E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরায় ইউপি নির্বাচনের হালচাল

২০১৬ মার্চ ১৯ ২০:২৯:৫৩
সাতক্ষীরায় ইউপি নির্বাচনের হালচাল

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন জমার সময় পথে পথে যেভাবে বাধার সৃষ্টি হয়েছিল ঠিক একইভাবে শেষ মুহুর্তে এসে জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে সংঘাত , সংঘর্ষ। এসব সংঘাতে সরকার দলীয় প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বীদের অফিস ভাংচুর করে ও নির্বাচনী অফিসে আগুন দিয়ে ভোটে জয়ের পথের কাঁটা সরাতে চাইছেন। অভিযোগ উঠেছে যারাই এসব ঘটনার নায়ক তারাই আবার পুলিশের সাথে থেকে প্রতিপক্ষের বিদ্রোহী আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী এবং বিএনপির প্রার্থীদের  নাজেহাল করছেন।

এ সব নেতিবাচক দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করে জেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন ‘ ভোটের দিনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীরা তাদের মাঠ পরিস্কার রাখতে চায় । এই সুযোগে তারা মাঠে এককভাবে গোল দেওয়ার মেকানিজম শুরু করেছে। আর এর সহযোগিতায় রয়েছে পুলিশ । তবে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এমন ধরনের সংঘাত সংঘর্ষ এড়িয়ে সুষ্ঠু ,অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোট নিশ্চিত করার ওপর তাগিদ ও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে’।

আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী খালিদুর রহমান বাবু জানান শুক্রবার রাত ১০টার দিকে তার এলাকার নয়টি নির্বাচনী অফিসে ভাংচুর চালিয়ে আগুন দিয়েছে প্রার্থী শেখ জাকির হোসেন ও তার সহযোগীরা।

তিনি বলেন, জাকির চাকলা গ্রামে নির্বাচনী মিটিংয়ে লোক না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন। তিনি কোনো কোনো স্থানে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে অথবা তার সমর্থকদের দিয়ে আনারস প্রতীকধারী প্রার্থীর নির্বাচনী অফিসে আগুন ধরিয়ে দিয়ে উল্লাস করেছেন। চাকলা, শুভদ্রাকাটি, রুইয়ের বিল, প্রতাপনগর, তালতলা, দীঘলারাইটসহ বিভিন্ন স্থানে এই কান্ড ঘটিয়ে সেখানে বোমাবাজি করে আতংক সৃষ্টি করেছেন তিনি ও তার লোকজন। তারা কর্মকারপাড়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ অফিসটিও ভাংচুর করেছেন। ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে ইউপি সদস্য আব্দুল মজিত ও শাহীনুর রহমানের পোষ্টার ও ব্যানার। মারপিট করা হয়েছে তার (বাবু) চাচা বিপুল তরফদারকে। এসবের পরও জাকিরের প্রভাবে পুলিশ ম্যানেজড হয়ে কল্যাণপুর এমএইচ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াউল হায়দার পলাশকে তুলে নিয়ে গেছে।

অন্যদিকে রাতে যারা আনারসের নির্বাচনী অফিসে আগুন দিয়েছে ও বোমা মেরে সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে তাদের সাথে নিয়ে পুলিশ প্রতাপনগর এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এরা হলেন আনারুল, রিপন, আবুল কালাম, বারী , আবুল হোসেন প্রমুখ।

এদিকে শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাড়ির সকলে নির্বাচনী শো- ডাউনে আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা রুহুল কুদ্দুসের বাড়ি ভাংচুর করেছে একাত্তরের কুখ্যাত রাজাকার পুত্র শাহনেওয়াজ ডালিম ও তার লোকজন। ডালিম আশাশুনি উপজেলা চেয়ারম্যান ও দলের সভাপতি এবিএম মোস্তাকিমের ঘনিষ্টজন। সেই দাপট দেখিয়ে ডালিম ও তার বাহিনী রুহুল কুদ্দুসের বাড়ি ভাংচুর করেছে।

অপরদিকে উপজেলার বুধহাটা ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপি দলীয়প্রার্থী আব্দুল হান্নান অভিযোগ করে বলেন, তার ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন মোস্তাকিমের ভাই আনম মোছাদ্দেক। তিনি শুক্রবার রাতে বুধহাটায় এক কল্পিত ঘটনার জন্ম দিয়ে প্রচার করেছেন যে তিনি সমাবেশ শেষে ফেরার পথে তাকে লক্ষ্য করে কে বা কারা বোমা নিক্ষেপ করেছে। তবে তিনি অক্ষত রয়েছেন বলে প্রচারও দিয়েছেন।

এ বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান এখানে এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। নির্বাচনের আগে বিএনপি দলীয় প্রার্থী আব্দুল হান্নান ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে একটি ভুয়া মামলা করে তাদেরকে হয়রানি করার পাঁয়তারা করছেন মোছাদ্দেক। গত ২০১১ সালের নির্বাচনের আগে একইভাবে আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে একটি মামলা দিয়ে নাজেহাল করা হয়োিছল। এবারও একই কৌশল অবলম্বন করেছে তারা। এসব ঘটনায় আশাশুনি থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীরা। এসব মামলায় বহু সংখ্যক আসামি করে তাদেরকে প্রচার থেকে সরিয়ে দেওয়ার অপকৌশলও অবলম্বন করেছেন আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীরা এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর।

এদিকে কালীগঞ্জের কৃষ্ণনগরে শনিবার দুপুর ১২টার দিকে বৃষ্টির মধ্যে এক নাটকীয় ঘটনা ঘটেছে।

সেখানে আওয়ামী লীগ দলীয়প্রার্থী মোস্তফা কবিরুজ্জামান মন্টু জানান ,তার নির্বাচনী অফিসের পেছনে তিন চারজন মুখোশধারী লোক এসে পরপর কয়েকটি বোমা ফাটিয়ে চলে যায়। এসময় তাদের হাতে ছিল ধারালো দা। কালীগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মতিয়ার রহমান জানান ‘ আমি ও এসি ল্যান্ড ঘটনাস্থলে পৌছে দেখতে পাই বোমার আঘাতের দুটি গর্ত’। কবিরুজ্জামান মন্টুর বারাত দিয়ে তিনি আরও বলেন এ ঘটনার আগে জাতীয় পার্টির একটি মিছিল যায়। এর কয়েক মিনিট পর দুটি মোটর সাইকেলে এসে পর পর দুটি বোমা মারা হয়। তিনি বলেন এর সাথে কারা জড়িত তা নিশ্চিত নয় , তবে অভিযোগ জাপা দলীয় প্রার্থী কেএম মোশাররফ হোসেনের দিকে। তিনি জানান রাতে এ বিষয়ে মামলা হবার কথা রয়েছে। তবে অন্য প্রার্থীরা বলছেন কবিরুজ্জামান তার লোকজন দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন । নির্বাচনে নিজর পরাজয় সুনিশ্চিত জেনে তিনি এই অপকৌশল অবলম্বন করেছেন বলে জানান তারা।



(আরএনকে/এস/মার্চ১৯,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test