E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মংলা বন্দরে শুল্ক ফাঁকি বাড়ছে ,জড়িত কাষ্টম কর্মকর্তারা

২০১৬ মার্চ ০৬ ১৭:৪৪:০৮
মংলা বন্দরে শুল্ক ফাঁকি বাড়ছে ,জড়িত কাষ্টম কর্মকর্তারা

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট :ইমেজ সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাড়ানো মংলা বন্দরে শুল্ক ফাঁকি, ঘোষনার অতিরিক্ত পন্য আমদানী, জাল কাগজ তৈরী করে পন্য খালাশ, কন্টেইনার থেকে পন্য চুরি ঘটনা নিত্য নৈমিত্তিক হয়ে পড়েছে। মংলা কাষ্টম হাউস কমিশনার ঘটনা সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছেন। দাবী করেছেন, কাজের স্বচ্ছতা ফিরে আনার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

মংলা কাষ্টম হাউস সূত্রে জানাগেছে, গত ১১ জানুয়ারী মাসে ঢাকার জিগাতলার আমদানী কারক খান এন্টারন্যাশনাল ৪০ ফুটের ৫টি কন্টেইনার বোঝাই বিভিন্ন পন্য আমদানী করে। ওই পন্য প্রথামিক পরীক্ষা করে ঘোষনার বাইরে চারটি কন্টেইনারে প্রায় ২ মেট্রিক টন অতিরিক্ত পন্যের সন্ধান মেলে। এই আমদানী কারকের নিযুক্ত মেসার্স বি,এন,বি শিপিং এন্ড ট্রেডিং লি: নামের সিএন্ড এফ প্রভাবশালী হওয়াই শুল্ক বিভাগের উপর প্রভাব বিস্তাার করে দ্রুত শুল্কায়ন করে ১৬ লাখ ২১ হাজার ৭৪৮দশমিক ৬৮ টাকা কর নির্ধারন করা হয়। এই শুল্কায়নে সহকারী কমিশনার ( জেটি পরীক্ষণ) রজস্ব কর্মকর্তা যৌথ তত্তাবধানে এই কায়িক পরীক্ষা করে কম শুল্কায়ন করে। কন্টেইনারগুলি বন্দর থেকে বের হবার মুহুর্তে জতীয় রাজম্ব বোর্ডের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দল চালনটি আটক করে গত ২৭ জানুয়ারী। পরে আবার পুন পরীক্ষায়ন করে নতুন করে শুল্ক ধার্ষ করে হয় ২৩ লাখ ২১ হাজার ৭৪৮ দশমিক ৬৮ টাকা। শুল্ক ফাকি, ওজনের তারতম্য নানা অনিয়ম চিহ্নিত হলে আমদানীকারককে ব্যক্তিগত জরিমানা করা হয়। একই ভাবে ঢাকার বিসমিল¬াহ ইন্টারন্যাশনাল ৫ কন্টেইনার বিভিন্ন পন্য একই সিএন্ড এফ এজেন্ট ছাড় করে নেবার মুহুর্তে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আটক করে পুন: কায়িক পরীক্ষা চালায়। এখানেও অসাধু শুল্ক কর্মকর্তা আর সিএন্ড এফ এজেন্ট মিলে ১৫ লাখ ৬২ হাজার ৬৩ দশমিক ১৮ টাকা রাজস্ব ক্ষতির চিহ্নিত করা হয়। খুলনার একটি বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্টান গত বছর ঘোষনার অতিরিক্ত ৩১ হাজার টন পন্য আমদানী করে। পরে তারা পরে জরিমানা সহ ৪ কোটি টাকা বেশী কর দিয়ে পন্যা খালাস করে।

