E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

বনদস্যু মাস্টার বাহিনীর ১০ সদস্যের আত্মসমর্পণ

২০১৬ মে ৩১ ১৫:৫৯:৫১
বনদস্যু মাস্টার বাহিনীর ১০ সদস্যের আত্মসমর্পণ

বাগেরহাট প্রতিনিধি : সুন্দরবনের বনদস্যু মাস্টার বাহিনীর ১০ সদস্য আত্মসমর্পণ করেছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের হাতে অস্ত্র-গোলাবারুদ তুলে দিয়ে আত্মসমর্পন করেছে সুন্দরবনের দুর্ধর্ষ বনদস্যু মাস্টার বাহিনী প্রধানসহ মাত্র ১০ বনদস্যু। মঙ্গলবার বিকালে বাগেরহাটের মংলায় বিএফডিসির জেটিতে ৫২টি বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র ও ৫ হাজার রাউন্ড বিভিন্ন ধরনের গোলাবারুদসহ আনুষ্ঠানিক ভাবে এসব বনদস্যুরা আত্মসমর্পন করে। এই আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সুন্দরবনের অন্যান্য সব বনদস্যু বাহিনীগুলোকে আত্মসমর্পনের আহবান জানিয়ে বলেছেন, দস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চাইলে তারাও এই সুযোগ পাবে। তবে দস্যুতা চালিয়ে যেতে থাকলে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা তাদেও দমনে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করবে।

বনদস্যুদের গডফাদারদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। সুন্দরবনসহ উপকূলের জেলে-বনজীবী ও পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত জিরো টলারেন্সের কথা উল্লেখ মন্ত্রী আরও বলেন, দস্যু দমনে এই এলাকায় র‌্যাব ও কোস্টগার্ডের শক্তি বাড়ানো হয়েছে। তাদের তৎপরতার ফলে সুন্দরবনে টিকতে না পেরে বনদস্যুরা এখন আত্মসমর্পন করছে। কোস্টগার্ডের জন্য ইটালী থেকে ৪টি নতুন টহল জাহাজ কেনা হয়েছে। সহসাই ওইসব জাহাজ কোস্টগার্ডের বহরে যুক্ত হবে। আইন-শৃংখলা বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করে সুন্দরবনসহ উপকূলে টহল জোরদার করা হচ্ছে। সুন্দরবনসহ উপকূল দস্যু মুক্ত করে পর্যটক ও জেলে-বনজীবীদের চলাচল নিরাপদ করা হবে।

আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (গোয়েন্দা) কর্নেল আনোয়ার হোসেন, পুলিশের খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি মনিরুজ্জামান, র‌্যাব-৮ এর অধিনায়ক লে: কর্ণেল ফরিদুল আলম, র‌্যাব-৬ এর অধিনায়ক খোন্দকার রফিকুল ইসলাম, বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. জাহাংগীর আলম, পুলিশ সুপার মো. নিজামুল হক মোল্যা এসমযে উপস্থিত ছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বিকালে হেলিকপ্টারে করে আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মংলায় আসে।

এরআগে রবিবার ভোর ৬টায় আত্মসমর্পনের সুযোগ নিতে মাস্টার বাহিনীর প্রধানসহ মাত্র ৭ বনদস্যু বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের চরাপুটিয়া খালে এসে তাদের ব্যবহৃত ৫১টি বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র ও ৫ হাজার রাউন্ড গোলাবারুদসহ র‌্যাব- ৮ এর কাছে আত্মসমর্পন করে। দূর্যোগপূর্ন আবহাওয়ার কারনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল মংলার ওই দিন আত্মসমর্পন অনুষ্ঠান আসতে না পারায় দুপুরে তা স্থগিত করে দেয় র‌্যাব। তবে রবিবার না হলেও গতকার মঙ্গলবারে এই আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে বনদস্যুদের সংখ্যা ৭ থেকে বেড়ে দশে দাড়িয়েছে। বেড়েছে একটি অস্ত্রেও সংখ্যাও।

