E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সুন্দরবনে কয়লাবাহী জাহাজ ডুবি :চব্বিশ ঘন্টায়ও শুরু হয়নি উদ্ধার অভিযান

২০১৬ মার্চ ২০ ১৯:৫৯:৫৬
সুন্দরবনে কয়লাবাহী জাহাজ ডুবি :চব্বিশ ঘন্টায়ও শুরু হয়নি উদ্ধার অভিযান

শেখ আহসানুল করিম, সুন্দরবন থেকে :বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনে ‘ডলফিনের অভয়াশ্রমে’ শ্যালা নদীতে এবার তলাফেটে ডুবে যাওয়া কয়লা বোঝাই লাইটারেজ জাহাজটিকে রবিবার সকালে ৩০ ফুট পানির গভীরে শনাক্ত করছে মংলা বন্দরের ডুবুরি দল।

ডুবুরিরা বলছে, তলাফেটে একপার্শ্বে কাত হয়ে ডুবে থাকার কারনে বিপুল পরিমাণে কয়লা শ্যালা নদীতে পড়েগেছে।

মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চীফ হাইড্রোগ্রাফার ফারুকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে জানান, কার্গো জাহাজটি বর্তমানে ৩০ ফুট পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। তবে ডুবন্ত জাহাজটির অবস্থান নির্ণয় করে সেখানে মার্কিংয়ের ব্যবস্থা করেছে বিআইডব্লিউটিএ ও সুন্দরবন বিভাগ।

রবিবার সকালে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ, মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, বিআইডাবলুটিএ, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা দূর্ঘটনাস্থল পরির্দশন করলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত শুরু হয়নি জাহাজটির উদ্ধার অভিযান। । তবে কবে নাগাদ উদ্ধার কাজ শুরু করা হবে তা নিশ্চিত বলতে পারেনি বিআইডব্লিইটিএর খুলনার উপ-পরিচালক মো. আশরাফ হোসেন।

এমভি ‘সী হর্স-ওয়ান’ নামের এই লাইটারেজ জাহাজ ডুবির কারন ও ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ এই বনের ডলফিননহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারনে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কমিটির প্রধান শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) কামাল উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে রবিবার দুপুরে কমিটির অপর তিন সদস্য পূর্ব বিভাগের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্মকর্তা মেহেদী হাসান, চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা রেঞ্জার গাজী মতিয়ার রহমান ও ঢাংমারী ষ্টেশন কর্মকর্তা সুলতান আহমেদকে সাথে নিয়ে সরেজমিনে তদন্ত কাজ শুরু করেছে। তাদের এই তদন্ত রির্পোট সোমবার সন্ধ্যার মধ্যে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাছে দাখিল করতে বলা হয়েছে। এঘটনায় ডুবে যাওয়া জাহাজটির মাষ্টার ও মালিককে আসামী করে ক্ষতিপূরণ মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুন্দরবন বিভাগ।

সুন্দরবনে শনিবার সন্ধ্যায় ১২শত ৩৫ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে সর্বশেষ এই লাইটারেজ জাহাজ ডুবির ঘটনায় এবার টনক নড়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের।

রবিবার দুপুরে সচিবালয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সর্বশেষ এই জাহাজ ডুবির পর সুন্দরবনের শ্যালা নদী দিয়ে সব ধরনের ছোট-বড় জাহাজ চলাচল বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রী এখন থেকে সুন্দরবনের শ্যালা নৌরুটের পরিবর্তে ছোট-বড় সব ধরনের গভীরতার জাহাজ মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল দিয়ে চলাচল করাতে বিআইডাবলুটিএর চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন।

রবিবার দিনভর সরেজমিনে সুন্দরবনের শ্যালা নদীর জাহাজ ডুবির কলামুলা দূর্ঘটনাস্থলসহ এই নৌরুটের চাঁদপাই, জয়মনিরঘোল,মৃগ্নমারী, আন্ধারমানিক, নন্দবালা, হরিণটান, তাম্বুলবুনিয়ার বিশাল এলাকায় নৌযানে ঘুরে দেখা মেলেনি কোন ডলফিনের।

