E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মংলা-ঘষিয়াখালী নৌরুট খনন কাজের ১১টির মধ্যে ৮টি ড্রেজারেই যান্ত্রিক ত্রুটি

২০১৬ জানুয়ারি ৩০ ১৫:৩১:৫৮
মংলা-ঘষিয়াখালী নৌরুট খনন কাজের ১১টির মধ্যে ৮টি ড্রেজারেই যান্ত্রিক ত্রুটি

বাগেরহাট প্রতিনিধি :বাগেরহাটের মংলা-ঘষিয়াখালী আর্ন্তজাতিক নৌ রুট খনন কাজে নিয়োজিত ১১টি মধ্যে ৮টি ড্রেজারের খনন কাজ যান্ত্রিক ত্রুটিতে বন্ধ রয়েছে। বাকি ৪টি দিয়ে ঢিমে তালে খুড়িয়ে-খুড়িয়ে চলছে খনন কাজ। তদারকি ও নজরদারির অভাবে অনিশ্চয়তায় মধ্যে পড়েছে গুরুত্বপূর্ণ এই আর্ন্তজাতিক চ্যানেলের খনন কাজ।

এদিকে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক ও স্থানীয় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর (ড্রেজার) বিরুদ্ধে অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা ও প্রকল্প এলাকায় অবস্থান করে খননের বিষয়ে নজরদারী না করার অভিযোগ উঠেছে। বিশ্বের বৃহত্তর ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন রক্ষা ও মংলা বন্দর সচলের লক্ষ্যে আর্ন্তজাতিক এ নৌ চ্যানেলটি খননের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও প্রশাসনিক দূর্বলতার কারণে বর্তমানে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে ড্রেজিং কার্যত্রুম। এছাড়া অভিযোগ রয়েছে খনন কাজে দায়িত্বতর বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা তাদের কর্মস্থলে না থেকে বেশির ভাগ সময় থাকেন ঢাকায়। ফলে দেখাভালের অভাবে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে ধীর গতিতে পরিলক্ষিত হচ্ছে।

মংলা-ঘষিয়াখালী আর্ন্তজাতিক নৌ রুট খনন কাজ সরেজমিনে ঘুরে দেখাগেছে, বর্তমানে চ্যানেল খনন কাজে বিআইডব্লিউটিএর ৬টি ও বেসরকারী সংস্থার ৫টি ড্রেজার খনন কাজে নিয়েজিত রয়েছে। এর মধ্যে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে খান গ্রুপের ২টি, এসএস রহমান কোং এর ২টি ও চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিয় কর্পোরেশনের ১টিসহ ৫টিই বন্ধ রয়েছে। আর খোদ বিআইডব্লিউটির বন্ধ রয়েছে ৩টি ড্রেজার।

মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলের গুরুত্ব বিবেচনায় এনে সরকার ২০১৪ সালের ১৫ জুন মৃত এ চ্যানেলটি সচলের জন্য খনন কাজ শুরু করে। ২০১৫ সালের ১৫ জুন চ্যানেলটি পুরোপুরি খনন শেষে পরিপূণ ভাবে নৌযান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার কথা থাকলে নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হলেও এখন তা বাস্তবায়ন হয়নি। প্রায় ২শ ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প ২০১৪ সালের জুন থেকে ২০১৫ সালের ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চ্যানেল হতে প্রায় এক কোটি কিউবিক ঘন মিটার পলি মাটি অপসারণ করেছে। শুরুতে খনন কাজে যে গতি ছিল বর্তমানে তা অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। কারণ এ পর্যন্ত যা খনন হয়েছে দ্রুত পলি পড়ে ভরাট হওয়াতে কাঙ্খিত তেমন কোন ফলাফল আসছে না, ঠিক থাকছে না নাব্যতা। এছাড়া বিআইডব্লিউটিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের যৌথভাবে চিহ্নিত চ্যানেল সংলগ্ন ৮৩টি শাখা নদী ও শাখা খালের জরিপ কাজ গত ২ মাসেও সম্পন্ন হয়নি। চ্যানেলটির সংযোগ খালগুলো পুরোপুরি অপসারণ ও অবৈধ দখলমুক্ত না হওয়ার কারণে নদীতে ¯্রােত না বাড়ায় পানি প্রবাহ এবং নাব্যতা কমছে প্রতিনিয়ত।

