E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরায় সাড়ে ১১ কোটি টাকার ঔষধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম লুটপাটের অভিযোগ

২০১৬ জুন ১২ ১৮:০৮:২২
সাতক্ষীরায় সাড়ে ১১ কোটি টাকার ঔষধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম লুটপাটের অভিযোগ

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাড়ে ১১ কোটি টাকার ঔষধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম লুটপাটের অভিযোগে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের স্টোর কিপার একেএম ফজলুল হককে  বরখাস্ত করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডাঃ উৎপল কুমার দেবনাথ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে শহরতলীর বাঁকাল এলাকায় ৩০ বিঘা জমিতে মেডিকেল কলেজ এণ্ড হাসপাতালের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। ওই বছরই শহরের আমতলায় সাংসদ আব্দুর জব্বারের কমিউনিটি সেন্টারে শুরু হয় এমবিবিএস এর প্রথম বর্ষের শিক্ষা কার্যক্রম। ২০১৪ সালে মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম বাঁকালের নতুন ভবনে শুরু হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডাঃ আফম রুহুল হকের ঐকান্তিক চেষ্টার পরও তবে মেডিকেল কলেজের অনান্য ভবন নির্মানের কাজ যাথসময়ে ২০১৪ সালের জুন মাসের মধ্যে শেষ না হওয়ায় চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করা যায়নি।

সূত্রটি আরো জানায়, ২০১৪ -২০১৫ অর্থ বছরে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ এণ্ড হাসপাতালের জন্য সাত কোটি ৯৯ লাখ ৯৮ হাজার ৬৪৫ টাকার ঔষধ, গজ, ব্যাণ্ডেজ, তুলা ও সার্জিকাল যন্ত্রপাতি বরাদ্দ দেওয়া হয়। নিদ্দিষ্ট সময়ে মেডিকেল কলেজ এণ্ড হাসপাতালের নির্মাণ কাজ ও চিকিৎসা সেবার কাজ শুরু না করতে পারায় ওই মালামাল ফেরৎ পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠি পাওয়ার পর ২০১৪ সালের ১৪ জুলাই ৫৪৯ নং স্মারকে ওইসব মালামাল ফেরৎ না পাঠিয়ে সদর হাসপাতাল, সাতটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ব্যবহারের জন্য পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপসচীব আব্দুল মালেক সাতক্ষীরা সিভিল সার্জনকে এক চিঠি দেন।

নির্দেশ পেয়ে ওইসব মালামাল নিয়ম অনুযায়ি সাবেক সিভিল সার্জন ডাঃ সালেহ আহম্মেদ ওইসব মালামাল চাহিদা দিয়ে বুঝে নিয়ে সিভিল সার্জন অফিসের স্টোর কিপার একেএম ফজলুল হকের কাছে তাৎক্ষণিক হস্তান্তর করেন। চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি সিভিল সার্জন ডাঃ সালেহ আহম্মেদ অন্যত্র বদলী হন। পহেলা ফেব্র“য়ারি তার স্থলে যোগদান করেন ডাঃ উৎপল কুমার দেবনাথ।

ডাঃ উৎপল কুমার দেবনাথ সিভিল সার্জন হিসেবে যোগদান করার পরপরই গত অর্থ বছরের আট কোটি টাকা ও সাড়ে তিন কোটি টাকার মালামাল সম্পর্কিত কাগজপত্রে অনিয়ম ও দূর্ণীতি লক্ষ্য করেন। গত ২১ মার্চ দূর্ণীতির তদন্তে তিনি তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির প্রধান হিসেবে ডাঃ আবুল হোসেন ছাড়াও সদর হাসপাতালের মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডাঃ আসাদুজ্জামান ও সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডাঃ আরিফুজ্জামানকে অর্ন্তভুক্ত করা হয়। তদন্ত কমিটির সদস্যরা স্টোর কিপার ফজলুল হকের কাছে আট কোটি টাকার মালামাল সরবরাহ ও বন্টন সম্পর্কিত কাগজপত্র দেখতে চান। তিনি এ কিমিটির কাছে কোন কাগজপত্র দেখাতে রাজি হননি। একপর্যায়ে বিষয়টি সিভিল সার্জনকে অবহিত করলে তার পরামর্শ অনুযায়ি গত ১১ মে ফজলুল হককে চিঠি দিয়ে তার বক্তব্য লিখিতভাবে চানাতে বলা হয়। ১২ মে ফজলুল হক তার জবাবে কাগজপত্র সাবেক স্টোরকিপার আব্দুর রউফ ও মহসিন আলীর কাছ আছে বলে জানিয়ে দেন। সে অনুযায়ি কতন্ত কমিটির পক্ষ থেকে আব্দুর রউফ ও মহসিন আলীকে পৃথকভাবে জবাব দেওয়ার জন্য বলা হয়। ১৭ মে আব্দুর রউফ ও ১৮ মে মহসিন আলী তদন্ত কমিটির কাছে লিখিত জবাব দেন। জবাবে তারা দায়িত্ব হস্তাস্তরকালে সকল কাগজপত্র পরবর্তী স্টোর কিপারকে বুঝিয়ে দিয়েছেছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়। তদন্ত কমিটি ১৯ মে সিভিল সার্জনের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহে তারা ব্যর্থ হয়েছেন মর্মে উল্লেখ করেন। একই সাথে সিভিল সার্জেনের নির্দেশিত ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরে প্রায় দেড় কোটি টাকার ্ঔষধ, গাজ ব্যাণ্ডেজ (এমএসআর) ও প্রায় দু’ কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ঔষধ( সিএমএসডি ও ইডিসিএল) এর কাগজপত্র ফজলুল হকের কাছ থেকে সংগ্রহে ব্যর্থ হন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন। এ ছাড়া ফজলুল হকের বিরুদ্ধে চুয়াডাঙা সিভিল সার্জন অফিসে দায়িত্ব পালনকালে ২২ লাখ ৮০ হাজার টাকা আত্মসাতের কথা উল্লেখ করে দুদকের মামলায় টুয়াডাঙা সিভিল সার্জন চাকুরিচ্যুত হন ও ফজলুল হক কিস্তিতে ওই টাকা ফেরৎ দেওয়ার শর্তে নিজের চাকরি বাঁচান বলে উল্লেখ করা হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের সদ্য বরখাস্ত স্টোর কিপার ফজলুল হকের ব্যবহৃত মুঠো ফোনটি (০১৭১২০১৯৯৩২) বন্ধ পাওয়া যায়।
সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডাঃ উৎপল কুমার দেবনাথ টি রোববার সকালে শ্রীলঙ্কার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার প্রাক্কালে গত ৭ জুন স্টোর কিপার একেএম ফজলুল হককে সাময়িক বরখাস্তের বিষয় নিশ্চিত করে বলেন, তার বিরুদ্ধে আরো তদন্ত চলছে।

সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ও তদন্ত কমিটির প্রধান ডাঃ আবুল হোসেন বলেন, আগামি ২০ জুন শ্রীলঙ্কা থেকে ফিরে এলে ফজলুল হকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দূর্ণীতি সম্পর্কে সিভিল সার্জন উৎপল কুমার দেবনাথ বিস্তারিত বলতে পারবেন।



(আরএনকে/এস/জুন ১২,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test