E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

খানজাহান বিমান বন্দর দিয়ে আড়াই বছরের মধ্যে চলাচল করবে বিমান

২০১৬ ফেব্রুয়ারি ২৬ ১৩:২৯:৫১
খানজাহান বিমান বন্দর দিয়ে আড়াই বছরের মধ্যে চলাচল করবে বিমান

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট  : আগামী ২০১৮ সালের জুলাই মাসে খানজাহান আলী বিমান বন্দর থেকেই আকাশে ডানা মেলে চলাচল করবে বিমান। বাগেরহাটে নির্মানাধীন খানজাহান আলী বিমান বন্দরের পূর্নাঙ্গ রূপ দিতে আরো ১৬৩ হেক্টর জমি অধিগ্রহনে ৪৩ কোটি টাকা বুঁঝিয়ে দেয়া হয়েছে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসককে।

নতুন করে অধিগ্রহনকৃত এই ভূমির উন্নয়ন ও মাটি ভরাট করতে ব্যায় হচ্ছে আরো ৩০ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আগামী জুন মাসের মধ্যে নতুন করে অধিগ্রহনকৃত এই ভূমির উন্নয়ন কাজ শেষ হলে জুলাই মাসেই আর্ন্তজাতিক দরপত্র আহবানের এরপরই শুরু হয়ে যাবে বাগেরহাটের ফয়লায় বহুকাংখিত পূর্নাঙ্গ খানজাহান আলী বিমান বন্দর নির্মান কাজ।

বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ফয়লায় খুলনা- মংলা জাতীয় মহাসড়কের পাশে ২৫৬ হেক্টর জমির উপর পূর্নাঙ্গ খানজাহান আলী বিমান বন্দরের নির্মান প্রকল্পটি গত বছরের ৫মে একনেকের সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। ৫৪৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যায়র এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে সরকারি তহবিল থেকে দেয়া হচ্ছে ৪৯০ কোটি টাকা ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) তহবিল থেকে ব্যায় হবে বাকি ৫৪ কোটি টাকা। আগামী তিন বছরের বছরের মধ্যে এই বিমান বন্দরটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে। বাগেরহাট শহর, মংলা বন্দর ও বিভাগীয় শহর খুলনার সাথে ২৫ মিনিটের সমদূরত্বে নির্মিত হচ্ছে এই বিমান বন্দরটি। বিমান বন্দরটির নির্মান কাজ শেষ হলে ওয়ার্ল্ড হ্যরিটেজ সুন্দরবনের ইকো ট্যুরিজম, হযরত খানজাহানের মাজার, ও ওয়ার্ল্ড হ্যরিটেজ ষাটগুম্বজ মসজিদের পর্যটন শিল্পের দ্রুত বিকাশ, দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মংলা, ইপিজেড, রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, চিংড়ি শিল্প ও বেসরকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো আরও গতিশীলসহ নির্মানাধীন পদ্মা সেতুর পাশাপাশি অবহেলিত দক্ষিঞ্চালের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা রাখবে। পরিকল্পপনা মন্ত্রনালয় ও বেবিচক সূত্র এতথ্য নিশ্চিত করেছে।

