E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘বন্দরে নির্বাচন নিয়ে কোন অবস্থায় শান্তি নষ্ট করা যাবে না’

২০১৬ মে ০৯ ১৭:১০:০৩
‘বন্দরে নির্বাচন নিয়ে কোন অবস্থায় শান্তি নষ্ট করা যাবে না’

গাজীপুর প্রতিনিধি : বন্দর উপজেলায় আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বন্দরের শান্তিপূর্ন বজায় রাখতে সকল দলের নেতৃবৃন্দ এলাকাবাসী সহ সকলের প্রতি আহবান রেখেছেন নারায়ণগঞ্জ-৫(শহর-বন্দর) আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। তিনি বলেছেন, নির্বাচনে কোন অবস্থাতেই যেন ভোট নিয়ে কোন সন্ত্রাসী না হয়, কোন রক্তপাত না হয় নির্বাচন যেন নিরপেক্ষ হয়। নির্বাচন নিয়ে কোন অবস্থাতেই এলাকার শান্তি নষ্ট করা যাবে না।

রবিবার ৮ মে সকাল ১০টায় বন্দরের মুছাপুর ইউনিয়নের বার পাড়া এলাকায় জহরপুর আলফাতাহ্ দারুল উলুম হাফিজিয়া নূরানী মাদ্রাসা ও এতিম খানার দ্বিতীয় তলা ভবনের ছাদ ঢালাই কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেলিম ওসমান এসব কথা বলেন।

মাদ্রাসাটিতে দ্বিতল ভবন নির্মানের জন্য মাদ্রাসার শিশু ছাত্র আবু সাঈদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ ডিসেম্বর মাদ্রাসার দ্বিতীয় তলা নির্মানের জন্য সেলিম ওসমান তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ১০ লাখ টাকার অনুদান প্রদান করেন সেই সাথে শিশু আবু সাঈদকে তার সাথে করে পবিত্র হজ্জ পালনের জন্য সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিলেন। সেলিম ওসমানের দেওয়া অনুদানের ১০ লাখ টাকায় মাদ্রাসার ভবনের দ্বিতীয় তলার ছাদ ঢালাই কাজ মঙ্গলবার উদ্বোধন করা হয়। মাদ্রাসাটির জন্য তিনি আরও ১০ লাখ টাকা অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দেন।

সেলিম ওসমান তার বক্তব্যে আরও বলেন, যারা গুজব ছড়িয়ে থাকে তারা শয়তানের বন্ধু। আমি আপনাদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আপনাদের গোলামি করছি। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর সব দলের লোক নিয়ে কাজ করছি। বন্দরে আমার ৩ জন উপদেষ্টার মধ্যে ১ জন জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ১ জন থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি আরেকজন বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান যিনি বিএনপি করেন। আমি সবাইকে সাথে নিয়ে সবার জন্য কাজ করি।

সেলিম ওসমান আক্ষেপ করে বলেন, যাদের বাড়িতে আওয়ামীলীগের জন্ম। যার রক্তে প্রতি শিরায় বঙ্গবন্ধু, হৃদপৃন্ডে শেখ হাসিনার নাম যার পুরো পরিবার আওয়ামীলীগ পরিবার। তার সাথে আওয়ামীলীগের নেতাদের রেশারেশি লজ্জা জনক ব্যাপার। জনগন আমাকে ভোট দিয়ে গোলামী করার জন্য

তিনি আরও বলেন, আগামীতে আবার সংসদ সদস্য হওয়ার কোন ইচ্ছা আমার নাই। আমি আপনাদের কাছে ভোট চাই না। আমি আপনাদের ভালোবাসা চাই। আমি চাই আমার পরিবর্তে যিনি আসবেন সে আমাদের পরিবার থেকে হোক আর অন্য কেউ হোক তাকেও যেন আপনারা ভালোবাসতে পারেন। তাকে আপনাদের তৈরি করতে হবে।

বন্দরবাসীর প্রতি আহবান রেখে তিনি বলেন, আসছে পবিত্র রমজানের মাসের পূর্বে আপনারা চেয়ারম্যান নির্বাচনের জন্য ভোট প্রদান করবেন। আপনাদের পবিত্র ভোটের মাধ্যমে যোগ্য ব্যক্তিকে আপনাদের আপনাদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য নির্বাচিত করবেন। যারা আমার মত আমার সাথে আপনাদের গোলামী করবে। কোন অবস্থাতেই আপনারা বিভ্রান্ত হবে না।

জামায়াতের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ৭৫’র পর মিথ্যা ইতিহাস দিয়ে যারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে দিতে চেয়েছে। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে। বন্দরের মানুষ জেগে উঠেছে। যারা ৭৫’র এর সাবালক হয়ে মিথ্যা ইতিহাস জেনে জামায়াত করেছে আমি তাদের জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। ভন্ড ইতিহাস ভূলে আসেন দেশের উন্নয়নে কাজ করেন। বন্দরের মানুষ বন্দরে কোন মাদক সেবী আর জামায়াত থাকতে দিবে না। পাশাপাশি বন্দরের মানুষের প্রতি আহবান রেখে বলেন, আমরা দাড়ি রাখবো টুপি পড়বো নবীজির সুন্নত রাখবো কিন্তু কেউ জামায়াত বানিয়ে দিবেন না। প্রতিটি মসজিদের ইমাম সাহেবেরা এ বিষয়ে দায়িত্ব নিবেন। জুম্মার নামাজের পর সত্য ইসলামের কথা বলেন।

