E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে বাল্য বিয়ের কবল থেকে রক্ষা পেলো সাতক্ষীরার নবম শ্রেণির ছাত্রী শাহারিন নাহার

'১৮ এর আগে বিয়ে নয়, এখন শুধুই লেখাপড়া'

২০১৬ ফেব্রুয়ারি ০৪ ২০:১৬:৫৩
'১৮ এর আগে বিয়ে নয়, এখন শুধুই লেখাপড়া'

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : অবশেষে বাল্য বিয়ের কবল থেকে রক্ষা পেলো সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আলিপুরের নবম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী শাহারিন নাহার। শাহারিন এখন নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে। তালাবদ্ধ করে রাখা বইগুলিও ফেরত দিয়েছেন তারা বাবা। শাহারিন এখন আশ্বস্ত যে তার বাবা মা এখনই তার বিয়ে দেবেন না। আগে লেখাপড়া , তারপর বয়স ১৮, তবেই বিয়ের চিন্তা করবেন তারা।

বৃহষ্পতিবার সকালে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ আবদুল সাদীর অফিসে এসেছিলেন শাহারিনের বাবা আবুল কালাম পাড় ও মা রওশন আরা। সবার সামনে তারা দুজনেই লিখিতভাবে জানালেন তাদের ‘মেয়েকে এখনই বিয়ে নয়’। এখন শুধুই লেখাপড়া। এছাড়া শারীরিক ও মানসিক কোনো ধরনের নির্যাতনও চালানো হবে না তার ওপর এমন শর্ত দিয়ে ফিরে গেলেন তারা। শাহারিন আলিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী। রোল ২। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে জিপিএ ৫ পেয়েছিল সে।

মাসখানেক আগে থেকে তার বাবা চেষ্টা করছিলেন মেয়ের বিয়ে দেওয়ার। এজন্য মেয়েকে বারণ করে দেন স্কুলে যেতে ।এমনকি স্কুল থেকে দেওয়া নতুন বইপত্রও বাড়িতে বাক্সে রেখে তালা ঝুলিয়ে দেন বাবা আবুল কালাম। চাপের মুখেও বিয়েতে অনাগ্রহী শাহারিন নিজেকে রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষিকা, নিজের সহপাঠী, পাড়ার দুই একজন মুরুব্বী সকলকেই জানিয়েছিল। কিন্তু কেউ তার বাবাকে বাধা দিতে পারছিলেন না।

অবশেষে শাহারিন সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে গোপনে একটি চিঠি লেখে। চিঠিতে তাকে বিয়ের কবল থেকে রক্ষার আবেদন জানায় শাহারিন। মেয়েটির আকুতি পড়ে নির্বাহী অফিসার শাহ আবদুল সাদী আলিপুর গ্রামে তাদের বাড়িতে যান। খুঁজে পান তার মাকে। মেয়েটির সাথে কথাও বলেন তিনি।বলেন বিয়ে বন্ধ করে মেয়ের হাতে বই তুলে দিতে। কিন্তু বাবার অনুপস্থিতিতে কোনো সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেন নি তিনি।

অবশেষে পুলিশের সহায়তায় তার বাবা ও মাকে নিয়ে আসা হয় নির্বাহী অফিসারের অফিসে। তারা বাল্য বিয়ের কুফল সম্পর্কে ধারণা নেন। উপলব্ধি করেন কম বয়সে বিয়ে দিলে মেয়ের স্বাস্থ্যহানি ঘটবে। সাংসারিক নির্যাতন নেমে আসবে। শিশুটিও ভুগবে অপুষ্টি ও অপরিপক্কতায়। এক সময় স্বামীর বাড়ি থেকে বিতাড়িতও হবে সে। তার ভবিষ্যৎ হয়ে পড়বে অন্ধকার। এসব জেনেই তারা লিখিত মুচলেকায় স্বাক্ষর দেন। বাল্য বিয়ে বন্ধের লালকার্ড হাতে নিয়ে শাহারিনের বাবা ও মা বলেন ‘মেয়েকে এখন বিয়ে দেবোনা। মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে পেশাগত জীবনে পৌঁছে দিতে চাই। ওর বিয়ের বিষয় ১৮ পার হলে চিন্তা করবো, এখনই নয়’। মেয়েটির বাবা জানান,‘আজ থেকে আমাদের মেয়ে স্কুলে যাবে। তার বই খাতা কলম সবই আমি ফেরত দিয়েছি। আমি তার লেখাপড়ায় সাধ্য মতো অর্থ ব্যয় করবো। প্রয়োজনে ঋণ নেবো। কিন্তু মেধাবী মেয়ের লেখাপড়া বহুদূর পর্যন্ত চালিয়ে যাবো। বিয়ের প্রলোভনে পড়ে মেয়েটির ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে চাই না’।

স্বতঃস্ফূর্ত মুচলেকা প্রদান অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মেয়েটির দাদা আশরাফুল ইসলাম লাকি, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কোহিনুর ইসলাম, পুলিশের উপ পরিদর্শক মো. মহসিন আলি।

(আরকে/পি/ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test