E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সুন্দরবনে সক্রিয় ১৬ বনদস্যু বাহিনী আতঙ্কে ২ লাখ জেলে-বনজীবী

২০১৬ মার্চ ০৩ ২১:৩০:১৭
সুন্দরবনে সক্রিয় ১৬ বনদস্যু বাহিনী আতঙ্কে ২ লাখ জেলে-বনজীবী

বাগেরহাট প্রতিনিধি : সুন্দরবনে বাগেরহাটের চাঁদপাই ও শরণখোলা, পশ্চিশ সুন্দরবনের খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ১৬ টি বনদস্যু বাহিনী। এই বনদস্যু বাহিনী গুলোর হাতে মুক্তিপনের দাবিতে প্রায় প্রতিদিনই অপহৃত হচ্ছে জেলে-বাওয়ালী। সুন্দরবনের দুবলার ফিসার ম্যান গ্র“পের হিসাব মতে প্রতি বছর বনদস্যুরা প্রায় ২লাশ জেলে বাওয়ালীদের কাছ থেকে মুক্তিপনের দাবীতে আদায় করছে ৫০ কোটি টাকা। আর মুক্তিপণ না পেলে বনদস্যুদের হাতে প্রান হারাতে হচ্ছে অসংখ্য জেলে-বনজীবীদের।

আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, সুন্দরবন বিভাগ ও জেলে-বাওয়ালীদের কাছ থেকে জানাগেছে, পূর্ব ও পশ্চিম সুন্দরবনের ৪টি রেঞ্জে বর্তমানে ১৬ টি বনদস্যু বাহিনী সক্রিয় রয়েছে। বাহিনীগুলো হলো, আমজাদ বাহিনী, ফরহাদ বাহিনী, শহিদুল বাহিনী, জাহাঙ্গীর বাহিনী, জাকির বাহিনী, রুবেল বাহিনী, বাকিবিল্লাহ বাহিনী, মুর্তজা বাহিনী, আনোয়ার বাহিনী, মাহবুব বাহিনী, তছলিম বাহিনী, নাসির বাহিনী, জিহাদ বাহিনী, জুলফিকার আলী গামা বাহিনী, দুই ভাই বাহিনী ও রেজাউল ওরফে শীর্ষ বাহিনী। সুন্দরবনে বনদস্যুদের মধ্যে বর্তমানে ৬টি বাহিনী বেশি শন্তিশালী অবস্থানে রযেছে। এ বাহিনীগুলোর মধ্যে বাগেরহাটের চাঁদপাই রেঞ্জ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে মুর্তজা বাহিনী ও শরণখোলা রেঞ্জ অঞ্চল নিয়ন্ত্রন করে রেজাউল ওরফে শীর্ষ বাহিনী। সাতক্ষীরা রেঞ্জের উত্তর দিক নিয়ন্ত্রণ করে আমজাদ বাহিনী ও দক্ষিণ দিক নিয়ন্ত্রণ করছে জাকির বাহিনী। খুলনা রেঞ্জের উত্তর এবং দক্ষিণ পাশ নিয়ন্ত্রণ করে মাহবুব বাহিনী ও জাহাঙ্গীর বাহিনী। তবে আইনশৃংখলা রক্ষা বাহিনীর তথ্যানুযায়ী, সুন্দরবনে অর্ধশতাধিক সদস্য, দেশি-বিদেশী অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী শীর্ষ বাহিনী ও জাহাঙ্গীর বাহিনী। এ বাহিনীর সবচেয়ে বেশি তৎপরতা দেখা যায় বাগেরহাট ও খুলনা অঞ্চলে। এদের চাঁদা না দিলে সুন্দরবনে জেলেদের মাছ ও গোলপাতা সংগ্রহ করতে দেওয়া হয় না।


সুন্দরবনের বাঘ উপকূলবাসীর কাছে বনাঞ্চলের রক্ষাকবজ হিসেবে পরিচিত থাকলেও বর্তমানে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের কাছে বাঘ আতঙ্ক এখন গৌন হয়ে পড়েছে। বর্তমানে মূর্তিমান আতঙ্ক হিসাবে দেখা দিয়েছে বনদস্যু বাহিনী গুলো। সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগর এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে ওঠা দস্যুদের হামলা, লুটপাট, অপহরণে এখন অতিষ্ঠ পুরো দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকা।

গত ৩ বছরে র‌্যাব ও কোস্টগার্ডের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এসব বাহিনীর অন্তত ৯ জন বনদস্যু বাহিনী প্রধানসহ ১৮ জন বনদস্যু আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে মারা গেলেও থামেনি দস্যুতা। পরে ওই সব বাহিনীর সেকেন্ডইন কমান্ডাররা পূনরায় বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তাদের নামে বাহিনী গড়ে পুরোদমে জেলে অপহরনসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে যেতে থাকে। এ কারনে কমছেনা সুন্দরবনের দস্যু বৃত্তি।

সুন্দরবনের দুবলা ফিসার ম্যান গ্র“পের চেয়ারম্যান ও মুক্তিযুদ্ধ কালিন সুন্দরবন অঞ্চলের সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর (অবঃ) জিয়াউদ্দিন জানান, তার কাছে তথ্য রয়েছে কয়েকটি বনদস্যু বাহিনী মৌলবাদি ও চরমপন্থীদের সাথে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। রাজনৈতিক পৃষ্টপোষকতায় থাকা এসব বনদস্যু বাহিনী গুলোর গটফাদারদের চিহ্নত করে আইনের আওতায় না আনা গেলে সুন্দরবনের দস্যু বৃত্তি কখনই বন্ধ হবে না।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম জানান, সুন্দরবনরে বনরক্ষিদের চেয়ে বনদস্যুদের রয়েছে অত্যাধুনিক অস্ত্র ও শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। এছাড়া সুন্দরবন বিভাগের পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় বনদস্যুদের দমন করা সম্ভব হচ্ছে না।

উপকূল মস্যৎজীবী সমিতির সভাপতি মো. ইদ্রিস আলী জানান, প্রতিনিয়ত বিভিন্ন এলাকা কেন্দ্রিক দস্যুদের চাঁদা দিয়েই মাছ ধরতে যেতে হচ্ছে জেলেদের। আর চাঁদা দিতে অপারগ হলে মুক্তিপণের জন্য তাদের অপহরণ করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, গত ৩ বছরে বিভিন্ন দস্যু বাজিনীর হাতে নিহত হয়েছে প্রায় ২শ জেলে। আর এসব বাহিনীর হাতে প্রতিবছর গড়ে অপহৃত হয় ১ হাজার জেলে-বানজীবী। অপহৃতদের বেশির ভাগই মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মুক্তি পান।

(এসএকে/পি/মার্চ ০৩,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test