পরিবেশ সুরক্ষায় উপকূলীয় জোট’র সভাপতি এস,এম শাহনওয়াজ আলী বলেন, চ্যানেল খননে পরিবেশবাদি সংগঠনের বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয়দের মতামত অবজ্ঞা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতার সাথে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবেশবাদি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ-সিডিপি’র নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ জাহাঙ্গীর হাসান মাসুম বলেন, চ্যানেল খননের পূর্বে সংশ্লিষ্ট শাখা নদী-খালগুলো উন্মুক্ত করা জরুরী ছিল। সেই সাথে অবৈধ বাধ ও দখলদারদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা এখনও গ্রহণ করা হয়নি। জলাশয়গুলোর পানি চ্যানেলে নামার ব্যবস্থা করতে হবে। সুন্দরবনের জীব-বৈচিত্রর ক্ষতি কমাতে চ্যানেলটি দ্রুত চালু করা প্রয়োজন। চ্যানেল সচল করার গুরুত্বটি এলাকার জনগণকে বুঝাতে হবে। অবৈধ বাধ ও পলি অপসারণে এখনই ব্যবস্থা না নিলে এ চ্যানেলটির কাঙ্খিত ফলাফল পেতে বেগ পেতে হবে।

চ্যানেল খননের বিষয় পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, খননের বিষয় নিয়ে আমরা অনেক কথা বলেছি। চ্যানেলটি প্রথমে যেভাবে খনন শুরু হয়েছে সেটি খুবই ত্রুটিপূর্ণ কারণ চ্যানেল খননের পূর্বেই প্রভাবশালীদের দখলে থাকা নদী খাল দখল মুক্ত করে অবৈধ বাঁধ ও পলি অপসারন করে জোয়ারাধার বা জোয়ার অববাহিকার বিষয়টি নিশ্চিত জরুরী ছিল। তিনি আরো বলেন, বর্তমান শুষ্ক মৌসুমে জোয়ার ভাটার ¯্রােত কম তাই পলি কম আসছে কিন্তু পানি প্রবাহ অনুপাতে পলি ঠিকই পড়ছে। তিনি সেনা ও নৌ বাহিনীর তত্ত্বাবাধনে এ চ্যানেলটি খননের দাবী জানান।

যান্ত্রিক ত্রুটির বিষয়ে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো: আবদুস সামাদ বলেন, ত্রুটিতো যে কোন মেশিনে থাকে, আজকে ত্রুটি আছে ঠিক করা হচ্ছে কালকে আবার চালু হয়ে যাচ্ছে। এভাবে ড্রেজার কর্তৃপক্ষ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া ত্রুটি কিছু কিছু থাকলেও সেগুলো সারিয়ে আবারো আমরা কাজ করছি। বর্তমানে এ চ্যানেল দিয়ে ১২ফুট গভীরতার নৌযান চলাচল করছে। কিছু কিছু জায়গায় প্রতিনিয়ত পলি পড়লেও যেমনটা আশংকা করা হয়েছিলো সেই তুলনায় চ্যানেলটিতে কম পলি পড়ছে। তারপরও নাব্যতা ধরে রাখার জন্য মংলা-ঘাষিয়াখালী চ্যানেলের সাথে সংযুক্ত ৮৩টি খাল খননের প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে মংলা-ঘাষিয়াখালী আর্ন্তজাতিক নৌ রুটটি সারা জীবনের জন্য চালু থাকবে।

বিআইডব্লিউটিএর তত্ত্বাবাধয়ক প্রকৌশলী (ড্রেজিং) ফরহাদ উজ জামান বলেন, খনন কাজ তো কিছুতা ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএর ৩টিসহ বেসরকারী কয়েকটি ড্রেজার বন্ধ রয়েছে। মুলত দীর্ঘদিন লোনা/লবণ পানিতে কাজ করার কারণে ড্রেজারগুলোর বিভিন্ন যস্ত্রপাতি দুর্বল ও অকেজো হয়ে পড়েছে। এগুলোতে দেশীয় পাটর্স লাগালে তা আবারো দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই বিদেশ থেকে ভালো পাটর্স এনে লাগানোর জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এছাড়া তিনি অধিকাংশ সময়ই ড্রেজিং এলাকায় অবস্থান না করে ঢাকায় অবস্থান করায় প্রকল্পের কার্যক্রম ব্যাহতসহ ঠিকাঠাক মত তদারকি করছেন না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টেন্ডার সহ বিভিন্ন কাজের কারণে ঢাকায় আসতে হয়। তারপরও সেখানে আমাদের লোকজন থাকে তাতে কাজের কোন ক্ষতি হয় না বলে দাবী করেন।


(এসএকে/এস/জানুয়ারি ৩০,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test