সূত্র আরও জানায়, ঢাকার রিও ট্রেড হাউস, মার্কেন্টাইল ব্যাংকে ২ ইউনিট গাড়ী আমদানীর জন্য এলসি খোলে। এই গাড়ী মংলা বন্দরে আসার পর তা খালাসের জন্য সিএন্ড এফ এজেন্ট ল্য়ালা ট্রেডিং কো: দায়িত্ব দেয়া হয়। এই গাড়ীর বিপরীতে ২৯ লাখ ৭৪ হাজার ১৭৩ দশমিক ৮০ টাকা ট্যাক্স ধার্ষ করা হয়। পরবর্তীতে এই টাকা ব্যাংকে জমার জাল জালিয়াতির রশিদ তৈরী করে সিএন্ড এফ এজেন্ট গাড়ী বন্দর থেকে খালাস করে নিয়ে যায় । গত বছর ২৮ আগষ্ট তদন্ত প্রতিবেদনে বিষয়টি ধরা পড়ে। সি এন্ড এফ এজেন্ট লায়লা ট্রেডিং কো. প্রথমে বিষয়টি আমদানী কারকের দায়িত্ব বলে এড়িয়ে যান। পরে গেট পাসে সি এন্ড এফ এজেন্টের প্রতিনিধির স্বাক্ষর সনাক্তর পর ফাকি দেয়া কর পুনরায় জমা দেবার অঙ্গীকার করে। কিন্তু দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও বিষয়টির আজও ওই রাজস্ব আদায় হয়নি। একই সময় একই আমদানীকারক ও একই সিএনএফ এজেন্ট ৩টি গাড়ী আমদানী করে মোট ৩৩লাখ ৮৩ হাজার ৯৩৭ টাকা জমার জাল জালিয়াতির রশিদ তৈরী করে বন্দর থেকে গাড়ী ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে সিএন্ড এফ এজেন্ট আমদানী কারকের ভুল স্বীকার করে রাজস্ব জমা দেবার অঙ্গিকার করেন। এ ব্যাপারে সিএন্ড এফ এজেন্ট ও আমদানী কারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মংলা কাষ্টম হাউস দুর্নীতি দমন কমিশনে চিঠি দেয়। ইতি পূর্বে একটি বিএমডাবলিউ গাড়ীর মংলা বন্দরে আমদানী করে রজস্ব জমার জাল জালিয়াতি করে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা ফাকি দিয়ে গাড়ী নিয়ে যায়। পরে ঢাকার বিআরটিএতে গাড়ীর রেজিষ্টেন করার জন্য কাগজ পত্র জমা দেয় । ঢাকা বিআরটিএ যেহেতু ২কোটি টাকার উপর রাজস্ব আদায় হয়েছে, তাই যাচাই করতে মংলা কাষ্টম হাউসকে চিঠি পাঠালে তখনই সনাক্ত করা হয় ব্যাংকে টাকা জমা দেবার কাগজ পত্র জাল জালিয়াতির বিষয়টি। বিআরটিএর সূত্র ধরে মংলা কাষ্টম হাউস এই জালিয়াতির ঘটনায় ঢাকার কাফরুল থানায় এজাহার করে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও সেই মামলার কোন আসামী ধরা পড়েনি, আদায় করা যায়নি এই রাজস্ব টাকা।

মংলা কাষ্টস হাউজের কমিশনার ড. মোহা. আল আমিন প্রামানিক উলে¬খিত রাজস্ব ফাকি এবং ঘোষনার অতিরিক্ত পন্য আমদানীর কথা ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি জানান কায়িক পরীক্ষার টিমের তিন সদস্যকে শো-কস নোটিশ দেয়া হয়েছে। সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. পারভেজ রেজা, মুনসুর রহমান সহ তিন জনের কর্তব্য অবহেলা এবং রাজস্ব ফাকির সহয়তার জন্য শান্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে এই কাষ্টস কমিশনার দাবী করেন, মংলা কাষ্টস হাউজ চলতি বছর ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত দুই হাজার ছয় শত ৫৫ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। সকল কাজের স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে সর্বাত্ব প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে। দুর্নীতি আগের চেয়ে কমেছে বিধায় তাদের রাজস্ব আদায় ৩৮% বৃদ্ধি পেয়েছে , অথচ একই সময় আমদানী বৃদ্ধি পেয়েছে ২৬% । শুল্ক ফাকি দিয়ে পন্য ছাড়ানোর পর আমদানী কারকের কাছে এবছর মোট ৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে। যা মংলা কাষ্টম হাউসের রেকর্ড। তিনি জানান অভিযুক্ত রাজস্ব ফাকির ঘটনায় জড়িত সিএন্ড এফ এজেন্টকে কালো তালিকা বা লাইসেন্স বাতিল করা যায় কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

(এসএকে/এস/ফেব্রুয়ারি০৬,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test