E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

হাতিয়ায় ভয়াবহ সংঘর্ষের আশঙ্কা, আতঙ্কে ভোটাররা

২০১৬ মার্চ ২১ ১৮:৫৯:৫৯
হাতিয়ায় ভয়াবহ সংঘর্ষের আশঙ্কা, আতঙ্কে ভোটাররা

নোয়াখালী প্রতিনিধি : ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আগামীকাল নোয়াখালীর হাতিয়া ও সুবর্ণচর উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ওইদিন হাতিয়ার ৭টি ইউনিয়নের ৭২টি ও সুবর্ণচরের ৮টি ইউনিয়নের ৭৯টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলবে।

ইতোমধ্যে হাতিয়ার সবকয়টি কেন্দ্রসহ দুই উপজেলার ১১৮টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। এসব কেন্দ্রগুলোর মধ্যে হাতিয়ার ৭টি ইউনিয়নে ভয়াবহ সংঘর্ষ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবে কিনা এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন সাধারণ ভোটাররা। রোববার বিকেলে জেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারদের কাছে নির্বাচনী উপকরণ পাঠানো হয়েছে। এছাড়া গত রাত ৮টার পর থেকে প্রার্থীদের সকল ধরনের প্রচারণা বন্ধ হয়েছে।


জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, হাতিয়া উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ৫০ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ১ লাখ ১৯ হাজার ৩৮৬ জন পুরুষ ও ৭২ হাজার ১৩৪ জন নারীসহ মোট ১ লাখ ৯১ হাজার ৫২১ জন ভোটার রয়েছেন।


হাতিয়ার চেয়রম্যান প্রার্থীরা হচ্ছেন:
চরঈশ্বর ইউনিয়নে- আলা উদ্দিন আজম (আওয়ামী লীগ) নৌকা, আশরাফুল হক (স্বতন্ত্র) টেলিফোন, ফজলে রাব্বি (স্বতন্ত্র) মোটরসাইকেল, মনজুরুল হক (স্বতন্ত্র) টেবিল ফ্যান, আবদুল হামিদ (স্বতন্ত্র) আনারস, সালমা আক্তার (স্বতন্ত্র) চমশা পতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
চরকিং ইউনিয়নে- মহি উদ্দিন আহমেদ (আওয়ামী লীগ) নৌকা, বেলাল উদ্দিন (স্বতন্ত্র) মোটরসাইকেল, নাজিম উদ্দিন (স্বতন্ত্র) টেলিফোন প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

তমরদ্দিন ইউনিয়নে- ফখরুল ইসলাম (আওয়ামী লীগ) নৌকা, আলা উদ্দিন (বিএনপি) ধানের শীষ, ফখরুল আহমেদ (স্বতন্ত্র) আনারস, মাহবুব উল আল (স্বতন্ত্র) মোটরসাইকেল, কামাল উদ্দিন (স্বতন্ত্র) টেলিফোন প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বুড়িরচর ইউনিয়নে- জিয়া আলী মোবারক (আওয়ামী লীগ) নৌকা, নাছির উদ্দিন (বিএনপি) ধানের শীষ, আবদুল মোতলেব (স্বতন্ত্র) রজনীগন্ধা, আমিনুল হক (স্বতন্ত্র) আটোরিকশা, আব্দুল গণি (স্বতন্ত্র) মোটরসাইকেল, আমির হোসেন (জাতীয় পার্টি) নাঙল, ইউছুফ (স্বতন্ত্র) টেবিল ফ্যান, হারুন উর রশিদ (স্বতন্ত্র) ঘোড়া, রেকা আলি মোবারক (স্বতন্ত্র) চশমা, শত্তকত হোসেন (স্বতন্ত্র) আনারস, সাহেদ মোহাম্মেদ শফি উল্যাহ (স্বতন্ত্র) টেলিফোন প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সোনাদিয়া ইউনিয়নে- আহমেদ শরীফ (স্বতন্ত্র) ঘোড়া, নজরুল ইসলাম (আওয়ামী লীগ) নৌকা, জোবায়ের হোসেন (বিএনপি) ধানের শীষ, ইসমাইল (স্বতন্ত্র) টেবিল ফ্যান, ইয়াছিন আরাফাত (স্বতন্ত্র) আনারস, নরুল আফসার রাহাত (স্বতন্ত্র) চমশা, কামাল উদ্দিন (স্বতন্ত্র) ঢোল, সাঈদ উদ্দিন (স্বতন্ত্র) টেলিফোন, মহি উদ্দিন (স্বতন্ত্র) মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নে- বোরহান উদ্দিন (আওয়ামী লীগ) নৌকা, ইব্রাহিম (বিএনপি) ধানের শীষ, আব্দুল মালেক (জাতীয়পার্টি) নাঙল, ফরহাদ উদ্দিন (স্বতন্ত্র) টেলিফোন, তাজুল ইসলাম (স্বতন্ত্র) চমশা, সাইফুল্যাহ (স্বতন্ত্র) আনারস, সারওয়ার (স্বতন্ত্র) ঢোল, দিদার উদ্দিন (স্বতন্ত্র) ধুতি পাতা, নজিম উদ্দিন (স্বতন্ত্র) মোটরসাইকেল, শাহাদাত হোসেন (স্বতন্ত্র) টেলিফোন, সেলিনা আক্তার (স্বতন্ত্র) রজনীগন্ধা পতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
জাহাজমারা ইউনিয়নে- এ টি এম সিরাজ উদ্দিন (আওয়ামী লীগ) নৌকা, মাছুম বিল্লাহ (স্বতন্ত্র) আনারস, ইউছুফ (স্বতন্ত্র) টেলিফোন, সাখওয়াত হোসেন (স্বতন্ত্র) মোটরসাইকেল ও জাফুল্যাহ হিল মজিদ (বিএনপি) ধানের শীষ পতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।


