E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জজ কোর্টে যাবজ্জীবন, হাইকোর্টে খালাস

বিনা অপরাধে জেলখানায় দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে!

২০১৬ ফেব্রুয়ারি ২৯ ১৫:৪৭:১৭
বিনা অপরাধে জেলখানায় দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে!

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এক আসামী হাইকোর্ট থেকে খালাস পাওয়ার পরও এক যুগেরও বেশি সময় ধরে জেল হাজতের ঘানি টানছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি বিবেচনায় আনার জন্য রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. জিল্লুর রহমান ও অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু গত বুধবার সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২য় আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারকের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। রবিবার আবেদন শুনানী শেষে বিচারক আশরাফুল ইসলাম রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরদ্ধ সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছিল কিনা তা যাঁচাই করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।

সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২ সূত্রে জানা গেছে, কলারোয়া উপজেলার কয়লা গ্রামের আমজেল আলী বিশ্বাসের ছেলে জবেদ আলী বিশ্বাসের স্ত্রী লিলি (৮) ও রেক্সোনাকে (৫) রেখে মারা যান। ১৯৯৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় নিজের মেয়ে লিলিকে মামার বাড়ি তালা উপজেলার মানিকহার গ্রাম থেকে সেনেরগাতি বাজারে নিয়ে আসেন। সেখানে বিস্কুটের সঙ্গে বিষ খাইয়ে লিলিকে হত্যা করেছেন এমন অভিযোগে মৃতের মামা আবুল কাশেম সরদার পরদিন তালা থানায় একটি হত্যা মামলা (থানা মামলা নং-৫, জিআর- ১৬৩/৯৪) দায়ের করেন। মামলায় মৃতের বাবা জবেদ আলী বিশ্বাসকে আসামী শ্রেণিভুক্ত করা হয়। ১৯৯৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আসামী গ্রেফতার হয়ে এখনো পর্যন্ত জেলখানায় রয়েছেন। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা তালা থানার উপরিদর্শক লিয়াকাত আলী ১৯৯৬ সালের ৯জুন এজাহারভুক্ত আসামীর নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পাঁচজন সাক্ষীর জবানবন্দি ও নথি পর্যালোচনা করে অতিরিক্তি জেলা ও দায়রা জজ -২ আদালতের বিচারক ২০০১ সালের পহেলা মার্চ হত্যার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে আসামী জবেদ আলীকে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দেন।

আসামী জবেদ আলী বিশ্বাস জেলখানার মাধ্যমে হাইকোর্টে আপিল (ক্রিমিনিাল জেল আপীল নং-১২৭৩/২০০১)করেন। আপীল মামলায় মহামান্য হাইকোর্ট থেকে হাজতী/ কয়েদী কনভিকশন নং ৩০০৮ /এ সাতক্ষীরা জেল উক্ত আসামী নির্দোষ প্রমাণে ২০০৩ সালের ১৯ মার্চ খালাস পান। ২০০৩ সালের ২৬ মার্চ ২৫৮৪২ নং স্মারকে এ আদেশ পাঠানো হয়। রেফারেন্স মতে হাইকোর্টের ১০৭২৫নং স্মারকে আদেশ অনুযায়ি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মামলার মুল নথি (এলসিআর নং-৬০৬৭) জেলা ও দায়রা জজ সাতক্ষীরার -২ আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ি তৎকালিন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক উচ্চ আদালতের রায় ও আদেশের কপি শামিল করে সংশ্লিষ্ট রেজিষ্টার নোট করে বিধি মোতাবেক নথিটি রেকর্ডরুমে পাঠানো হোক মর্মে ২০০৩ সালের ৩ এপ্রিল এর এক আদেশে উল্লেখ করেন।

সাতক্ষীরা জজ কোর্টের জ্যেষ্ঠ কয়েকজন আইনজীবী বলেন, এ ধরণের হাইকোর্টের আদেশ সংশ্লিষ্ট আমলী আদালতে এলে তার সত্যতা যাঁচাই করে ওই আসামী অন্য কোন মামলা না থাকলে তাকে জেলখানা থেকে মুক্তি দিতে আপত্তি নেই মর্মে জেল সুপারকে নির্দেশ দেওয়ার কথা জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারকের আদেশে থাকার পচলিত নিয়ম রয়েছে। এক্ষেত্রে সেটা প্রত্যক্ষ করা যায়নি। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পেশকার মতিয়ার রহমানের (বর্তমানে মাগুরা জুডিশিয়াল কোর্টের প্রশাসনিক কর্মকর্তা) ভূমিকা নিয়েও সংশয় রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ যদি হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে অপিল না করে থাকে বা খালাসপ্রাপ্ত আসামী অন্য কোন মামলায় জেলখানায় থেকে না থাকে সেক্ষেত্রে দীর্ঘ সাড়ে ১২ বছর কোন কারণ ছাড়াই কারাভোগ নজিরবিহীন মানবাধিকার লঙ্ঘন। যা বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

(আরকে/পি/ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test