জামায়াতের হরতাল সম্পর্কে তিনি বলেন, আজকে সকালে আমি ঢাকা থেকে এখানে এসেছি রাস্তায় একটি পুলিশও চোখে পড়ে নাই। আজ নাকি হরতাল। দেশের মানুষ এখন আর জঙ্গীদের হরতাল মানে না।

জেলা জাতীয় আহবায়ক আবুল জাহের বলেন, সেলিম ওসমান গত দুই বছরে বন্দরে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। উনি কোন দল দেখেন নাই। যেখানে উন্নয়ন সেখানেই তিনি আছেন। উনার মত একজন সংসদ সদস্য বাংলাদেশে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। উনি শুধু দিতে জানেন নিতে জানেন না।

মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কালাম, বন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন, শামসুজ্জোহা বিএম ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মুহি উদ্দিন মহিন, শিহাব উদ্দিন মেম্বার, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবু নাঈম, মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবু জাফর, সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন প্রমুখ।

গরীবের চোখের কষ্টের ভাষা বুঝেন এমপি সেলিম ওসমান

বন্দরের মুছাপুর ইউনিয়নের জহরপুর আলফাতাহ্ দারুল উলুম হাফিজিয়া নূরানী মাদ্রাসা ও এতিম খানার দ্বিতীয় তলা ভবনের ছাদ ঢালাই কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের উপস্থিত দর্শকের প্রথম সারিতে বসা ছিলো জহিরুল ইসলাম নামের একজন পঙ্গু ব্যক্তি। মঞ্চে উপস্থিত প্রধান অতিথি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। পঙ্গু জহিরুলের দিকে তার চোখ পড়তেই ইশারায় মঞ্চের সামনে জহিরুলকে ডেকে আনেন তিনি। সংসদ সদস্য তাকে প্রশ্ন করেন তুমি কি করো। জবাবে জহিরুল বলেন আমার একটি গাভী আছে আমি ওই গাভী পেলে সংসার চালাই। সংসারে আর কে কে আছে জানতে চাইলেন জহিরুল বলেন তার একটি ছেলে একটি মেয়ে দুইজনেই ছোট লেখা পড়া করে। সব কিছু জেনে সংসদ সদস্য তাকে চেয়ারে গিয়ে বসতে বলেন।

আলোচনা সভায় উপস্থিত অতিথিদের বক্তব্য শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে ডায়েসের সামনে উপস্থিত হোন সেলিম ওসমান। প্রথমেই তিনি জহিরুল ইসলামকে একজন বীর পুরুষ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন। আমি গরীর মানুষের কষ্ট বুঝি। আমি তাদের চোখের ভাষা বুঝতে পারি তাদের কষ্ট বুঝতে পারি। তখন জহিরুলের দিকে আঙ্গুলের ইশারা দিয়ে বলেন, এই ছেলেটিকে আমি দেখে তার কাছে জানতে চেয়ে ছিলাম সে কি করে কিভাবে সে পঙ্গু হয়েছে। সে আমাকে উত্তর দিয়েছে তার একটি গাভী আছে সে গাভী পালন করে। কথা গুলো সে এতটা গর্বের সাথে বলেছে যে আমার মনে হয়েছে জহিরুলই সত্যিকারে বীর পুরুষ। ছোট বেলা টায়ফয়েড জ্বরে পা হারিয়েও জহিরুল থেমে থাকেনি। একটি পা নিয়ে সে গাভী পালন করে দুধ বিক্রি করে সংসার চালায়। সে একজন সফল কৃষক হওয়ার স্বপ্ন দেখে। আমিও একজন। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি জহিরুলও একদিন সফল কৃষক হবে।

সাথে সাথে তিনি জহিরুলকে প্রতিদিন ১০ লিটার দুধ দেয় এমন একটি গাভী গরুর দেওয়ার ঘোষণা দেন। পাশাপাশি তিনি বলনে আপনারা দেখবেন এই জহিরুল একদিন লাঙ্গলবন্দে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন। আজকে তার নিজের একটি গাভী গরু, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তার কাছে ১০টি গরু থাকবে।

রোববার ৮ মে সকাল ১০টায় বন্দরের মুছাপুর ইউনিয়নের বার পাড়া এলাকায় জহরপুর আলফাতাহ্ দারুল উলুম হাফিজিয়া নূরানী মাদ্রাসা ও এতিম খানার দ্বিতীয় তলা ভবনের ছাদ ঢালাই কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেলিম ওসমান এসব কথা বলেন।

