E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরায় নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় শতাধিক হিন্দু পরিবার ঘরছাড়া

২০১৬ মার্চ ২৫ ১৩:৪১:৫৭
সাতক্ষীরায় নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় শতাধিক হিন্দু পরিবার ঘরছাড়া

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছে। এ ছাড়া ৩০টি পরিবারের ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুট্পাট করা হয়েছে। পুরুষশুন্য হয়ে পড়া শতাধিক  হিন্দু পরিবারের নারী ও শিশুরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। এ সব হামলার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন আওয়ামী লীগ ও তাদের বিদ্রোহী জয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থীদের সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা।

আশাশুনি উপজেলা সদর ইউনিয়নের ঠাকুরাবাদ গ্রামের ইউপি সদস্য দীলিপ মণ্ডল জানান, মঙ্গলবার তারা চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে অ্যাড. শহীদুল ইসলাম পিণ্টুকে নৌকা প্রতীকে ভোট দেন। কিন্তু ভোটে জয়লাভ করেন উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহবায়ক ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সেলিম রেজা মিলন। মিলন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মোস্কাকিমের ঘনিষ্ট।

তিনি আরো জানান, সেলিম রেজা মিলন জয়লাভের খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে হিন্দু অধ্যুষিত ঠাকুরাবাদ, গাইয়াখালি, হাঁসখালি ও বলাবাড়িয়ার হিন্দুদের হুমকি ধামকি দেওয়া হয়। বুধবার সকাল থেকে তার (দীলিপ) বাড়িতে দফায় দফায় হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। লুটপাট করা হয় দু’ লক্ষাধিক টাকার মালামাল। পিটিয়ে জখম করা হয় বাড়ির নারী পুরুষ ও শিশুদের । একই সাথে তারা অমুৃত মণ্ডল ও প্রবীর মণ্ডলের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচর করে। লুট্পাট করা হয় তাদের সম্পদ। গাইয়াখালি গ্রামের গৌর নাথ বৃহষ্পতিবার সকালে হাঁড়িভাঙা বাজারে গেলে তাকেও পিটিয়ে জখম করে মিলন ও উপজেলা চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা। জঅবন বাঁচাতে বলঅবাড়িয়া গ্রামের ডাঃ সুশীল চন্দ্র মণ্ডল পালিয়ে ভারতে চলে গেছেন।

সুজাতা মণ্ডল জানান সেলিম রেজা মিলন ও মোস্তাকিমের সন্ত্রাসী বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে ঠাকুরাবাদ, গাইয়াখালি, হাঁসখালি ও বলাবাড়িয়া গ্রামের শতাধিক হিন্দু পরিবারের বাড়ি পুরুষশূন্য। নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার অভিযোগে তারা খোলপেটুয়া নদীর খাজরা পারে অবস্থান করে থাকেন। দিনের বেলা কেউ কেউ বাড়িতে আসেন। রাতে মিলন বাহিনীর সন্ত্রাসীরা এসে ঘরের দরজায় দরজায় ধাক্কা মেরে মেয়েদের ধর্ষণের হুমকি দিচ্ছে। এই মুহুর্তে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে না গেলে অবস্থা ভয়াবহ হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইজ্জত বাঁচাতে তারা রাতভর জেগে বাড়ি পাহারা দিচ্ছেন। বিষয়টি বুধবার রাতে আশাশুনি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানিয়ও কোন লাভ হয়নি।

এ ব্যাপারে আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী অ্যাড. শহীদুল ইসলাম পিণ্টু এক প্রেস ব্রিফিংএ জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম ম্ােস্তাকিমের সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য বিএনপি নেকা মঙ্গল সরকার, সমরেশ সানা, রবীন্দ্র সানা, আসাদুল ইসলাম মনিরুলসহ শতাধিক সন্ত্রাসী একের পর এক এ ধরণের হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশকে জানিয়েও কোন লাভ হচ্ছে না।