সুন্দরবন বিভাগের কর্মকর্তা, বনরক্ষীরা জানিয়েছেন, এই কয়লা বোঝাই লাইটারেজ জাহাজ ডুবিতে পানি দূষনের ফলে অভয়াশ্রমে ডলফিনগুলো বঙ্গোপসাগর উপকূলে সরে যেয়ে থাকতে পারে। এর আগে ২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে ডুবে যায় ফার্নেস ওয়েল বোঝাই ট্যাংকার ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ ডুবির পর ডলফিনগুলো সুন্দরবনের বঙ্গোপসাগর উপকূলে আশ্রয় নিয়েছিলো।

পূর্ব সুন্দনবনের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্মকর্তা মেহেদী হাসান জানান, শ্যালা নদীসহ এই বনের অভয়াশ্রমে সুন্দরবনে বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতী ডলফিনসহ ৬ প্রজাতির সাড়ে ৬ শতাধিক ডলফিন রয়েছে। শ্যালা নদীতে এবার কয়লা বোঝাই লাইটারেজ জাহাজ ডুবির ফলে আবারও সংকটে পড়েছে ডলফিনসহ ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সুন্দরবন।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) সাইদুল ইসলাম দুপুরে দূর্ঘটনাস্থলে দাড়িয়ে সাংবাদিকদের জানান, এই লাইটারেজ জাহাজটি কাত হয়ে ডুবে যাবার ফলে কয়রা শ্যালা নদীর পানি কি পরিমান দূষিত হয়েছে বা ডলফিনসহ জলজপ্রানীর তা কতোটা খক্ষিকর তা জানতে পানি পরিক্ষার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে। জাহাজটিতে কি পরিমান জ্বালানী তেল রয়েছে তা এখনো নিশ্চিত করে জানা সম্ভব হয়নি। সমতা নেভীগেশন ট্রান্সর্পোট এজেন্সির লাইটারেজ জাহাজ সী হর্স-ওয়ানের মালিক হোসেন আলীকে দ্রুত শ্যালা নদী থেকে কয়লা অপসারণসহ জাহাজটি উদ্ধার করতে সুন্দরবন বিভাগের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

দ্রুত ডুবে যাওয়া জাহাজটি উত্তোলন করা না হলে পলি জমে শ্যালা নদী ভরাট হয়ে যাবার আশংকার কথা জানিয়েছেন ডিএফও। তিনি আরো জানান,বনের জীববৈচিত্র্য, প্রাণীজ, জলজ ও বনজ সম্পদের ক্ষতির আশংকায় সুন্দরবন বিভাগের পক্ষ থেকে লাইটারেজ জাহাজ থেকে সী হর্স-ওয়ানের মালিক হোসেন আলী ও মাস্টার মো. সিরাজুর ইসলাম মোল্লাকে আসামী করে ক্ষতিপূরণ মামলা করা হবে।

শনিবার সন্ধ্যায় পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের তাম্বুলবুনিয়া ক্যম্পের কলামুলা এলাকার শ্যালা নদীতে ১২শত ৩৫ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে এমভি ‘সী হর্স-ওয়ান’ নামের কয়লাবাহী লাইটারেজ জাহাজটি ডুবে যায়। কয়লা বোঝাই এই লাইটারেজ জাহাজটি চট্টগ্রাম থেকে কলয়া বোঝাই করে সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে যশোরের নোয়াপাড়া বন্দরে যাচ্ছিল। তবে এই ডুবে যাওয়া জাহাজটিতে থাকা মাস্টারসহ১৪ জন ক্রুকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও তারা ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছে।

গত ২০১৫ সাগের ২৮ অক্টোবর সুন্দরবন সংলগ্ন মংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে তলা ফেটে ডুবে যায় কয়লা বোঝাই জাহাজ এম,ভি জিয়ারাজ। এটিকে এখনও পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এর আগে ২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে ডুবে যায় ফার্নেস ওয়েল বোঝাই ট্যাংকার ওটি সাউদার্ন স্টার-৭। এনিয়ে সেসময় সারাবিশ্বে তোলপাড় শুরু হলে সুন্দরবন বাচাঁতে ছুটে আসতে হয় খোদ জাতিসংঘের পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের। এছাড়া গত ৩ বছরে সুন্দরবনের নদনদীতে কয়লা, সারসহ বিভিন্ন ধরণে পণ্য বোঝাই আরো ৩টি কার্গো জাহাজ, ভলগেটসহ নৌযান ডুবির ঘটনা ঘটে। যার ক্ষতির প্রভাব পড়েছে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের উপরে।


(এসিএকে/এস/মার্চ২০,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test