E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পুলিশের হেফাজতে সাতক্ষীরার সাংসদ তনয় রুমন
 

২০১৬ মে ২০ ১৮:০২:৩৯
পুলিশের হেফাজতে সাতক্ষীরার সাংসদ তনয় রুমন 

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : একটি পিস্তল, ৪৩ রাউন্ড গুলি ও তিন তরুনীকে নিয়ে একটি রিসোর্টে হাতেনাতে আটক হওয়া সাতক্ষীরার সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ মিসেস  রিফাত আমিনের ছেলে সাফায়াত সরোয়ার রুমন এখনও শ্যামনগর থানা পুলিশের কাছে রয়েছেন।

তার বিরুদ্ধে কোন ধারায় মামলা হবে না হবে তা নিশ্চিত করা যায়নি। তবে অন্যের অস্ত্র ব্যবহার , বেপরোয়া গাড়ি চালনা , আসামাজিক কাজে জড়িত থাকা এবং গাড়িতে জাতীয় সংসদ সদস্যের স্টিকার ব্যবহার করার দায়ে অন্ততঃ ৬টি ধারায় রুমনের বিরুদ্ধে মামলার সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে । এ মামলার বাদি হবেন শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক (এস আই) লিটন মিয়া।

বৃহস্পতিবার রাতে শ্যামনগরের সুন্দরবন লাগোয়া মুন্সিগঞ্জের অভিজাত রিসোর্ট ‘বরসা’র একটি কক্ষে ওঠেন সাতক্ষীরার সাংসদ তনয় রুমন। সাথে তিন তরুনীও। রুমনের কাছে তখন গুলিভর্তি পিস্তল । বরাবরই মাদকাসক্ত যুবক রুমন জাতীয় সংসদের স্টিকার সাঁটা মায়ের জীপ নিয়ে রিসোর্টে এলেই কর্মচারিরা কোনো প্রতিবাদ করার সাহস করেন নি। রাত সাড়ে ১০ টা পর্যস্ত দীর্ঘ সময় ধরে তিন তরুনীকে নিয়ে রুদ্ধদ্বার কক্ষে থাকায় তারা ব্রিবতকর অবস্থায় পড়ে যান। এক পর্যায়ে পুলিশে খবর গেলে রুমন ও তার তিন নারী সঙ্গীকে অস্ত্র সহ শ্যামনগর থানায় নিয়ে আসা হয়। এ সময় তার কাছে ৪৩ রাউন্ড গুলি পাওয়া যায় বলে জানায় পুলিশ ।

একই সময়ে জাতীয় সংসদের স্টিকার লাগানো তার মায়ের ব্যবহৃত জীপটিও পুলিশ হেফাজতে নেয় । খবর পেয়ে সাংসদ রিফাত আমিন শ্যামনগর থানায় ছুটে যান। তিনি তার ছেলেকে মুক্ত করানোর সব ধরনের কৌশল অবলম্বন করেও ব্যর্থ হন। রিসোর্ট এ কর্তব্যরত কর্মীরা জানান, রুমন কেবলই ফাই ফরমাস করছিল। আর একটুতে একটু হলেই বকাবকি করছিল তাদের।

শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) এনামুল হক জানান ‘ রুমনকে অস্বাভাবিক অবস্থায় বরসা রিসোর্ট কক্ষ থেকে তিন নারী ও অস্ত্র গুলি এবং গাড়িসহ রাতেই থানায় নিয়ে আসা হয়। এ সময় সে পুলিশের ওপর বার বার চড়াও হতে থাকে। এক পর্যায়ে তার মা সাংসদ রিফাত আমিনও ছেলেকে নিয়ে যাবার জন্য থানায় আসেন’। মিসেস রিফাত আমিন সংরক্ষিত মহিলা আসন ৩১২ এর সংসদ সদস্য।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাংসদ মিসেস রিফাত আমিন বলেন ‘বিষয়টি তেমন কিছু না। রাতে শ্যামনগরের রিসোর্টে যাবার সময় আমার ছেলে একটু বেগে গাড়ি চালানোয় পুলিশ সিগন্যাল দেয়। না থামানোয় পুলিশ পরে রিসোর্টে যেয়ে গাড়িটি সংসদ সদস্যের দেখতে পেরে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। গাড়িতে থাকা পিস্তলটি আমার নামে লাইসেন্সকৃত। ভুল বশতঃ আমি সেটা গাড়িতে রেখে বাসায় নেমে যাই। এসব নিয়ে অহেতুক ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে’।
থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরো জানান ‘লাইসেন্সকৃত অস্ত্রের বেআইনি ব্যবহার , অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকা, মাদক গ্রহন, বেপরোয়া গাড়ি চালনা এবং জাতীয় সংসদের স্টিকারযুক্ত গাড়ি অননুমোদিতভাবে ব্যবহারসহ কয়েকটি অভিযোগ পাবার পর তার বিরুদ্ধে মামলার কাগজপত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। এ মামলার বাদি হবেন শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক লিটন মিয়া।

রুমন শুধু মাদকাসক্ত নন তিনি একজন চাঁদাবাজ বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ রয়েছে। তবে সাংসদের ছেলে বলে তাকে সমীহ করে চলে পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে সাফায়াত সরোয়ার রুমন দীর্ঘদিন সৌদি আরবে থাকতেন। সেখানে একটি অনৈতিক কাজের দায়ে তাকে সৌদি সরকার দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করে। ঢাকার শাহবাগে মাদকসহ রুমন একবার ধারা পড়েছিলেন। কিছুদিন আগে শহরের বিউটি হোটেলে নারীসহ হাতেনাতে আটক হন রুমন।

এছাড়া সম্প্রতি তিনি গভীর রাতে মদ্যপ অবস্থায় বেসামালভাবে প্রাইভেট কার চালনার সময় ইকবাল হোসেন নামের একজন শিক্ষককে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করেন । সাতক্ষীরা শহর জুড়ে রুমনের কৃতিত্ব তিনি ৭০ থেকে ৮০ কিমি বেগে মোটর সাইকেল চালাতে পারেন নির্বিঘ্নে। প্রাইভেট কারও চালান বেপরোয়াভাবে। আর মাদক নিয়ে সব সময়ই থাকেন বেসামাল। চাঁদাবাজিতেও পিছিয়ে নেই রুমন। শেষ খবরে জানা গেছে রুমন সুন্দরবনের জলস্যুদের সাথে সখ্যতা স্থাপন করে তাদেরকে অস্ত্র ও গুলি সরবরাহ করে থাকেন। এ ছাড়া তিন তরুনীকে তিনি পাচার করছিলেন কিনা তা নিয়েও বেশ জল্পনা কল্পনা চলছে ।

(আরকে/এএস/মে ২০, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test