E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

হবিগঞ্জে এত অস্ত্র, গোলাবারুদের উৎস কী?

২০১৪ জুন ০৫ ১৫:৩১:২৯
হবিগঞ্জে এত অস্ত্র, গোলাবারুদের উৎস কী?

নিউজ ডেস্ক : হবিগঞ্জের বনাঞ্চল থেকে উদ্ধার করা বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদের উৎস কী এবং এর সঙ্গে জড়িত নেপথ্যের ব্যক্তি কারা, তা এখনো জানা যায়নি। তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন এগুলো ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হতে পারে।

২০০৪ সালে চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র ধরা পড়ে। তদন্তে ঐ অস্ত্র ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ আসাম' বা উলফার বলে প্রমাণ হয়। এর সঙ্গে জড়িতদের বাংলাদেশের আদালত মৃত্যুদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন।

এর আগে ২০০৩ সালে বগুড়ায় গুলি এবং অস্ত্রের বড় একটি চালান ধরা পড়ার পর তার তদন্তে অনেক তথ্য বেরিয়ে এসেছিল। তখনই জানা যায় ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের সাতছড়ি সংরক্ষিত বনাঞ্চল অস্ত্রপাচার এবং চোরাচালানের জন্য ব্যবহার করত। এই এলাকা ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা থেকে মাত্র ৩ কিমি দূরে। এই গুলি ও অস্ত্রের সঙ্গে ‘ন্যাশনাল লিবারেশন ফোর্স অব ত্রিপুরা' বা এনএলএফটি এবং উলফা জড়িত ছিল বলে তখনকার তদন্তে বেরিয়ে আসে।

সাতছড়ি বনাঞ্চলেই একসময় ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘অল ত্রিপুরা টাইগার ফোর্স' বা এটিটিএফ-এর সদর দপ্তর ছিল বলে জানা গেছে। উলফা তাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ পরিবহণ, পাচার ও চোরাচালানে এটিটিএফ-এর সাতছড়ি বনাঞ্চলের ঘাটি ব্যবহার করত।

২০১৩ সালে বাংলাদেশ সরকার এটিটিএফ-এর প্রধান রণজিত দেববর্মণকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করে। ভারতের ত্রিপুরার আদালতে একাধিক মামলায় এখন রণজিত দেববর্মণের বিচার চলছে। তাঁর সঙ্গে উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়ার ঘনিষ্ঠতা ছিল। ২০০৪ সালে চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনায় পরেশ বড়ুয়াকে আদালত মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। উলফার এই অস্ত্রের চোরাচালান মামলায় সেই সময়ের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দু'জন মন্ত্রী এবং সামরিক ও বেসামরিক কয়েকজন শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তারও শাস্তি হয়েছে।

উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়া পলাতক আছেন। জানা যায় তিনি চীন-মিয়ানমার সীমান্তের টংচং এলাকার কোথাও অবস্থান করছেন।

অতীতে সাতছড়ি বনাঞ্চলকে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ উলফা, এটিটিএফ এবং এনএলএফটি তাদের ট্রেনিং ক্যাম্প হিসেবেও ব্যবহার করত।

মঙ্গলবার সাতছড়ি বনাঞ্চল থেকে র্যাব ২৫০টি অ্যান্টি-ট্যাংক রকেট, সমপরিমাণ চার্জার, ২০০ মর্টার সেল এবং ১১ হাজার গুলি ও গোলাবরুদ উদ্ধারের পর বুধবারও অভিযান চালায়। বুধবারের অভিযানে আরো ৮টি অ্যান্টি-ট্যাংক রকেট এবং ১৮৪টি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। পাওয়া গেছে একটি সুরঙ্গ। সাতছড়ি বনে মোট সাতটি বাংকারের খোঁজ পাওয়া গেলেও অস্ত্র গোলাবারুদ পাওয়া গেছে একটি বাংকারে।

র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান জানান, বাংকারগুলো কমপক্ষে এক বছর আগে তৈরি করা হয়েছে বলে ধারণা করা যায়। আর অস্ত্র ও গোলাবারুদ পলিথিনে মোড়ানো ছিল। এখানে ত্রিপুরাকে স্বাধীন করা কেন প্রয়োজন তা নিয়ে লেখা একটি পুস্তিকাও পাওয়া গেছে। তবে এই ঘটনায় এখনো কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা যায়নি।

তিনি জানান, আমরা এখনো এইসব আগ্নেয়াস্ত্র এবং গোলাবারুদের উৎস সম্পর্কে জানতে পারিনি। জানতে পারিনি কারা এখানে এগুলো রেখেছে।তদন্তে সব বেরিয়ে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রশিদ (অব.) জানান, চট্টগ্রাম এবং বগুড়ায় এর আগে উদ্ধার করা অস্ত্র এবং গোলাবারুদের সঙ্গে হবিগঞ্জের অস্ত্র এবং গোলাবরুদের মিল আছে। এগুলো সামরিক অস্ত্র। এরমধ্যে রকেট লঞ্চার ছাড়াও বিমান বিধ্বংসী মেশিনগানের গুলিও আছে। আর এ থেকে সহজেই বোঝা যায় এগুলো ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নিরাপত্তা এবং সন্ত্রাস বিরোধী চুক্তি হওয়ার ফলে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এখন আর বাংলাদেশের মাটিতে ঠাঁই পায় না। এর আগে তাদের অস্ত্রের চালান আটক ও শীর্ষ কয়েকজনকে গ্রেফতার করায় তারা চাপে পড়ে বাংলাদেশ ছেড়ে অন্য কোথাও আস্তানা গেড়েছে। তাঁর মতে, তারা সরে গেলেও তাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদের মজুদ সরাতে পারেনি। হবিগঞ্জের গোলাবারুদ কমপক্ষে ৪/৫ বছরের পুরনো বলেই মনে হয়।

এই নিরাপত্তা বিশ্লেষকের ধারণা বাংলাদেশের সিলেট এবং পার্বত্য এলাকার গভীর বনে এধরণের আরো মজুদ করা অস্ত্র এবং গোলাবারুদ থাকতে পারে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রশিদ (অব.) বলেন, বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্কতা ও তৎপরতার কারণেই হবিগঞ্জে অস্ত্র এবং গোলাবারুদ উদ্ধার হয়েছে। এই তৎপরতা আরো বাড়াতে হবে।

(ওএস/এটিআর/জুন ০৫, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test