E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

খাদ্য সংকটে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে বাঘ

২০১৬ ফেব্রুয়ারি ০৩ ১৮:৩০:৪৭
খাদ্য সংকটে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে বাঘ

বাগেরহাট প্রতিনিধি : ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সুন্দরবনের প্রকৃতির পাহারাদার রয়েল বেঙ্গল টাইগার এখন চরম খাদ্য সংকটে পড়েছে। খাদ্যাভাবের কারনে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জ থেকে নদী সাঁতরে গভীর রাতে লোকালয়ে প্রতিনিয়ত ঢুকে পড়ছে বাঘ। ধরে নিয়ে যাচ্ছে গরু-ছাগল-মহিশ, হাসঁ-মুরগী। গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে প্রায় প্রতিদিনই লোকালয়ে হানা দিচ্ছে বাঘ।

লোকালয় দুটির সর্বত্র দেখা যাচ্ছে বাঘের পায়ের তাজা ছাপ। বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সুন্দরবন সন্নিহিত সোনাতলা ও উত্তর রাজাপুর গ্রামে সোমবার হানা দেয় দুটি রয়েল টাইগার। এই দুই গ্রামের আমজনতা বাঘের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। অনেকে আবার পরিবার-পরিজন নিয়ে ‘বাঘ মামা’র ভয়ে অন্যত্র আতিœয়-স্বজনের বড়ীতে আশ্রয় নিয়েছে। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ এতথ্য নিশ্চিত করেছে।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ ও এলাকাবাসি জানায়, সর্বশেষ সোমবার গভীর রাতে শরণখোলা রেঞ্জের ভোলা ফরেস্ট ক্যাম্প সংলগ্ন বন থেকে একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার বগী-শরণখোলা নদী সাঁতরে সোনাতলা গ্রামে চলে আসে। এরপর একই রাতে চাঁদপাই রেঞ্জর নাংলী ফরেস্ট ক্যাম্প এলাকা থেকে অপর একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার মরা ভোলা নদী সাঁতরে শরণখোলা উপজেলার উত্তর রাজাপুর গ্রামে ঢুকে পড়ে। তবে বাঘ দুটি ভোরে আবার সুন্দরবনে ফিরে যায়। লোকালয়ে বাঘ ঢুকে পড়ার পর থেকে শরণখোলার সোনাতলা ও উত্তর রাজাপুর গ্রামের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

শরণখোলার সুন্দরবন সন্নিহিত সোনাতলা গ্রামের আবু রাজ্জাক আকন জানান, গত ২৪ ডিসেম্বর গভীর রাতে সোনাতলা ও উত্তর রাজাপুর গ্রামে দুটি বাঘ নদী সাঁতরে গ্রামে ঢুকে পড়ে। এরপর থেকে প্রায় প্রতি রাতেই গ্রাম দুটিতে রাতের আধারে খাদ্যের সন্ধানে বাঘ হানা দিচ্ছে। ইতিমধ্যে এই দুটি গ্রামের ১০ থেকে ১২টি গবাদী পশু ও হাসঁ-মুরগী ধরে নিয়ে গেছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। এই গ্রাম দুটির বিভিন্ন স্থানে দেখা মিলছে বাঘের পায়ের তাজা ছাপ।

এবিষয়ে সুন্দরবন বিশেষজ্ঞ ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনে প্রকৃত পক্ষে বাঘ এখন অস্তিস্ব সংকটে পড়েছে। সর্বশেষ জরিপ মতে সুন্দরবনে এখন ১০৬টি বাঘ রয়েছে। সুন্দরবনে একর পর এক মানুষের সৃষ্ট পরিবেশ বিপর্যয়, চোরা শিকারী ও বনদস্যুদের হাতে হরিণসহ বন্যপ্রাণী লাগামহীন ভাবে শিকারের ফলে বনে বাঘের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। একারনেই খাদ্যাভাবে সুন্দরবনের বাঘ প্রতিনিয়ত লোকালয়ে এসে গবাদী পশু ও হাসঁ-মুরগী ধরে নিয়ে যাচ্ছে। অস্তিস্ব সংকটের হাত থেকে সুন্দরবনের বাঘকে বাঁচিয়ে বাখতে হলে তাদের আবাসস্থলে পর্যাপ্ত খাদ্যের নিশ্চিয়তা নিশ্চিত করতে হবে। তবেই খাদ্যের সন্ধানে বাঘ লোকালয়ে আসা বন্ধ করবে।

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক মো. কামাল উদ্দিন আহমেদ ও চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা ফরেষ্ট রেঞ্জার গাজী মতিয়ার রহমান জানান, সুন্দরবন থেকে রাতের আধারে লোকালয়ে বাঘ ঢুকছে এমন খবর নিশ্চিত হয়ে বনের তেড়াবেকা, ভোলা, দাসের ভারাণী, ধানসাগর ও নাংলী ফরেস্ট ক্যাম্পের কর্মকর্তা, বনরক্ষী ও টাইগার রেস্পন্ট টিমসহ কো-ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে। ক্যাম্পগুলোর বনরক্ষীদের নিজ নিজ এলাকা নজরদারীতে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এলাকা দুটির মসজিদ থেকে মাইকিং করে মানুষজনকে শতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। তবে কি কারনে প্রতিনিয়ত লোকালয়ে বাঘ হানা দিচ্ছে ? সে বিষয়ে স্পর্স্ট কোন উত্তর দেননি এদুই বন কর্মকর্তা।

(একে/এএস/ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test