একইভাবে এ মিলনের সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার অভিযোগে মঙ্গলবার রাত থেকে বৃহষ্পতিবার দুপুর পর্যন্ত নাকতাড়া গ্রামের ২০টি’র ও বেশি হিন্দু বাড়িতে মারপিট, ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে।

এ ব্যাপারে আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, এ ধরণের কোন ঘটনা তার জানা নেই।

তবে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর জানান, চারটি গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে সব ধরণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
তালা উপজেলার মাগুরা ইউনিযনের ওয়ার্কার্স পার্টির পরাজিত প্রার্থী হিরন্ময় মণ্ডল জানান, সির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগ প্রার্থী গণেশ দেবনাথের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী তাকে বাড়িতে এসে হত্যার হুমকি দেয়। এ ঘটনায় ওই সন্ত্রাসীর এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমান আদালত। ভোটে তিনি পরাজিত হওয়ার পর নির্বাচিত প্রার্থী গণেশ দেবনাথের লোকজন বুধবার দুপুরে একটি কালীপুজার অনুষ্ঠানে তাকেসহ পাঁচজনকে পিটিয়ে জখম করে। এ ঘটনায় তাকে মোবাইল ফোনে জীবননাশের হুমকি দেওয়ার ঘটনায় তালা উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লেিগর সভাপতি ঘোষ সনৎ কুমারকে আটক করে পুলিশ। এরই জের ধরে বৃহষ্পতিবার সকালে মাগুরা বাজারে মাদরা গ্রামের ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল চালক ওয়ার্কার্স পার্টির কর্মী গৌর মণ্ডলকে পিটিয়ে জখম করে। মোবাইল কেড়ে নিয়ে ভেঙে দেওয়া হয় তার মোটর সাইকেলটি।

একইভাবে ওই সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা মাগুরা গ্রামের অলোক বোসের বাড়ি ভাঙচুর করে। তার অন্তস্বত্বা পুত্রবধু শীলা বসু ও ছেলে অমিত বসুকে পিটিয়ে জখম করে। এ সময় একটি খাসি ছাগলকে তারা পিটিয়ে হত্যা করে। পরে তারা নিমাই মণ্ডলকে মারপিট করে তার বাড়ি ভাঙচুর করে। পরে কিরণ মণ্ডলের স্ত্রীকে মারপিট করে। এরপর তারা উজ্জ্বল রায়ের স্ত্রীকে মারপিট করে ভাঙচুর করে তাদের বাড়ি। সবমেষে তারা অভয় মণ্ডলের বাড়ি ভাঙচুর করে।হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটে নেতৃত্ব দেয় আওয়ামী লীগ কর্মী বিশ্বনাথ বিশ্বাস, বাবু মিত্র, হান্নান গাজী, বিপল্ব দাস, দেবাশীস সরকার, মিহির দে।

তবে তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছগির মিঞা জানান, এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে বুধবার সকাল থেকে তালা উপজেলার জেয়ালা গ্রামে দু’ পরাজিত ইউপি সদস্য প্রার্থীর সন্ত্রাসী বাহিনী কয়েকটি সংখ্যালঘুর বাড়িতে হামলা চালায়। এ ঘটনায় বিদুর ঘোষ বাদি হয়ে থানায় নয় জনের নামে মামলা করলে পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করেছে। মামলা করায় হামলাকারিরা হুমকি ধামকি অব্যহত রেখেছে।

অপরদিকে দেবহাটার কুলিয়া ইউনিয়নের বালিযাডাঙা ও টিকেট গ্রামে জয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী এমাদুলের সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা কমপক্ষে ২০ জনকে পিটিয়ে জখম করেছে। কয়েকজনের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে। দখল করে নেওয়া হয়েছে এক মাংশ বিক্রেতার জায়গা ও এক নারীর চিংড়ি ঘের।


(আরএনকে/এস/মার্চ২৫,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

৩০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test