E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

হাইকোর্টের নির্দেশ আমান্য করে দুর্গাপুরে আবাধে চলছে সাদামাটি উত্তোলন

২০১৬ এপ্রিল ২২ ১৩:১৮:৫০
হাইকোর্টের নির্দেশ আমান্য করে দুর্গাপুরে আবাধে চলছে সাদামাটি উত্তোলন

দুর্গাপুর(নেত্রকোণা)প্রতিনিধি:নেত্রকোনা জেলার দূর্গাপুর উপজেলার মাইজপাড়া, আড়াপাড়া ও পাঁচকাহানিয়া মৌজা থেকে পাহাড় ও টিলা ধ্বংস  করে ও পরিবেশগত ছাড়পত্র ব্যতিত সাদা মাটি উত্তোলনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)  হাইকোর্ট বিভাগে একটি রিট মামলা (নং ১১৩৭৩/২০১৫) দায়ের করেন।

মামলার প্রাথমিক শুনানী শেষে গত ১৪ মার্চ, ২০১৬ তারিখে আদালত উল্লেখিত মৌজায় অবস্থিত পাহাড় ও টিলা অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে কর্তন এবং অননুমোদিত ও নির্বিচারে পরিবেশগত ছাড়পত্র ও পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা ব্যতিত সাদা মাটি উত্তোলনকে কেন আইন বহির্ভুত এবং আইনগতভাবে ভিত্তিহীন ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে ৩ সপ্তাহের রুল জারি করেন। একইসাথে মামলা চলাকালীন সময়ে পরিবেশ আইন ও বিধিমালার সহিত সমন্বয় ব্যতিত উল্লেখিত মৌজাসমূহ থেকে সাদা মাটি উত্তোলন প্রতিরোধ করতে বিবাদীগণের উপর নির্দেশ প্রদান করেন।

সাদা মাটি বা চিনামাটি সিরামিক শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৯৬৯ সাল থেকে বাংলাদেশে সাদামাটি উত্তোলনের কাজ শুরু হয়। কিন্তু গত কয়েক বছর যাবৎ নেত্রকোনা জেলার দূর্গাপুর উপজেলার মাইজপাড়া, আড়াপাড়া ও পাঁচকাহনিয়া মৌজা থেকে কতিপয় ব্যক্তি ও কোম্পানীর লোকজন অনুরূপ পরিবেশগত ছাড়পত্র ব্যতীত যত্রতত্রভাবে পাহাড় ও ছোট টিলা কর্তন করে সাদা মাটি সংগ্রহ করছে। ফলশ্রুতিতে এ অঞ্চলের পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা দিয়েছে এবং গাছপালা ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে, এ অঞ্চলে হাজং, গারো এবং অন্যান্য আদিবাসী সম্প্রদায়ের যাদের জীবন ও জীবিকা এই পাহাড় ও পাহাড়ী বনের উপর নির্ভরশীল, তারা বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এ বিষয়ে এলাকাবাসী বিভিন্ন আইনানুগ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট প্রতিকার চেয়ে আবেদন করে ব্যর্থ হয় এবং বেলা’র নিকট আইনগত সহায়তা চেয়ে আবেদন করেন। তাদের আবেদনের ভিত্তিতে ২০১৫ সালের ১০ নভেম্বর জনস্বার্থমূলক এই মামলা বেলা দায়ের করে।

বিচারপতি জনাব সৈয়দ মোহাম্মদ দাস্তগীর হোসেন এবং বিচারপতি জনাব এ. কে. এম. সাহিদুল হক -এর সমন্বয়ে গঠিত মহামান্য সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেন।

মামলার বিবাদীগণ ছিলেন সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়; পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়; পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়; জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়; মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর; পরিচালক, খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো; জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, নেত্রকোনা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, দূর্গাপুর উপজেলা, নেত্রকোনা-সহ মোট ২২ জন।বেলা’র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এ্যাড্ভোকেট মিনহাজুল হক চৌধুরী।

বৃহস্পতিবার দিনব্যাপি সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে মোমেনশাহী সিরামিক এন্ড গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ, জার্ডিন ইন্টারন্যাশনাল, জাকের রিফ্যাক্টরী এন্ড টাইলস এন্টারপ্রাইজ উক্ত রায় মূলে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো গত ০৪/০৪/১৬ইং তারিখ খসউ ব্যৃ/সামা-সি বালি/স-২৩০/০২(খন্ড-২)১২৮৭ থেকে ১২৯৭ স্মারকে সকল মাইন মালিকদের সাদামাটি উত্তোলন ও পরিবহন বন্ধ করার নির্দেশনা প্রদান করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অনুলিপি প্রদান করেন।

সরকার কর্তৃক ১বছর পূর্বে কুল্লাগড়া ইউনিয়নের বহেরাতলী গ্রামে সাদামাটি চেকপোষ্ট চালু করা হয়। এখানে দায়িত্ব প্রাপ্ত ভূমি সহকারী রফিকুল ইসলামের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে শতাধিত ট্রাকটার ও লড়ি সাদামাটি নিয়ে যায় ,সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত স্থানীয়রা অনেকেই অভিযোগ করে বলেন কর্মকর্তারা যাওয়ার পরেও রাতরাতি অনেক ট্রাকটার ও লড়ি সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চলছে হরিলুট। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোকলেছুর রহমান সাথে জানতে চাইলে তিনি উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ প্রতিনিধিকে বলেন সাদামাটি উত্তোলন ও অপসারণ বন্ধের কোন চিঠি পাই নি, তবে বিষয়টি যেহেতু এখন জানতে পেরেছি অবশ্যই জেলা প্রশাসনের সহায়তায় এ বিষয়ে খুব দ্রুতই পদক্ষেপ গ্রহন করব বলে জানান।

অভিজ্ঞ মহলের ধারনা এভাবে চলতে থাকলে একদিকে যেমন সরকার বিপুল পরিমান রজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অন্যদিকে পাহাড় কেটে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করছে যা কোনদিন পুরণ করা সম্ভব হবেনা। এই ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আইন ভঙ্গকারী ইজারা মালিকদের জরিমানা সহ শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহন করে সকল ইজারদারদের শৃংখলায় আনা প্রয়োজন অন্যথায় ইজারা বাতিল করে পরিবেশ সংরক্ষন করা অত্যাবশ্যক।



(এনএস/এস/এপ্রিল২২,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test