E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাগরে ধরা পড়ছে বিষাক্ত পটকা, উদ্বিগ্ন জেলেরা

২০১৬ জুন ১৬ ১৮:১১:০৮
সাগরে ধরা পড়ছে বিষাক্ত পটকা, উদ্বিগ্ন জেলেরা

কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি :কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর ও নদী মোহনায় জেলেদের জালে বিষাক্ত পটকা বা পোটকা বা ফোটকা মাছ (চঁভভবৎ ভরংয) ধরা পড়ছে। মাছের তীব্র আকালের মধ্যে এই পোটকা মাছ (বৈজ্ঞানিক নাম "টেট্রাডন" ) ধরা পড়ায় জেলেরা আটককৃত মাছ তাৎক্ষনিক নদী ও সাগরে ফেলে দিচ্ছে। গত তিনদিনে হঠাৎ করে প্রচুর পরিমানে এই বিষাক্ত মাছ ধরা পড়ায় জেলেরাও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে।

কলাপাড়ার বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গত দিনে সাগর থেকে মাছ শিকার করে প্রতিটি মাছ ধরা ট্রলার ও জেলে নৌকায় এ বিষাক্ত পোটকা মাছ ধরা পড়ছে। জেলেরা এই মাছ বিষাক্ত জেনে তা মাছের ঝুড়িতে না রেখে উপকূলে ফিরে আসার আগেই তা ফেলে দিচ্ছে।

চর ধুলাসার গ্রামের জেলে মিরাজ মিয়া জানালেন, সাগরে জাল ফেললেও এখন আর তেমন মাছ পাওয়া না গেলেও তিনি ৫৬ টি পোটকা মাছ পেয়েছেন। তারমতো জেলে আলী আকবর ৬১ টি জাহাঙ্গীর হোসেন ৬৫ টি, আনোয়ার হোসেন ২০ টি, কামাল মিয়া ৩১ টি , আরিফ হোসেন ৪৪টি পোটকা মাছ পেয়েছেন। প্রতিটি মাছ গড়ে পাঁচশ গ্রাম থেকে সাড়ে সাত কেজি ওজনের।

চট্রগামের এফবি সিয়াম ট্রলারের জেলে সিদ্দিকুর রহমান জানান, সাগরের হিরন পয়েন্ট থেকে শুরু করে সুন্দর মোহনা, ফাতড়ার ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, সুন্দর বন, ঢোশ ও কুয়াকাটার বিভিন্ন মোহনায় এই বিষাক্ত মাছ ধরা পড়ছে। প্রতিবছর মানুষের অসাবধানতায় এই মাছ খেয়ে অনেক মানুষ মারা যায়। তাই জালে আটকা পড়া মাছ উপকূলে বিক্রির জন্য না এনে তারা সাগরেই ফেলে দিয়েছেন। একই এলাকার এফবি মিতানুর, এফবি রহিমা ট্রলারের জেলে আকবর হোসেন ও জাহিদুল মোল্লা বলেন, তারা প্রায় দুই মন এই মাছ পেয়েছেন। কিন্তু এগুলো বিদেশে রপ্তানী হয় জেনেও সাগরে ফেলে দিয়েছেন। কেননা ভুলে এই মাছ এখানকার মানুষ খেয়ে ফেললেই অসুস্থ্য হয়ে পড়বে। মৃত্যুও হতে পারে।

জানা যায়, বঙ্গোপসাগরে প্রায় ২০-২৫টি প্রজাতির পটকা মাছ পাওয়া যায়। তবে কলাপাড়ার উপকূলে টেট্রাওডোন কুটকুটিয়া প্রজাতির পোটকা বা পটকা মাছ বেশি পাওয়া যায় । এ মাছটিকে স্থানীয়ভাবে টেপা বা ফোটকা মাছও বলা হয়। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনষ্টিটিউট’র গবেষনায় দেখা গেছে সাধারণত প্রজনন ঋতুতে বা বর্ষাকালে এ মাছটি অধিক মাত্রায় বিষাক্ত হয়ে পড়ে। পটকা মাছের বিষ সায়ানাইড(ঈুধহরফব) এর চেয়েও অধিকতর বিষাক্ত এবং জীবননাশক। কোনো কোনো সামুদ্রিক পটকা প্রতি গ্রামে ৪০০০ গট পর্যন্ত বিষ (ঞঞঢ) বহন করে থাকে। অর্থাৎ একজন সুস্থ্য ব্যক্তি এরূপ বিষাক্ত পটকার ৩ গ্রাম খেলেই বিষাক্রান্ত হয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে মারা যাবে। অনেকের ধারণা, পটকা মাছ রান্না করলে এর বিষাক্ততা নষ্ট হয়ে যায়। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। অত্যধিক তাপে বিষের উপাদান (ঈযবসরপধষ ঝঃৎঁপঃঁৎব) একই অবস্থায় থেকে অন্য অবস্থায় রূপান্তর হতে পারে। কিন্তু এতে বিষাক্ততার খুব একটা তারতম্য হয় না। তাই পোটকা মাছ খাওয়ার ২০ মিনিট থেকে তিন ঘন্টার মধ্যে এর বিষক্রিয়া শুরু হয়। (তথ্য উইকিপিডিয়া)

কলাপাড়ার নদী উপকূলে পাওয়া সবুজ পটকার (ঈযবষড়হড়ফড়হ ভষাঁরধঃরষরং) শরীর কিছুটা চাপা। প্রায় ১২ সেমি লম্বা, মাথা ও পিঠ চওড়া। লেজের দিক সররু। এদের পিঠের দিক জলপাই সবুজ, পাশ ও পেট সাদা, পিঠ ও পাশে কালো কালো দাগ থাকে। বঙ্গোপসাগরে পাওয়া দাগফুটকি পটকার (ঞবঃৎধফড়হ পঁঃপঁঃরধ) মাথা ও পিঠ চওড়া। লেজের দিক সরু, পিঠ সবুজ-হলুদ, পেট সাদা। সারাদেশে স্বাদুপানিতে সর্বত্রই আছে। পটকা মাছ বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বহীন হওয়ায় অনেক অসাধু জেলে অন্য মাছের সাথে এই মাছ মিশিয়ে বিক্রি করে। ক্রেতারা এই মাছের ক্ষতিকর দিক না জেনে ক্রয় করায় প্রতিবছরই পোটকা মাছ খেয়ে মানুষ মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

একাধিক মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, তারা এই মাছ ক্রয় করেণ না। তবে যারা শুটকি মাছের ব্যবসা করে তারা বিভিন্ন প্রজাতির মাছের সাথে এগুলোও শুটকি করেণ। এই মাছ খেয়ে অনেক মানুষ মারা যাওয়ার খবর তাঁরা শুনেছেন।

কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম জানান, কি কারণে এই সময়ে এই মাছ ধরা পড়ছে বিষয়টি জেনে বলতে পারবেন। তবে এই মাছটি বিষাক্ত। এটা না খাওয়াই ভালো।


(এমকেআর/এস/জুন ১৬,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test