সুবর্ণচরের চেয়রম্যান পার্থীরা হচ্ছেন:
অপরদিকে, জেলার সুবর্ণচর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ২৮ জন চেয়ারম্যান পার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ৮৩ হাজার ৫৯৬ জন পুরুষ ও ৭৯ হাজার ৪১০জন নারীসহ মোট ১ লাখ ৬৩ হাজার ৬ জন ভোটার রয়েছেন।

চরজব্বর ইউনিয়নে- তরিকুল ইসলাম (আওয়ামী লীগ) নৌকা, মো. আবদুল্লাহ (বিএনপি) ধানের শীষ, মাহফুজুর রহমান (ইসলামী আন্দেলন) হাতপাখা পতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

চরবাটা ইউনিয়নে- নূর মাওলা (বিএনপি) ধানের শীষ, মোজাম্মেল হোসেন (আওয়ামী লীগ) নৌকা, মিজানুর রহমান (স্বতন্ত্র) আনারস, কামরুজ্জামান (স্বতন্ত্র) টেবিল ফ্যান, দেলোয়ার হোসেন (জাতীয়পার্টি) নাঙল পতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

চরক্লার্ক ইউনিয়নে- আবদুল বাসার (স্বতন্ত্র) আনারস, মো. ইসরাফিল (ইসলামী আন্দেলন) হাতপাখা, বশির আহম্মেদ (আওয়ামী লীগ) নৌকা, সাহাব উদ্দিন (বিএনপি) ধানের শীষ পতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
চরওয়াপদা ইউনিয়নে- মনির আহম্মেদ (আওয়ামী লীগ) নৌকা, জামাল উদ্দিন (বিএনপি) ধানের শীষ, সালা উদ্দিন (ইসলামী আন্দোলন) হাতপাখা পতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

চরজুবলি ইউনিয়ন- মীর মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন (বিএনপি) ধানের শীষ, হানিফ চৌধুরী (আওয়ামী লীগ) নৌকা, খালেদ সাইফুল্লাহ (ইসলামী আন্দেলন) হাতপাখা পতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

চরআমানউল্লাহ ইউনিয়ন- আবুল কাসেম (বিএনপি) ধানের শীষ, বেলায়েত হোসেন (আওয়ামী লীগ) নৌকা, আবুল বাসার (ইসলামী আন্দেলন) হাতপাখা পতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