নব্বই দশকে বিএনপি সরকারের তৎকালিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী এএসএম মোস্তাফিজুর রহমানের একক প্রচেষ্টায় বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ফয়লায় মংলা-মাওয়া-ঢাকা মহাসড়কের পাশে হযরত খানজাহান আলীর (র:) নামে বিমান বন্দর নির্মানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করে সরকার। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে প্রথমে অধিগ্রহন করা হয় ৯৪ একর জমি। অধিগ্রহণকৃত ওই জমি বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্থান্তরের পর ১৯৯৬ সালের ২৭ জানুয়ারী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাগেরহাট খানজাহান আলী বিমান বন্দরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। বিগত ১৯৯৭ সালে শুরু হয় বিমান বন্দরের মাটি ভরাটের কাজ। প্রায় ২৪ কোটি টাকায় আংশিক মাটি ভরাট করা ছাড়া তৎকালিন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে খানজাহান বিমান বন্দর নির্মানে আর কিছুই তখন করা হয়নি। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এলে বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের আবার শুরু হয় মাটি ভরাটের কাজ। এক পর্যায়ে অর্থ বরাদ্দের অভাবে কয়েক মাসের মধ্যে তাও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর খানজাহান বিমান বন্দর প্রকল্পের আর কোন কাজ হয়নি। এঅবস্থার বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রনালয় ২০১৩ সালের এপ্রিলে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ দেয়। ওই বছরের ২৬ নভেম্বর বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে কুয়েট বিশেষজ্ঞরা তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনে বিমান বন্দর নির্মাণের যৌক্তিকতা তুলে ধরে দ্রুত এই বিমান বন্দর নির্মানে প্রথম ধাপে ছোট বিমান ওঠানামার জন্য ২৫০ কোটি টাকা ও দ্বিতীয় ধাপে পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়। কুয়েট বিশেষজ্ঞদের এ’দুটি প্রস্তাবনার বিষয়টি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রনালয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয়কে অবহিত করে। পরে এদু’টি প্রস্তাবনা একিভূত করে পূর্নঙ্গ বিমান বন্দর নির্মান প্রকল্প চুড়ান্ত করা হয়।
বর্তমানে এই বিমান বন্দর প্রকল্পটি দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ( বিমান ও সিএ উইং) আবুল হাসনাত মো. জিয়াউল হক জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গত বছরের ৫ মে একনেকের সভায় পুর্নাঙ্গ বিমান বন্দর রূপে ৫৪৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যায় বাগেরহাট খানজাহান বিমান বন্দর প্রকল্পটি পাশ হয়। এই টাকার মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে দেয়া হচ্ছে ৮০ ভাগ ও বেসিচক তহবিল থেকে দেয়া হচ্ছে ২০ ভাগ টাকা। ২০১৮ সালের জুন মাসের মধ্যে এই বিমান বন্দর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে আরও ১৬৩ হেক্টর জমি অধিগ্রহনের প্রয়োজন দেখা দেয়। এই জমি অধিগ্রহনের জন্য বাগেরহাটের জেলা প্রশাসকের কাছে ৪৩ কোটি টাকা বুঁঝিয়ে দেয়া হয়েছে । নতুন করে অধিগ্রহনকৃত এই ভূমির উন্নয়ন ও মাটি ভরাট করতে ব্যায় হচ্ছে আরো ৩০ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এই কর্মকর্তা আরও জানান, ২০ বছর পর আধুনিক পূর্নাঙ্গ বিমান বন্দর রূপে এই উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দের মধ্যে রয়েছে, ইলেক্ট্রো ম্যাকানিক্যালে ১৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা, ফায়ার সাভিস খাতে ১৫ কোটি টাকা, টার্মিণালসহ ১৮ হাজার ৫৬৪ বর্গ মিটার আবাসিক ভবন নির্মানে ১১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, এয়ারফিল্ড গ্রাউন্ড লাইটিং(এজিএল), ৭ হাজার মিটার রানওয়ে ও ট্যাক্্িরওয়ে নির্মানে ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা, সিমানা প্রাচীর নির্মানে ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা, পানি সরবরাহ খাতে ৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা, এক হাজার ও ৫০০ কেভির দুটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মানে ৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা, পরামর্শক সেবা খাতে ৬ কোটি ৯ লাখ টাকা, জ্বালানী পরিবহন খাতে ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা, এম্বুলেন্সসহ যানবাহন কিনতে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ব্যাগেজ এক্ররে, হ্যান্ড মেটাল ডিটেকটর, লিফট ও টেলিফোন কিনতে ব্যায় ধরা হয়েছে ৪ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং প্রকল্পের জনবল খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮৭ লাখ টাকা।




(এএসকে/এস/ফেব্রুয়ারি২৬,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test