E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গোপালগঞ্জে পাড় ভেঙ্গে নদীতে যাচ্ছে কৃষকের ফসলি জমি

২০১৬ ফেব্রুয়ারি ০৬ ১৮:০৭:৫৫
গোপালগঞ্জে পাড় ভেঙ্গে নদীতে যাচ্ছে কৃষকের ফসলি জমি

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : এ জমির ধান দিয়েই আমার সারা বছরের খাবারের ব্যবস্থা হয়। ধার দেনা করে জমিতে বোরা ধানও লাগিয়েছিলাম। ভর দুপুরে মাথার উপর টানা রোদ তার মধ্যে জমি পাড়ে এসব কথা বলছেন আর অঝরে কেঁদে যাচ্ছিলেন বৃদ্ধা স্নেহলতা হালদার।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গিরিশ নগর (চরবয়রা) গ্রামের বাসিন্দা তিনি। মধুমতি নদী পাড়ে তার রয়েছে ২০ কাঠা জমি। এ জমির বেশীর ভাগ জমিই নদীতে ভেঙ্গে গেছে। তবে তা নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে নয়। নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু কাঁটায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

এ ব্যাপারে নদী পাড়ের জমি মালিকরা শনিবার দুপুর দুইটার দিকে ভাঙ্গন পাড়ে হাতে হাত ধরে মানববন্ধন করে এবং জেলা প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

ক্ষতিগ্রস্ত স্নেহলতা হালদার জানালেন তিনি জমির রেকর্ডিয় মালিক। বেশ কিছুদিন ধরে গিরিশ নগর গামের ওই এলাকায় মধুমতি নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে টুঙ্গিপাড়া ও গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বেশ কিছু বালু ব্যবসায়ী। তারা দাবি করে যে, তারা সরকারের কাছ থেকে মধুমতির সরকারী বালুমহাল ইজারা নিয়েছে। কিন্তু, বালুমহালে ভাল বালু না পাওয়ায় ওইসব ব্যক্তি এবার নদী তীরের ফসলী জমি-সংলগ্ন এলাকা থেকেই বালু উত্তোলন করছে। যে কারনে ফসলী জমি একের পর এক ভেঙ্গেই চলছে।

তিনি আরো জানান, গেল বছর একইভাবে তার জমির পাড় থেকে বালু উত্তোলন করায় তার অপর জমিটি আগেই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

অপর জমির মালিক সুকুমার চন্দ্র বিশ্বাস জানান, বালুমহাল থেকে বালু না কেটে আমাদের জমির পাড়ে এসে বালু কাটছে। যে কারনে আমাদের ফসলী জমি ভেঙ্গে নদীগর্ভে চলে গেছে। আমরা বাধা দিতে গেলে ড্রেজারের লোকজন আমাদের মারপিট করে এলাকাছাড়া করার হুমকি দেয়। আমরা আমাদের ফসলী জমি রক্ষার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই।

গোবরা ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আলতাপ হোসেন খোকন ও স্থানীয় সফিকুর রহমান টুটুলসহ গ্রামের আরো অনেকে অভিযোগ করে বলেছেন, টুঙ্গিপাড়ার বাবুলসহ আরো কয়েকজন লোক জেলার সরকারি বালুমহালটি ইজারা নিয়েছে। বালুমহালে প্রতিবছর বালু কাটার ফলে সেখানে বালুর পরিমান কম হওয়ায় তারা চরগোবরা এলাকায় ফসলী জমির পাড়ে ড্রেজার লাগিয়ে রাতে দিনে অবৈধভাবে বালু কাটে। ফলে ফসলী জমিগুলি একের পর এক নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। তিনি ফসলী জমি রক্ষায় জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

এ ব্যাপারে গোবরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফয়সাল কবির কদর বলেছেন, আমি ওই এলাকা থেকে বালু কাটতে ইজারাদারদের নিষেধ করেছিলাম। স্থানীয় লোকজন নিয়ে বসে ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকদের ক্ষতিপুরনের ব্যবস্থা করা হবে।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জালাল উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেছেন, বালুমহালটি ইজারা দেয়া আছে। ইজারাদাররা বালুমহাল থেকে বালু না কেঁটে ফসলী জমির পাড়ে গিয়ে বালু কাঁটছে। ফলে রোপিত বোরোধানসহ দুটি জমি ধ্বসে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ইজারাদারদের বলে দেয়া হয়েছে, তারা যেন ফসলী জমির পাড় ঘেষে বালু না কাটে।

(এএইচএম/এএস/ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test