E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

সুন্দরবনের আগুনে পুড়ে গেছে আধা বর্গ কিলোমিটার গহীন অরণ্য

২০১৬ মার্চ ২৮ ১৮:৪৩:১৮
সুন্দরবনের আগুনে পুড়ে গেছে আধা বর্গ কিলোমিটার গহীন অরণ্য

সুন্দরবন থেকে শেখ আহসানুল করিম : বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের জিউধরা স্টেশনের নাংলীর শিকদারের ছিলার গহীন অরণ্যে লাগা আগুন ২০ ঘন্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে। রবিবার বিকাল ৪টায় শিকদারের ছিলার গহীন অরণ্যে লাগা আগুন সোমবার দুপুর ১২টায় নিয়ন্ত্রণে এসেছে। মরা ভোলা নদী থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার গহীন অরণ্যের এই আগুন এখনো সম্পূর্ন নিভানো যায়নি। ফায়ার অব লাইনের মধ্যে কেথাও-কোথাও ধোয়ার কুন্ডলী পাকিয়ে থেমে-থেমে আগুন জ্বলে উঠছে।

আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বন সন্নিহিত লোকালয়ের কয়েকশ’ সাধারন মানুষ, টাইগার টিমের সদস্য, সুন্দরবন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের মোড়েলগঞ্জ ইউনিটের সদস্যরা সোমবার দুপুর পর্যন্ত নালা কেটে পানি ভরে ফায়ার অব লাইন স্থাপনের কাজ শেষ করে। তবে দুপুরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও ইতিমধ্যে পুড়ে গেছে আধা বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে থেকে-থেকে কয়েকশ’একর বনভুমি। এদিকে সুন্দরবনে অগ্নিকান্ডের কারণ অনুসন্ধানে চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) বেলায়েত হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন চাঁদপাই রেঞ্জের স্টেশন কর্মকর্তা ( রেঞ্জার) গাজী মতিয়ার রহমান ও ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ।

সুন্দরবন বিভাগের এই তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরূপন করে পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এনিয়ে গত ১২ বছরে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জে ১৯টি অগ্নিকান্ডের ঘটনায় পুড়ে গেছে একরের পর এক সুন্দরবন। সুন্দরবন বিভাগ এতথ্য নিশ্চিত করেছে।

সরেজমিনে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের জিউধরা স্টেশনের নাংলীর শিকদারের ছিলার গহীন অরণ্যে সোমবার দুপুরে ঘুরে দেখাগেছে, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বন সন্নিহিত লোকালয়ের কয়েকশ’ সাধারন মানুষ, টাইগার টিমের সদস্য, সুন্দরবন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিটের সদস্যরা নালা কেটে পানি ভরে ফায়ার অব লাইন স্থাপনের কাজ প্রায় শেষ করে এনছে। দুপুর ১২টার দিকে আগুন নিযন্ত্রনে এলেও তা সম্পূর্ন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। ফায়ার অব লাইনের মধ্যে কেথাও-কোথাও ধোয়ার কুন্ডলী পাকিয়ে থেমে-থেমে আগুন জ্বলে উঠছে।

এই আগুন নিভাতে ছুটে যাচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। কিছু সময়ের মধ্যে ওসব আগুন নিভিয়েও ফেলছে। ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় ভোলা নদী থেকে স্যালো মেশিনের মাধ্যমে ফায়ার অব লাইন পানি ভরে রাখা হচ্ছে। সুন্দরবন বিভাগ ও বন সন্নিহিত লোকালয়ের বাসিন্দারা জানান, ২৭ মার্চ ৪টার দিকে এলাকাবাসী প্রথমে বনের গহীনে ধোয়া দেখতে পায়। পরে সন্ধায় তারা চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের বন কর্মকর্তাদের অগ্নিকান্ডের খবর জানান।

