E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরায়  চর দখল করে চলছে আহলে হাদিস মসজিদের ভবন নির্মাণের কাজ

২০১৬ মার্চ ১৪ ১৪:৫২:৫৪
সাতক্ষীরায়  চর দখল করে চলছে আহলে হাদিস মসজিদের ভবন নির্মাণের কাজ

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি :  জেলা প্রশাসন ও পৌর প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জেলা পরিষদের এক কর্মকর্তার মদতে সাতক্ষীরা শহরের কাছারিপাড়া এলাকার প্রাণসায়ের খালের চর দখল করে আহলে হাদিস জামে মসজিদের বর্ধিত ভবন নির্মাণের কাজ করার অভিযোগ উঠেছে। মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদককে গ্রেফতার করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দিলেও অব্যহত রয়েছে নির্মাণ কাজ।

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির অন্যতম সদস্য অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু জানান, ১৯৮৫ সালে সাতক্ষীরা শহরের কাছারিপাড়ায় সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের নিকটবর্তী এলাকায় ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি দোকানের জায়গার সঙ্গে প্রাণসায়ের খালের চরভরাটি কিছু অংশে নির্মিত হয় আহলে হাদিস জামে মসজিদ। এ সময় ওই মসজিদ নির্মাণে সহযোগিতা করেন তৎকালিন পুলিশ সুপার রুহুল আমিন। পরবর্তীতে সড়ক ও জনপথের জায়গার উপর নির্মাণ করা হয় বারান্দা ও অযুখানা। ওয়ান ইলাভেনে শহর জুড়ে ফুটপাত দখলমুক্ত করা হলেও এ মসজিদের বারান্দা থেকে যায় অক্ষত।

তিনি আরো জানান, গত ১৫ ফ্রেব্রুয়ারি থেকে আহলে হাদিস জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির লোকজন প্রাণসায়ের খালের কিছু চরভরাটি জায়গা দখল করে মসজিদের বর্ধিত ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন। এ নিয়ে অভিযোগ ওঠায় পৌরসভার নবনিযুক্ত মেয়র তাসকিন আহম্মেদ চিশতি নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার জন্য মসজিদ কর্তৃপক্ষকে বারবার অনুরোধ করেন। কাজ বন্ধ না করায় তিনি বিষয়টি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সদর সহকারি ভূমি কমিশনারকে অবহিত করেন। নোটিশ করে বন্ধ না হওয়ায় সহকারি ভূমি কমিশনার মনিরা বেগম গত ২৪ ফেব্রুয়ারি মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহরের কাটিয়া লস্করপাড়ার গাজী মোজাহার আলীর ছেলে গাজী আবুল কাশেমকে(৪৫) গ্রেফতার করেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে গ্রেফতারকৃতকে ২০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এরপরও থেমে থাকেনি বর্ধিত ভবন নির্মাণের কাজ। এ নিয়ে তারা শনিবার রাত ৮টায় সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির জরুরী সভা ডাকেন। সভায় বিষয়টি নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রচারের পাশাপাশি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ অবৈধ নির্মাণাধীন কাজ ভেঙে না ফেলা হলে আগামিতে সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রাণসায়ের খাল খননের কাজ ব্যহত হবে। এতে বর্ষাকালে প্রাণসায়র খালের পানি নদীতে পড়তে না পেরে দু’তীর উপচে শহরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হবে।

সরেজমিনে রোববার সকাল ৮টার দিকে আহলে হাদিস জামে মসজিদের পিছনে প্রাণসায়র খালের পাশে যেয়ে দেখা গেছে জনগণের নজর এড়ানোর জন্য টিন ও সিমেন্টের বস্তা টানিয়ে নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে। বিকেলে শেষ করা হয়েছে ছাদ ঢালাই এর কাজ। পাশে মজুদ রাখা হয়েছে নির্মাণ সামগ্রী। ছবি তুলতে গেলেই কর্মরত দু’ শ্রমিক ও একজন তদারককারি মুখ ঘুরিয়ে নেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের কয়েকজন সমাজ কর্মী জানান, জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে আহলে হাদিস জামে মসজিদের ভবন বাড়ানোর জন্য দু’ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ি জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মোঃ মনিরুজ্জামানের পরোক্ষ সহায়তায় জেলা প্রশাসন ও পৌর প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নির্মাণ কাজ অব্যহত রয়েছে।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা পৌর মেয়র তাসকিন আহম্মেদ চিশতি জানান, প্রাণসায়ের খাল দখল করে আহলে হাদিস জামে মসজিদের বর্ধিত ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ করার জন্য তিনি লোক পাঠিয়ে ও নিজে যেয়ে মসজিদ কর্তৃপক্ষকে নিষেধ করেছেন। সকল চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় দখল হওয়া জায়গাটি জেলা প্রশাসকের অধীনে হওয়ায় তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সদর সহকারি ভূমি কমিশনারকে অবহিত করেন। এরপরও কাজ অব্যহত রয়েছে।

এ ব্যাপারে আহলে হাদিস জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক গাজী আবুল কাশেমের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

সাতক্ষীরা সদর সহকারি ভূমি কমিশনার মনিরা বেগম জানান, প্রাণসায়ের খাল দখল করে মসজিদের বর্ধিত ভবন নির্মাণের কাজ করায় তিনি বিষয়টি মসজিদ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। তাদেরকে কাজ বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দেন। নির্দেশ না মানায় গত ২৪ ফেব্রুয়ারি মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক গাজী আবুল কাশেমকে গ্রেফতার করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ২০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। এরপরও অদৃশ্য কোন শক্তির মদতে নির্মাণ কাজ অব্যহত রয়েছে।

এক্ষেত্রে প্রশাসন অসহায় হয়ে পড়েছে বলে আক্ষেপ করেন তিনি। তিনি এ কাজ বন্ধের জন্য সাংবাদিকদের লেখনীর মাধ্যমে ভূমিকা রাখার আহবান জানান।


সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মোঃ মনিরুজ্জামান সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে না বলে ব্যক্তি হিসেবে কথা বলছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, কাছারিপাড়া আহলে হাদিস জামে মসজিদের পিছনের অংশ ধ্বসে যাচ্ছে মর্মে জেলা পরিষদকে অবহিত করা হয়। এজন্য সাপোর্টিং পিলার, দোতলায় শৌচাগার ও মহিলাদের নামাজের স্থান বর্ধিত করার জন্য দু’ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। নীচে কোন ঘর নির্মাণ করা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই জায়গা আদৌ প্রাণসায়ের খালের নয়। বিষয়টি ঘটনাস্থলে যেয়ে দেখার জন্য আহবান করে তিনি বলেন, মসজিদের বর্ধিত অংশ নির্মাণের ব্যাপারে তার কোন ইন্ধন নেই। তবে ধর্মীয় বিষয় তাই একজন ব্যক্তি হিসেবে মসজিদ রক্ষা ও বাড়তি অংশ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন তিনি।


(আরএনকে/এস/মার্চ১৪,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test