত্যাকান্ডের সাথে জরিত খুনিদের এখনো গ্রেফতার করছেনা।তিনি আরো বলেন আসামীরা শহরের আসে পাশেই অবস্থান করছে তার পরও পুলিশ বলছে তাদের পাওয়া যাচ্ছেনা ।

ঘটনার তদন্তকারী অফিসার মৌলভীবাজার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক এস আই গিয়াস উদ্দিনের সাথে মুঠো ফোনে মামলার বর্তমান অবস্থা ও বাদীর অভিযোগ সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে তিনি জানান আমরা শতভাগ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আসামীদের ধরার জন্য,বিভিন্ন সময় অভিযানও চালানো হয়েছে কিন্তু আসামীদের ধরা যাচ্ছেনা আমরা আসামীদের কোন তথ্য পাওয়া মাত্রই অভিাযান চালাবো এতে কোন প্রকার সন্দেহের অবকাশ নেই।

ঘটনা সম্পর্কে সরেজমিনে বক্তব্য জানতে জরিত আসামীদের পরিবারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর থেকেই আসামীরা বাড়ী ছাড়া।

মামলার অভিযোগ পত্রে উলখ করা বিগত ১৪ জানুয়ারী মৌলভীবাজারের শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা দেখতে যায় নাদিম হোসেন অনিক ঐ সময় একই এলাকার কিশোর ইমন ও তার সহপাটিদের সাথে দেখা হয় এবং ইমনের এক পর্যায়ে ইমনের পায়ে অনিকের পা লাগাকে কেন্দ্র করে ঐ সময় ইমনের সাথে অনিকের বাকবিতন্ডা চলে,এর জের ধরে শনিবার রাতে নাদিম হোসেন অনিক নিজ বাসা থেকে মেলার উদ্যেশে শহরের বেরিরপারস্থ হেলাল মিয়ার ব্যাটারীর দোকানের সামনে আসা মাত্র আগে থেকে ওঁতপেতে থাকা ইমন ধারালো ছুরি দিয়ে পেটের মধ্যে আঘাত করলে সাথে সাথেই অনিক মাটিতে লুটিয়ে পরে । ঘটনাস্থলে ইমনের সাথে স্থানীয় বেরির চর এলাকার কিশোর ছামি ও রাসেল উপস্থিত ছিল । এ সময় স্থানীয়দের সহায়তায় অনিককে প্রথমে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে গেলে অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন । সাথে সাথে অনিককে নিয়ে সিলেটের উদ্যেশে রওয়ানা হলে রাস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এ দিকে ঘটনার মূল কারন জানতে নিহত নাদিম হোসেন অনিকের বেরিরচরস্থ বাসায় সরজমিনে গিয়ে জানা যায় ২০১২ সালের দিকে অনিক ও ইমন শহরের কাশিনাথ আলাউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়তো সে সময় অনিকের বাবা শুটকি ব্যাবসায়ী হওয়ায় ইমন অনিককে নিয়ে তুচ্চ তাচ্ছিল্য করতো প্রায় সময়। এ নিয়ে দু জনের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ইমন অনিককে মারধর করে গুরুতর আহত করে তখন অনিকের বাবা ঐ সময় অনিককে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা করান । এর পর অনিককে ঐ স্কুল থেকে নিয়ে ভর্তি করান শহরের বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শাহমোস্তফা একাডেমীতে। এর কিছু দিন পর ঘটনার জের ধরে দু পরিবারের মধ্যে ঝগড়া হয় এক পর্যায়ে ইমনের মা শেফালী বেগম বাদী হয়ে ঐ সময় অনিক ও তার বাবা আবুল হোসেন কে আসামী করে ২০১২ মৌলভীবাজার মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ।

(মামলা এসএলনং১০৫১/২০১৩) এক পর্যায়ে মামলা তুলে নেয়ার উদ্যেশে তৎকালীন মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফয়জুল করিম ময়ূনের মধ্যস্ততায় স্থানীয় মুরব্বীদের নিয়ে একটি সালিশি বৈঠকের আয়োজন করলে এতে উভয় পক্ষের মধ্যে সমজুতা হলে মামলা তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

এর পর থেকেই উভয় পরিবারের মধ্যে এক ধরনের দুরত্ত তৈরি হতে থাকে। যার শেষ পরিণতি নাদিম হোসেন অনিকের খুন হওয়া।



(একে/এস/জানুয়ারি২৭,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test