খবর পেয়েই ধানসাগর স্টেশনের কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ বনরক্ষীদের নিয়ে রাত ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌছান। পরে এই কর্মকর্তা বন সন্নিহিত লোকালয়ের কয়েকশ’ সাধারন মানুষ, টাইগার টিমের সদস্যদের কাছে আগুন নেভানোর সহায়তা চায়। নিরাপত্তার অভাবে রবিবার রাতে কেউ আগুন নিভাতে না গেলেও সোমবার ভোরে লোকালয়ের কয়েকশ’ সাধারণ মানুষ, টাইগার টিমের সদস্য, সুন্দরবন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের মোড়েলগঞ্জ ইউনিটের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রনে আনতে কাজ শুরু করে। আগুন যাতে গোটা সুন্দরবনে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য প্লবন ভূমি চাড়া উচু বনভূমিতে নালা কেটে পানি ভরে ফায়ার অব লাইন স্থাপনের কাজ শুরু করে।

রবিবার বিকাল ৪টায় শিকদারের ছিলার গহীন অরণ্যে লাগা আগুনে ইতিমধ্যে পুড়ে গেছে আধা বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে থেকে-থেকে কয়েকশ’একর বনভুমির বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা ও লতাগুল্ম পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দুপুর ১২টার দিকে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা ( ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম দুর্ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছান।

মোড়েলগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ইন-চার্জ স্বপন কুমার ভক্ত দুর্ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে জানান, আগুন নিয়ন্ত্রয়ণে ফায়ার সার্ভিসের ২০ সদস্যের একটি দল সোমবার ভোর থেকে কাজ শুরু করেছে। আগুন এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে দুপুরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও ইতিমধ্যে পুড়ে গেছে আধা বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে থেকে-থেকে কয়েকশ’একর বনভুমি। এখন আর সুন্দরবনে বড় ধরনের ক্ষতির আশংকা নেই। তবে সুন্দরবনের পচা শিকড়ে তৈলী হওয়া গ্যাসের লাইন ধরে মাটির নিচে দিয়ে আগুন অনেক দূরে চলে যায়। সেকারনে মাটিতে ফায়ার অব লাইনের জন্য নালা কেটে তাতে পানি ভরে রাখতে হচ্ছে। যাতে করে আগুন সুন্দরবনে ছড়িয়ে পড়তে না পারে। অতিত অভিজ্ঞতা বলছে, আগামী দুদিন পর্যবেক্ষণের পরই বলা যাবে সুন্দরবনের আগুন সম্পূর্নরূপে নিভেছে কিনা।

আগুন নিভাতে আসা সুন্দরবন সন্নিহিত লোকালয়ের নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বনজীবী জানান, সুন্দরবন সংলগ্ন এলকার শাসকদলের প্রভাবশালীরা প্রতি বছর সুন্দরবনের জলাশয়গুলো অলিখিত ভাবে বন বিভাগের কাছ থেকে ‘কথিত ইজারা’ নিয়ে বর্ষা মৌসুমে মাছ শিকার করে। ওই প্রভাবশালী চক্র সুন্দরবনের জলাশয় পরিস্কার করার জন্য তারা মৌসুমে (শুস্ক) অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটায়। কিন্তু সুন্দরবন বিভাগ এবিষয় অবগত থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয় না।

ফলে প্রতি বছরই সুন্দরবনে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে চলেছে। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের উদাসিনতায় ২০০২ সালের ২২ মার্চ থেকে এপর্যন্ত চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জে ১৯টি অগ্নিকান্ডের ঘটনায় পুড়েগেছে একরের পর এক সুন্দরবন। পুড়ে যাওয়া এলাকায় লতাগুল্ম ছাড়া আর কোন গাছপালা জন্ময়নি। প্রতিবারই তদন্ত কমিটি গঠন করা হরেও অজ্হাত কারনে সুনির্দিষ্ট করে এসব ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে পারেনি পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ।

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম জানান, আগুন এখন নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। এ মূহুর্তে সুন্দরবনের ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ বলা যাচ্ছে না। র্দূঘটনাস্থলে আরাও যাতে ধোয়ার কুন্ডলী পাকিয়ে আগুন জ্বলে উঠে তা ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ফায়ার সার্ভিস ও বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সেখানে থাকতে বলা হয়েছে।

চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) বেলায়েত হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য চাঁদপাই রেঞ্জের স্টেশন কর্মকর্তা ( রেঞ্জার) গাজী মতিয়ার রহমান ও ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদকে নিয়ে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরূপন করে তার কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

(একে/এএস/মার্চ ২৮, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test