E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাপ ও সাপুড়িয়ার যুদ্ধক্ষেত্র এখনও আগের মতোই আছে

২০১৬ মার্চ ১৮ ১৭:৪০:০৮
সাপ ও সাপুড়িয়ার যুদ্ধক্ষেত্র এখনও আগের মতোই আছে

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) থেকে মিলন কর্মকার রাজু : উনিশ শতকের শুরুর ঘটনা। কিন্তু এখনও আব্দুল আলী গাড়ুলিয়া ও বিশাল সাপের লড়াইয়ের সময় সৃষ্ট গর্ত সেই অবস্থায় রয়েছে। মানুষ সেই গর্তকে সম্মান করে আসছে যুগের পর যুগ ধরে।

প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্টি দুর্যোগে প্রকৃতি, আবাদি জমি ও জঙ্গল উজাড় হয়েছে। কিন্তু কলাপাড়ার ধুলাসার ইউনিয়নের বৌলতলী গ্রামের সাপ ও সাপুড়িয়ার যুদ্ধক্ষেত্র এখনও সেই অবস্থায়ই রয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি এই স্থান সংরক্ষণ করা হোক।

বৌলতলী রাখাইন পাড়ায় প্রবেশ পথে এখনও রয়েছে শত বছরের পুরনো রাখাইন কবরস্থান। এই কবরস্থান ঘিরে ছিলে ১৬টি বিশাল বাঁশের বাগান (ঝাঁড়)। রাখাইন অধ্যুষিত এই পাড়ায় রাখাইনদের মৃত্যুর পর এই বাঁশ বাগানের পাশেই সমাহিত করা হতো। তাই দিনের আলোতেও ওই স্থানে মানুষের চলাচল ছিলো না।

বৌলতলী পাড়ার বয়োবৃদ্ধ অংচিংচি কবিরাজ (৭৩) জানালেন, একদিন ভোর রাতে পাঁচ কৃষক ধান কাটতে ওই বাঁশ ঝাড়ের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখতে পায় বিশাল ওই সাপটি। ১৬টি বাঁশ ঝাড় পেঁচানো ছিল সাপটি। তারা বাঁশ ঝাড়ের কাছে ফোঁস ফোঁস শব্দ শুনে কাছে গিয়ে দেখতে পায় এই দৃশ্য। সাপটি লম্বায় নাকি ছিলো প্রায় ৪০ হাত। এ খবর পেয়ে আব্দুল আলী গাড়ুলিয়া ওই সাপ ধরতে বাঁশ ঝাড়ের কাছে আসে। মন্ত্র বলে বিশাল সাপটি ধরার চেষ্টা করে সে। কিন্তু হঠাৎ গাড়ুলিয়াকে মুখে নিয়ে বাঁশের ঝাড়ের উপর উঠে যায় সাপটি। এ দৃশ্য দেখে তার সঙ্গীরা পালিয়ে যায়। কিন্তু স্বামীকে বাঁচাতে তার স্ত্রী বাঁশ ঝাড়ের নিচে বসে মন্ত্র পাঠ শুরু করে। বাঁশ ঝাড়ের উপরে চলে সাপ ও সাপুড়িয়ার যুদ্ধ। সাপটি তখনও গাড়ুলিয়াকে মুখে নিয়ে বাঁশের ঝাড়ের উপর ছিলো।

দিন শেষে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেও সাপুড়িয়াকে মুখে নিয়ে বাঁশের ঝাড়ের উপড়ে ছিলো সাপটি। একপর্যায়ে বিশাল সাপটি গাড়ুলিয়াকে মুখে নেয়া অবস্থায় বাঁশ ঝাড়ের উপর থেকে নিচে পড়ে যায়। সাপটি নিচে পড়ায় ওই স্থানে তৈরি হয় বিশাল এক গর্ত। পরবর্তীতে গাড়ুলিয়ার অন্য সঙ্গীরা সাপটিকে ধরতে সক্ষম হয়।

তিনি জানান, আব্দুল আলী গাড়ুড়িয়া ছিলো সেই সময়ের আলোচিত সাপুড়ে। মেঘনার পাড়ে থাকতো আব্দুল আলী গাডুলিয়ার বংশধররা। তারা নৌকায় করে দেশের এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতো এবং সাপ ধরতো ও সাপের খেলা দেখাতো। তাকে নিয়ে রয়েছে একাধিক লোকগল্প ও কবিতা। উপকূলের মানুষ এখনও বিশ্বাস করে সেই সাপ ও সাপুড়িয়ার গল্পকথা।

অংচিংচ কবিরাজ আরও জানান, সেদিন রাতে সেই সাপটিকে ধরার পর সাপুড়িয়ার দল নৌকায় করে সাপটিকে মুন্সীগঞ্জ নিয়ে যায়। সেখানে গাড়ুলিয়ার জীবন বেঁচে যাওয়ায় মনষা পূজা করার পর ৬ দাঁতের একটি মহিষ সাপটিকে উৎসর্গ করা হয়। সাপটি মহিষটি খেয়ে আবার চলে আসে। কিন্তু এরপর সাপটি এলাকার কোন মানুষকে ক্ষতি করেনি। তবে রাত হলেই ৪-৫ কিলোমিটার থেকেও সাপের ফোঁস ফোঁস শব্দ শোনা যেত। কিন্তু তাকে আর কেউ চোখে দেখেনি। এরপর থেকে ওই স্থানে আর কেউ যায় না।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, যেখানে বাঁশ বাগান ছিলো সেখানে এখন আর বাঁশের ঝাড় না থাকলেও রয়ে গেছে শত বছরের পুরনো রাখাইনদের শ্মশান। ওই শ্মশানের চারিদিক ভরাট হয়ে গেলেও এখনও ৪/৫ ফুট গর্তটি রয়ে গেছে। এই গর্তটি আগেও আরও বড় ছিলো।

বৌলতলী পাড়ার মো. শহীদ জানায়, গাড়ুলিয়া ও সাপের কাহিনী তারাও শুনেছেন। তিনি বলেন, তবে একটি বিষয় খুবই আশ্চর্যের যে, যেখানে সাপটি গাড়ুলিয়াকে নিয়ে পড়েছিলো সেই গর্ত এখনও আছে। ওই গর্তের পাশে মাটি কেটে রাস্তা বাঁধা হয়েছিলো। আশেপাশের সব গর্ত ভরে গেছে কিন্তু ওই গর্ত সেভাবেই আছে। যা তাদের বিস্মিত করেছে। একই কথা বলেন এলাকার শতশত মানুষ।

আব্দুল আলী গাড়ুলিয়াকে নিয়ে অনেক কল্প কাহিনী লোকমুখে শোনা গেলেও এখনও তার বংশধরদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে এলাকার প্রবীন মানুষ এখনও বিশ্বাস করে সেই রাতের কথা, যেদিন গাড়ুলিয়াকে মুখে নিয়ে বিশাল সাপটি ১৬ টি বাঁশের ঝাঁড় পেঁচিয়ে উপরে ওঠে এবং মন্ত্র বলে আবার সাপুড়িয়াকে নিয়ে নিচে পড়ে যাওয়ার কথা।

(এমকেআর/এএস/মার্চ ১৮, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test