E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কুষ্টিয়ায় শুরু হয়নি বোরো চাল সংগ্রহ অভিযান

২০১৪ জুন ০৪ ১২:০৩:৩৯
কুষ্টিয়ায় শুরু হয়নি বোরো চাল সংগ্রহ অভিযান

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : চাল সংগ্রহ অভিযানের সময় ১ মাস পেরিয়ে গেলেও কুষ্টিয়ায় এখনো শুরু হয়নি বোরো চাল ক্রয়। কেজি প্রতি আওয়ামীলীগ নেতাদের ৬০ পয়সা কমিশন দাবিসহ আরও কয়েকটি কারণে মিলাররা চাল দিতে অনিহা প্রকাশ করছে।

অনেক মিলার চাল সরবরাহের জন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলেও শেষ পর্যন্ত লোকসানে পড়ার আশঙ্কা করছেন। নানা কারণে সরকার যে টার্গেট দিয়েছে তা শেষ পর্যন্ত পূরণ হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার ১৯ হাজার ৬৪৪ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এজন্য ৪৭৬টি তালিকাভুক্ত মিলের মধ্যে ৩৭৪টি মিল চুক্তিভূত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাল সংগ্রহ হচ্ছে সদর উপজেলায়।

এখানে ১৪ হাজার ৫২৯ টন চাল সরবরাহ করার জন্য চুক্তি করেছে ২৫১টি মিল। কুমারখালিতে ১৮টি মিল দেবে ৯৪৭ টন, খোকসাতে দশটি মিল ৩৩৫ টন, ভেড়ামারায় দুটি মিল ৪৯৬টন, মিরপুরে ৮৪টি মিলার ২ হাজার ৯৩০ টন ও দৌলতপুরে ৭টি মিল ৪০৭ টন চাল দেবার জন্য চুক্তি করেছে। এজন্য তারা বরাদ্দ অনুপাতে মোট বরাদ্ধের দামের দুই ভাগ টাকা সরকারের কাছে জামানত দিয়েছেন।

গত ২৬ মে চুক্তি শেষ হয়েছে। তবে ১ মে থেকে চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হবার কথা থাকলেও এক মাস পেরিয়ে গেলেও এক ছটাকও চাল সংগ্রহ হয়নি।

কারণ হিসেবে একাধিক মিলার বলেন, কুষ্টিয়া এলাকায় মোটা ধানের চাষ হয় না বললেই চলে। তাই বাইরে থেকে ধান সংগ্রহ করতে হচ্ছে। বাইরে থেকে ধান এনে চাল করে সরকারি গোডাউনে পৌঁছাতে খরচ বেশি পড়ে যাবে। সরকার যে ৩১ টাকা দর নির্ধারন করেছে তাতে চাল দিতে গেলে লোকসান গুনতে হবে। তবে মিলাররা বলেন, লোকসান হলেও যেহেতু চুক্তি করেছে মিলাররা তাই চাল দিতেই হবে। চাল না দিলে জামানত ও লাইসেন্স দুটিই বাজেয়াপ্ত হয়ে যাওয়ার ভয় রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে খাজানগর এলাকার এক রাইস মিল মালিক ও মালিক সমিতির নেতা জানান, এ বছর সরকার ৩১ টাকায় চাল ক্রয় করবে বলে দর নির্ধারন করে দিয়েছে। কিন্তু বাজারেই মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩২ থেকে ৩৩ টাকায়। সেখানে সরকারকে চাল দিতে গেলে লোকসানের ভয় রয়েছে। তাছাড়া আওয়ামীলীগ নেতারা কেজি প্রতি ৬০ পয়সা দাবি করেছে। আওয়ামীলীগ নেতাদের কমিশন দিতে গেলেও তো আর পুঁজি থাকে না।

খাজানগর এলাকার আওয়ামীলীগ পন্থী এক মিল মালিক বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের এক সহ-সভাপতি তার ব্যবসায়ি প্রতিষ্ঠানে মিল মালিকদের ডেকে কেজি প্রতি ৬০ পয়সা দাবি করেন। এতে মিল মালিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে পরে তা ২৮ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন প্রতি টনে আওয়ামীলীগ নেতাদের দিতে হবে ২৮০ টাকা। আওয়ামীলীগ নেতাদের এমন সিদ্ধান্তে মিল মালিকরা চরম ক্ষুব্ধ ও হতাশ বলে জানান তিনি।

এদিকে এ বছর অনেক ব্যবসায়ি চুক্তিবদ্ধ হননি। এক ব্যবসায়ি বলেন, আমি গত বছর ৩০টি মিলের বিপরীতে চাল দেয়ার চুক্তি করেছিলাম। এবার মাত্র ১০টির চুক্তি করেছি।

জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল মজিদ বাবলু জানান, নানা ঝামেলার কারণে চাল সংগ্রহ অভিযান এখনো শুরু হয়নি। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা নানা ঝামেলা করছেন। কথা হয়েছে, লাভ হলে তাদের খুশি করতে হবে। এসব ব্যাপার ড্রিল করছে আমাদের সমিতির সাধারন সম্পাদক জামসের। চাল সংগ্রহ অভিযান মনিটরিং করার জন্য একটি কমিটি রয়েছে।

সেখানে জেলা প্রশাসনের কমকর্তারা, খাদ্য অফিসের একজন কমকর্তা ও ক্ষমতাসীন দলের দুই শীর্ষ নেতা জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি হাজি রবিউল ইসলাম ও সাধারন সম্পাদক আসগর আলী রয়েছে। এছাড়া উপজেলা কমিটিতে আছেন আওয়ামী লীগ নেতা হাজি সেলিনুর রহমান।

জেলা আওয়ামীলীগের একাধিক নেতা কমিশন নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, দল চালাতে গেলে টাকা পয়সার দরকার হয়। এছাড়া আগে থেকে এ নিয়ম চালু আছে। তাই সুযোগ পাইলে কেউ হাতছাড়া করতে চাই না। দলের দুই নেতা বিষয়টি দেখভাল করছে বলে নেতারা জানান।

জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আসগর আলীর সঙ্গে মোবাইলে কথা হলে তিনি বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী চাল সংগ্রহ করা হবে। অতীতে চাল সংগ্রহ অভিযান নিয়ে অনেক অনিয়মের খবর রয়েছে। তাই এবার কঠোরভাবে মনিটরিং করা হবে। মোটা চাল যেহেতু কুষ্টিয়া কম আবাদ হয়, তাই মিলারদের চাল সরবরাহ করতে কিছুটা কষ্ট হবে। তিনি দাবি করে বলেন, আওয়ামীলীগের কোন নেতা মিলারদের নিকট টাকা পয়সা দাবি করেনি। আর যদি কেউ করেও থাকে তাহলে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ বলেন, আশা করছি দুএক দিনের মধ্যে চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংগ্রহ অভিযান শেষ হবে।

(কেএইচ/জেএ/জুন ০৪, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test