পূর্বচরবাটা ইউনিয়নে- আবুল বাসার মঞ্জু (আওয়ামী লীগ) নৌকা, জামাল উদ্দিন গাজী (বিএনপি) ধানের শীষ, সুলতানা মরিয়ম (স্বতন্ত্র) আনারস পতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে- নাজমুল হক (আওয়ামী লীগ) নৌকা, মহি উদ্দিন চৌধুরী (স্বতন্ত্র) আনারস, খাইরুল আলম সেলিম (বিএনপি) ধানের শীষ, মহিদ উদ্দিন মধু (স্বতন্ত্র) টেবিল ফ্যান পতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সূত্র জানায়, ‘বিদ্রোহী’ পার্থীরা সকলেই পতীক নিয়েছেন ‘আনারস’। তারা হাতিয়ার বর্তমান সাংসদ আয়েশা ফেরদৌসের স্বামী সাবেক সাংসদ মোহাম্মদ আলীর অনুসারী হওয়ায় নির্বাচনী মাঠে তারা এরই মধ্যে বেশ সক্রিয় এবং শক্ত পতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন। গত ৩ মার্চ পতীক বরাদ্দের পর থেকে গত শনিবার রাত পর্যন্ত পায় পতিদিনই নৌকা ও আনারস পতীকের সমর্থকদের মধ্যে হামলা, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে এ পর্যন্ত আহত হয়েছেন দুই’শর বেশি। সহিংস ওই সব ঘটনায় লাঠিসোঠা, ধারালো অস্ত্রের পাশাপাশি ব্যবহার করা হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মহি উদ্দিন জানান, তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে নৌকার পার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। অথচ সাবেক সাংসদ মোহাম্মদ আলী নৌকার বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহী’ পার্থী দাঁড় করানোর পাশপাশি নির্বাচনী ফলাফল পক্ষে নিতে নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। যার অংশ হিসেবে এরই মধ্যে অস্ত্রধারী ডাকাত বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে বিভিন্ন স্থানে নৌকার পার্থী ও সমর্থকদের নানা হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে। এতে সবখানে এক ধরনের ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

তবে এ অভিযোগের বিপরীতে মোহাম্মদ আলী জানান, ইউপি নির্বাচনে হাতিয়ায় যারা এবার নৌকার পতীক পেয়েছেন, তারা কেউই জাতীয় নির্বাচনে নৌকার পক্ষে ছিলেন না। তাছাড়া তৃণমূলের কোনো নেতার কাছ থেকে দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে মতামত নেয়া হয়নি। এ কারণে বিভিন্ন ইউনিয়নের ত্যাগী নেতাদের সাধারণ নেতা-কর্মীরা নির্বাচনে পার্থী হতে বাধ্য করেছেন। পতিটি ইউনিয়নে ‘বিদ্রোহী’ পার্থীদের জনপিয়তা দেখে নৌকার পার্থীরা বিভিন্ন জেলা থেকে চিহ্নিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের এনে হাতিয়ায় জড়ো করেছেন। সর্বশেষ গত শুক্রবার ওই সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলিতে বিদ্রোহী পার্থীর ৮ সমর্থক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এসব কারণে হাতিয়ার সাধারণ জনগণ এখন আতঙ্কিত।

সাধারণ ভোটারদের মতে, হাতিয়ায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপ মোহাম্মদ আলী ও ওয়ালি উল্যাহের মধ্যে বিবাদমান বিরোধের কারণে সর্বশান্ত ও জান-মালের ক্ষতির শিকার হবে সাধারণ মানুষ। ২২ মার্চ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হাতিয়ার ৭টি ইউনিয়নে ভয়াবহ সংঘর্ষ হওয়ার আশঙ্কা করছে তারা। তাদের মতে নির্বাচনের দিন হতাহতের ঘটনাও ঘটতে পারে। সাধারণ ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবে কিনা এ নিয়েও সংশয় পকাশ করছেন।

নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মো. ইলিয়াছ শরীফ পিপিএম জানান, হাতিয়া ও সুবর্ণচরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে তিন স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দুই উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের ভোটকেন্দ্রে ও বাহিরে নিরাপত্তার জন্য ৯৪১জন পুলিশ, আনসার ব্যাটালিয়ন ও সাধারণ আনসার সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। পাশাপাশি বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যরাও থাকবে।

(এসইউএস/এএস/মার্চ ২১, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test