এছাড়াও তিনি জহরপুর মাদ্রাসার ছাত্র আবু সাঈদকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এই ছোট্ট ছেলেটির আহবানে আমি মাদ্রাসার উন্নয়নের ১০ লাখ টাকা অনুদান দিয়ে ছিলাম। যার ছাদ ঢালাই কাজের উদ্বোধন হয়েছে। এই ছেলেটির জন্যই এই মাদ্রাসার জন্য আরও ১০ লাখ টাকার অনুদান দিবো। উন্নয়ন কাজের বরাদ্দ দেওয়া যেন ঠিক ভাবে ব্যবহার হয়।

অনুষ্ঠান শেষে মঞ্চ স্থল ত্যাগ করার সময় লাঙ্গলবন্দ মালিবাগ এলাকার বৃদ্ধ নূর মোহাম্মদ তার অসুস্থ পঙ্গু স্ত্রীর জন্য একটি হুইল চেয়ার চাইলে এমপি সেলিম ওসমান তাকে হুইল চেয়ার কিনে পাঠিয়ে দেন।

প্রসঙ্গত ২০১৫ সালে ৩০ এপ্রিল প্রয়াত সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের প্রথম মৃত্যু বার্ষিকীর দোয়া অনুষ্ঠানে মাদ্রাসা ছাত্র আবু সাঈদের মুখ থেকে দোয়া শুনে সেলিম ওসমান তার কাছে জানতে চেয়ে ছিলেন সাঈদ তার কাছে কিছু চায় কিনা। তখন সাঈদ সংসদ সদস্যের কাছে তাদের মাদ্রাসাটি দ্বিতীয় তলা করে দেওয়ার দাবি জানান। আবু সাঈদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ সদস্য মাদ্রাসাটি ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে পর্যবেক্ষন করান। পরবতীর্তে ২৭ ডিসেম্বর পুনরায় সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে শীতবস্ত্র বিতরন অনুষ্ঠানে পুণরায় আবু সাঈদের দোয়া শুনে তাকে নিজের সাথে হজ্জে নেওয়ার ঘোষণা দেন এবং মাদ্রাসার উন্নয়নে ১০ লাখ টাকা অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দেন। ঘোষণার তৃতীয় দিনের মাথায় ৩০ ডিসেম্বর মাদ্রাসার জন্য তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ১০ লাখ টাকার আবু সাঈদের হাতে তুলে দেন। ওই দিন সেলিম ওসমান দুইজন অসুস্থ্য মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসার জন্য প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা করে এবং ৩ জন পঙ্গু ব্যক্তিকে একটি করে হুইল চেয়ার এবং কর্মসংস্থানের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে প্রদান করেন।

ব্রহ্মপুত্র নদে দূষিত পানি ও বর্জ অপসারণ না করার অনুরোধ বিকেএমইএ এর সভাপতির
বন্দরের লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদে ডাইংয়ের দূষিত ব্যর্জ ও পানি ফেলতে কারখানা মালিকদের অনুরোধ জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও বিকেএমইএ এর সভাপতি সেলিম ওসমান। যদি কোন কারখানা মালিক ইটিপি করা ছাড়া ডাইংয়ের পানি নদীতে অপসারন করেন তবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও জানান তিনি।

রোববার ৮ জুলাই মুছাপুর ইউনিয়নের বারপাড়া গ্রামে জহরপুর আলফাতাহ্ দারুল উলুম হাফিজিয়া নূরানী মাদ্রাসা ও এতিম খানার দ্বিতীয় তলা ভবনের ছাদ ঢালাই কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গেলে এলাকাবাসী তার কাছে ব্রহ্মপুত্র নদে ধামগড়ের টোটাল ফ্যাশন সহ মোট ৩টি শিল্প পোশাক কারখানার দূষিত পানি ব্রহ্মপুত্র নদে অপসারন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।

যার ফলে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি দূষিত হয়ে পচন ধরেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সরেজমিনে নদের পাড় দেখেন এবং পানিতে র্দুগন্ধের সত্যতা পান।

পোশাক কারখানার মালিকদের প্রতি অনুরোধ রেখে সাংবাদিকদের কাছে সেলিম ওসমান বলেন, ইটিপি ছাড়া সরাসরি ডাইংয়ের পানি নদীতে অপসারন করা আইনত অপরাধ। যদি কোন কারখানা মালিক ইটিপি ছাড়া ডাইংয়ের পানি ব্রহ্মপুত্র নদে অপসারন করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা এ হবে। বিষয়টি সরকারী সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে খতিয়ে দেখার আহবান জানাচ্ছি।

পাশাপাশি কারখানা মালিকদের উদ্দেশ্য বলছি কোন অবস্থাতেই ইটিপি ছাড়া কারখানার দূষিত পানি নদীতে অপসারণ করা যাবে না। যদি কোন কারখানা মালিক নদী দূষনের সাথে জড়িত থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ভাবে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

(বিডি/এএস/মে ০৯, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test