E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সুন্দরবনে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে আগুন

২০১৬ এপ্রিল ১৩ ১৮:৪১:৪৫
সুন্দরবনে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে আগুন

শেখ আহসানুল করিম, সুন্দরবন থেকে ফিরে : বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর ষ্টেশনের নাংলী টহল ফাঁড়ির পঁচাকোরালীয়া ও নাপিতখালী বিলের মধ্যবর্তী আব্দুল্লারছিলা এলাকার গহীন অরণ্যে লাগা আগুন সন্ধায় দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে।

মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে লাগা আগুন বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দাউ-দাউ করে জ্বলছিলো। ইতিমধ্যে পুড়ে গেছে সুন্দরবনের ১০ একরের অধিক বনভূমির সবুজ অরণ্যের বলা, বাইন, গামারীসহ গাছপালা, নলখাগড়া ও লতাগুল্ম। এই বনের সুন্দরী গাছেও আগুন ছড়িয়ে পড়ছে। বাগেরহাট, মোড়েলগঞ্জ ও শরণখোলা ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট বুধবার বুধবার দুপুর দুইটার দিকে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাছাখাছি পর্যাপ্ত পানির উৎস না থাকায় তারা কোনো কাজ করতে পারছেনা।

বাতাসের তীব্রতা ও আগুনের ভয়াবহতায় মধ্যে তারা পর্যাপ্ত পানির সন্ধানে ছুটাছুঠি করছে। সময় যত বাড়ছে আগুনের ভয়াবহতা ততোই তীব্র হচ্ছে। সুন্দরবনের এই দাবানলের মতো আগুন গোটা এলাকায় যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পাওে সেজন্য বন সন্নিহিত লোকালয়ের সাধারন মানুষ ও বন বিভাগ নালা কেটে সেখানে পানি ভরে ফায়ার লাইন স্থাপনের কাজ করে যাচ্ছে। সরেজমিনে র্দূঘটনাস্থ ঘুরে ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে এতথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। সর্বশেষ এই অগ্নিকান্ডের মাত্র ১৭ দিনের মধ্যে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর ষ্টেশন এলাকায় ফের আগুনের ঘটনায় চুপসে গেছেন বনকর্মকর্তারা।

পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা এসিএফ মো. বেলায়েত হোসেন দুপুরে মুঠোফোনে জানান, মঙ্গলবার গভীর রাতে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। বুধবার ভোরে লোকালয়ের লোকজন প্রথমে ধানসাগর ষ্টেশনের নাংলী টহল ফাঁড়ির পঁচাকোরালীয়া ও নাপিতখালী বিলের মধ্যবর্তী আব্দুল্লারছিলা এলাকার গহীন অনণ্যে আগুনের কুন্ডলী দেখতে পায়। এরপর সকালে তারা বন বিভাগকে জানায়। সকাল ৯টা থেকে প্রথমে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে বনকর্মী ও শরণখোলা উপজেলার উত্তর রাজাপুর গ্রামের ৩-৪শ’ মানুষ । তারা কলস-বালতি নিয়ে আগুন নিভাতে প্রাণপন চেষ্টা শুরু করে। দুপুর দুইটার দিকে শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ ও বাগরহাট জেলা সদর থেকে ফায়ার সার্ভিসের টিম ঘটনা পৌঁছলেও কাছাখাছি পর্যাপ্ত পানির উৎস না থাকায় তারা কোনো কাজ করতে পারছেনা। দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ায় আগুন নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব হচ্ছেনা।

ফায়ার লেন (নালা) কাটা হলেও তা অতিক্রম করে মূল বনে ছড়িয়ে পড়েছে আগুন। আগুন নিভাতে অংশ নেয়া শরণখোলা উপজেলার উত্তর রাজাপুর গ্রামের অসংখ্য মানুষ জানান, দুপুর ১২টায় চাঁদপাই রেঞ্জের এসিএফ বেলায়েত হোসেন ও দুপুর ২টায় পুর্ব বনবিভাগ বাগেরহাটের ডিএফও মো. সাইদুল ইসলাম দূঘটনাস্থলে এসে পৌঁছান। বিকেলে এই দুই বন কমৃকর্তাকে সুন্দরবন বিভাগ ও লোকালয়ের লোকজনের ফায়ার লাইন কেটে আগুন নিভানোর কাজের তদারকি করতে দেখাগেছে।

আগুন নিভানোর কাজে থাকা মোরেলগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা স্বপন কুমার ভক্ত জানান, আমরা পর্যাপ্ত পানির অভাবে

আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিনা। বাতাসের তীব্রতা ও আগুনের ভয়াবহতায় মধ্যে তাএদও এভাবে কাজ করতে হচ্ছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত দাউ-দাউ করে জ্বলছিলো সুন্দরবন। ইতিমধ্যে পুড়ে গেছে সুন্দরবনের ১০ একরের অধিক বনভূমির সবুজ অরণ্যের বলা, বাইন,গামারীসহ গাছপালা, নলখাগড়া ও লতাগুল্ম। এই বনের সুন্দরী গাছেও আগুন ছড়িয়ে পড়ছে। সময়ের সাথে সাথে আগুন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে।

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে। তবে আগুন না নেভা পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতি বা কতো একর বন পুড়েছে তা বলা সম্ভব নয়। আগুন লাগার প্রকৃত কারণ উদঘাটনে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা।

প্রতিবছর ধানসাগর স্টেশনের সুন্দরবনে আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে বন সংগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগের আঙ্গুল বনভিাগের দিকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি বলেন, শরণখোলা উপজেলার উত্তর রাজাপুর ও ধানসাগর এলাকার কয়েকটি অসাধু মৎস্য শিকারি চক্র প্রতিবছর বনে আগুন লাগিয়ে থাকে। শুষ্ক মৌসুমে তারা আগুন লাগিয়ে বন পরিষ্কার করে মাছের বিল তৈরী করে। বর্ষা এলেই শুরু হয় ওই চক্রের মাছ ধরার উৎসব।

ধানসাগর স্টেশনের দায়িত্বে থাকা বন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ওই চক্রের কাছে মৌসুম ভিত্তিক অলিখিত ইজারা (লিজ) দেয় ওই বিলগুলো। কারেন্ট জাল পেতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করা হয়। প্রতি মৌসুমে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় হলেও সরকারের ঘরে একটি টাকাও রাজস্ব জমা পড়ে না। পকেট ভারি হয় সুন্দরবনের কর্মকর্তাদের।

(একে/এএস/এপ্রিল ১৩, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test