আত্মসমর্পনকৃত বনদস্যুরা হলো বাগেরহাটের মংলা উপজেলার মিঠাখালী এলাকার আব্দুল লতিফ শেখের ছেলে বনদস্যু মাস্টার বাহিনী প্রধান মো. মোস্তফা শেখ ওরফে কাদের মাষ্টার, রামপাল উপজেলার বড় কাঠালিয়া এলাকার ইউসুফ আকনের ছেলে মাস্টার বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড সোহাগ আকন. মংলা উপজেলার মিঠাখালী এলাকার ইসমাইল খাঁনের ছেলে মো. সুলতান খাঁন, একই এলাকার আহাদ আলী শেখের ছেলে মো. ফজলু শেখ, রামপাল উপজেলার শ্রীফলতলা গ্রামের সফরুল শেখের ছেলে সোলাইয়াম শেখ, খুলনার দাকোপ উপজেলার মো. মতলেব শেখের ছেলে শাহীন শেখ, সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার মোনাগাছার নুরুল ইসলাম সরদারের ছেলে সুমন সরদার, মো. হারুন, মো. আরিফ সরদার ও আসাদুল ইসলাম কোকিল।

এদিকে সুন্দরবনের আন্ডারওয়াল্ড হাল নাগাদ খোঁজ খবর রাখে এমন একাধিক সূত্র সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আত্মসমর্পনকৃত মাস্টার বাহিনীর নিয়ন্ত্রনে থাকা সুন্দরবনের এলাকাগুলো গত দু’তিন দিনে বনদস্যু জাহাংগীর বাহিনীর সদস্যরা তাদের নিয়ন্ত্রনে নিয়েছে। মাস্টার বাহিনীর আত্মসমর্পন না করা সদস্যরা বনদস্যুরাও জাহাংগীর বাহিনীতে যোগ দিয়েছে। এত করে জাহাংগীর বাহিনী এখন সুন্দরবনের সব থেকে বড় বাহিনীতে রূপ নিয়েছে।

আইন-শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, সুন্দরবনের গহীনে অরন্যে দাঁপিয়ে বেড়ানো বনদস্যু মোস্তফা শেকের নেতৃত্বে মাস্টার বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন ভাবে আত্মসমর্পনের সুযোগ গ্রহনের সুযোগ খুজছে, এমন খবরের ভিত্তিতে র‌্যাবের গোয়েন্দা দল তৎপরতা শুরু করে। এক পর্যায়ে মাষ্টার বাহিনীর সদস্যদের আত্মসমর্পন করে যথাযথো আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে র‌্যাবের কাছে নিশ্চয়তা চায়। এরই ধারাবাহিকতায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে অস্ত্র-গোলাবারুদ তুলে দিয়ে আত্মসমর্পন করলো সুন্দরবনের দুর্ধর্ষ বনদস্যু মাষ্টার বাহিনী প্রধানসহ মাত্র ১০ বনদস্যু।

মাষ্টার বাহিনী প্রধান মোস্তফা শেখ আত্মসমর্পনের আগে সাংবাদিকদের জানান, বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার আলোচিত এক ইউপি চেয়ারম্যানের হাত ধরে প্রথমে সে বনদস্যুতায় নেমে পড়ে। পরে রাজু বাহিনীর সাথে থেকে সুন্দরবনে বনদস্যুতা চালায়। সুন্দরবনের এক সময়ের ত্রাস রাজু বাহিনী থেকে বের হয়ে সে নিজেই ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি গ্রুপ নিয়ে মাস্টার বাহিনী গঠন করে বনদস্যুতা চালাতে থাকে। বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনে র‌্যাবের তৎপরতায় ও ক্রসফায়ারে একের পর এক বাহিনী প্রধানসহ বনদস্যু নিহতের ঘটনায় তারা দীর্ঘদিন ধরে আত্মসমর্পনের চেষ্টা করতে থাকে।

এরই ধারাবাহিকতায় তারা র‌্যাবের সাথে যোগাযোগ স্থাপন কওে ৫২টি বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র ও ৫ হাজার রাউন্ড গোলাবারুদসহ র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পন করে। মাষ্টার বাহিনী প্রধান মোস্তফা শেখ আরো জানান, সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে তারা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান।

দেশের পশ্চিম উপকূল এবং সুন্দরবনের জেলে-বনজীবীদের ত্রাস ছিল বনদস্যু মাস্টার বাহিনী। ফিশিং ট্রলার, নৌকা ও জালের হিসাব করে নির্ধারিত হারে প্রতি মাসে মাস্টার বাহিনীকে চাঁদা দিতে হতো জেলে ও বনজীবীদের।

(একে/এএস/মে ৩১, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test