E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরায় সরকারি কৌশুলীর বিরুদ্ধে মামলা

২০১৬ জুন ০৭ ১৬:৪৭:১৪
সাতক্ষীরায় সরকারি কৌশুলীর বিরুদ্ধে মামলা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : আদালতের কার্যক্রম চলাকালে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কৌশুলীকে জীবন নাশের হুমকি, পরবর্তীতে আদালতের বারান্দায় গলা টিপে শ্বাসেেরাধ করে হত্যার চেষ্টা, সরকারি কাগজপত্র ছিঁড়ে ফেলা ও মোবাইল ভাঙচুরের অভিযোগে অতিরিক্ত সরকারি কৌশুলী অ্যাড. আব্দুল লতিফের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার সাতক্ষীরার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে অতিরিক্তি সরকারি কৌশুলী অ্যাড, মিজানুর রহমান এ মামলা দায়ের করেন। বিচারক মহিবুল হাসান অভিযোগটি শুনানী শেষে মঙ্গলবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত কোন আদেশ দেননি।

মামলার বাদি সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কৌশুলী অ্যাড, শেখ মিজানুর রহমান জানান, গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর রাতে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার রেউই বাজার এলাকা থেকে পুলিশ মোজাম সরদার নামের এক মাদক ব্যবসায়িকে তিন কেজি ৮০০ গ্রাম গাঁজাসহ গ্রেফতার করে।

এ ঘটনায় সদর থানার সহকারি উপপরিদর্শক আব্দুল মান্নান বাদি হয়ে গ্রেফতারবৃত আসামীসহ পাঁচজনের নামে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা (২৩নং)দায়ের করেন। ১৬ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা উপপরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ এজাজারভুক্ত আসামীদের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

এ মামলায় অতিরিক্ত সরকারি কৌশুলী অ্যাড. আব্দুল লতিফের সাক্ষরিত ওকালতনামায় আসামী মোজাম সরদারের পক্ষে গত বছরের পহেলা অক্টোবর অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে জামিননামা জমা দেন অ্যাড. আব্দুল লতিফের সেরেস্তার কনিষ্ট আইনজীবী সহকারি কৌশুলী অ্যাড. রেশমা পারভিন।

গত ১৯ মে ওই মামলায় অপর এক পলাতক আসামীর পক্ষে জামিন শুনানীতে অংশ নেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. আব্দুল মজিদ (২)। এ সময় মোজাম সরদারের তিন সপ্তাহে জামিন লাভের বিষয়টি বিচারক মহিবুল হাসানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মোজাম সরদারের জামিন আদেশটি সন্দেহজনক মনে করে ওই আসামীর জামিন বাতিল করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন।

একইসাথে জামিন জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সদর কোর্টের জিআরও মিজানুর রহমান, তাকে সহায়তাকারি আবু দাউদ, অ্যাড. আব্দুল লতিফের আইনজীবী সহকারি হাফিজুর রহমান গাইন, আসামী মোজাম সরদার ও তার পক্ষে স্থানীয় জামিনদার হিসেবে সাক্ষরকারি আমের আলীর বিরুদ্ধে ২৫ মে এর মধ্যে মামলা করার জন্য সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।

এর আগে অ্যাড. রেশমা পারভিন লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট বিচারককে জানান যে আইনজীবী সহকারি হাফিজুর রহমান গাইন তার সিল ও সাক্ষর জালিয়াতি করে এ জামিননামা দাখিল করেন।

অ্যাড. মিজানুর রহমান আরো বলেন,পলাতক আসামী মোজাম সরদারের সাক্ষর সম্বলিত একটি ওকালতনামায় আইনজীবী হিসেবে অ্যাড. আব্দুল লতিফসহ কয়েকজন আইনজীবী সাক্ষর করে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫২৮(বি) ধারায় ন্যয় বিচারের স্বার্থে গত ১৯ মে সদর থানার জিআর ৪৩৭/১৫ নং মামলার বিচারক মহিবুল হাসানের দেওয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে পহেলা জুন সকাল ১০টায় মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে আবেদন করেন।

শুনানীকালে সংশ্লিষ্ট আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কৌশুলী হিসেবে এ ধরণের আবেদনে আবেদনকারির অনুপস্থিতি ও রাষ্ট্রপক্ষের নির্ধারিত সরকারি কৌশলী হিসেবে তার সাক্ষর না করিয়ে আবেদনপত্র আদালতে জমা দেওয়া আইন বহির্ভুত। এসব কারণে তিনি এ আবেদন খারিজের প্রার্থনা করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে অ্যাড. আব্দুল লতিফ তাকে হুমকি ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে আদালত থেকে বেরিয়ে যান।

কিছুক্ষণ পর তিনি (মিজান) জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ঢুকে বিষয়টি প্রধান সরকারি কৌশলী অ্যাড, ওসমান গনিকে অবহিত করেন। তার পরামর্শ অনুযায়ি তিনি বিষয়টি মুখ্য বিচারিক হাকিমের খাস কামরায় বলার জন্য যান। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে সহকারি কৌশলীদের অফিসে যাওয়ার পথে যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালতের ফটকের সামনে অ্যাড. আব্দুল লতিফ তাকে (মিজান) মারপিটের পাশাপাশি গলা টিপে হত্যার চেষ্টা করেন।

সরকারি কাজগপত্র ছিঁড়ে দিয়ে তার (মিজান) মোবাইলটি ভেঙে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় তিনি গত ১ জুন অ্যাড. আব্দুল লতিফের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিলেও গত ৬ দিনেও মামলা নেয়নি পুলিশ। বাধ্য হয়ে তিনি মঙ্গলবার আদালতেক মামলা করেন।

মামলার আর্জিতে অ্যাড, আব্দুল লতিফের বিরুদ্ধে কলারোয়া থানায় উপজেলা কৃষি অফিসের টেলিভিশন চুরির মামলা, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে (সেশন ৪২/৯০) একটি হত্যা মামলায় দু’ আসামীকে খালাস দেওয়ার রামে আট লাখ ৭০ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়া. স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে আপোষে তালাক করিয়ে দেওয়ার নামে রেবেকা থাতুনের দু’ লাখ টাকা প্রতারণার মামলা (সিআরপি ২০১/১৫), জালিয়াতির মাধ্যমে শহরতলীর কদমতলায় জমি কিনে দেওয়ার মাধ্যমে আদালতপাড়ার এক চা বিক্রেতার প্রাতারণা মামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলার কথা তুলে ধরা হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অ্যাড. আব্দুল লতিফ মোবাইল ফোনে সাংবাদিকদের কাছে অ্যাড. মিজানুর রহমানকে মারপিটের কথা অস্বীকার করে বলেন, মিজান তার মোহরারের কাছে ঘুষ দাবি করায় প্রতিবাদ করেন তিনি। এ ছাড়া মিজানের বিরুদ্ধে ঘুষ দুর্নীতির বহু অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলার কথা অস্বীকার না করেই আব্দুল লতিফ বলেন, সকল ঘটনা বানোয়াট ও মিথ্যা।

(আরকে/এএস/জুন ০৭, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test