E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নওগাঁর মান্দায় উদয় হত্যাকান্ডের এক সপ্তাহেও কুলকিনারা হয়নি

২০১৬ জুন ১৮ ২০:০৫:৪০
নওগাঁর মান্দায় উদয় হত্যাকান্ডের এক সপ্তাহেও কুলকিনারা হয়নি

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর মান্দায় লাশ উদ্ধারের এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও উদয় চন্দ্র (৩৫) হত্যাকান্ডের কোনো কুলকিনারা করতে পারেনি পুলিশ। পরকীয়া প্রেম, নাকি নির্বাচনী দ্বন্দ্বে তিনি খুনের শিকার হয়েছেন গ্রামবাসির মনে এমন নানা সন্দেহ ও প্রশ্ন দাঁনা বেধে উঠেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, হত্যাকান্ডের মোটিভ উদ্ধারে পুলিশের কোন তৎপরতা নেই। তাই ৮ দিনেও ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

গত ১১ জুন সন্ধ্যায় উপজেলার হাটোর গ্রামের কালাই পুকুরিয়া মাঠ থেকে অজ্ঞাত পরিচয় হিসেবে উদয় চন্দ্রের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় গ্রাম পুলিশ জাহাঙ্গীর আলম মান্দা থানায় একটি ইউডি মামলা দায়ের করেন। পরিধেয় বস্ত্র ও হাতের আংটি দেখে স্ত্রী পুর্ণিমা রানী লাশটি তার স্বামী উদয় চন্দ্রের বলে সনাক্ত করেন। পরে ময়নাতদন্ত শেষে লাশের সৎকার করে উদয় পরিবারসহ গ্রামবাসি।

জানা গেছে, এ হত্যাকান্ডের বিষয়ে স্থানীয় মুসলমান ও হিন্দু পল্লীর লোকজন দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে একে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর অপচেষ্টা করছে। সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে দু’পক্ষের লোকজন উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়েও জড়িয়ে পড়েন। নিহতের স্ত্রী পুর্ণিমা রানী জানান, গত ৯ জুন দুপুর ১২টা দিকে পারিবারিক বিষয় নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বাধে। এসময় দেবর প্রদীপ কুমার লাঠি দিয়ে তাদের উভয়কে মারপিট করে। এক পর্যায়ে তাদের ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র বাইরে ফেলে দেয় দেবর প্রদীপ। পরে বাঁশের কঞ্চির বেড়া দিয়ে তাদের বসবাসের ঘরটি প্রদীপ দখল করে নেয়। এ অবস্থায় বেলা ১টার দিকে স্বামী উদয় চন্দ্র বিচার চাওয়ার কথা বলে নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য ইসাহাক আলীর বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যান। এরপর থেকেই তিনি নিরুদ্দেশ ছিলেন।

পুর্ণিমা রানী দাবি করেন, গত ২৮ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি স্থানীয় হিন্দু পল্লীর বাসিন্দা প্রদীপ কুমারের টিউবওয়েল প্রতীকের পক্ষে নির্বাচন করেন। কিন্তু দেবর-ভাসুরসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা কাজ করেন বিজয়ী প্রার্থী ইসহাকের ভ্যানগাড়ি প্রতীকের পক্ষে। এনিয়ে নির্বাচনের পর থেকেও পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। নির্বাচনে জয়-পরাজয়কে কেন্দ্র করেই তার স্বামীকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে। ঘটনায় থানায় মামলা করতে চাইলে পুলিশ তা নেয়নি বলেও অভিযোগ করেন নিহতের স্ত্রী পুর্ণিমা রানী।

তবে মুসলমান পল্লীর বাসিন্দাদের দাবি, স্থানীয় জগন্নাথ চন্দ্র নামে একব্যক্তির সঙ্গে নিহত উদয়ের স্ত্রী পুর্ণিমা রানীর পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। পারিবারিক দ্বন্দ্ব কাজে লাগিয়ে উদয়কে পৃথিবী থেকে জগন্নাথই সরিয়ে ফেলতে পারে বলে দাবি তাদের। তবে পরকীয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে জগন্নাথ চন্দ্র বলেন, নির্বাচনে মেম্বার প্রার্থী ইসাহাকের পক্ষে কাজ না করায় তাকে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

এদিকে উভয় পল্লীর একাধিক ব্যক্তি জানান, উদয় চন্দ্র ঘরামী অত্যন্ত সাদামাটা জীবন যাপন করতেন। কারো সঙ্গে কখনও ঝগড়া বিবাদ করেন নি। নিখোঁজের দুইদিন পর গ্রামের কালাই পুকুরিয়া মাঠ থেকে পোড়া মবিল মাখা অবস্থায় তার বিকৃত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নির্মম এ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি করেন তারা।

বিজয়ী ইউপি সদস্য ইসাহাক আলী জানান, নিহত উদয় চন্দ্র দীর্ঘদিন ধরে তার বাড়িতে শ্রমিকের কাজ করে আসছিল। এ কারণে তাদের পরিবারের সঙ্গে উদয়ের সখ্যতা গড়ে উঠে। উদয় হত্যাকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, নির্বাচনী দ্বন্দ্বে নয়, পরকীয়ার কারণেই উদয় চন্দ্র খুন হয়ে থাকতে পারে।

থানার অফিসার ইনচার্জ মোজাফফর হোসেন জানান, নিহত উদয় চন্দ্রের লাশ প্রথম অবস্থায় বেওয়ারিশভাবে উদ্ধার করা হয়েছিল। সেই জন্য গ্রামপুলিশ জাহাঙ্গীরকে দিয়ে ইউডি মামলার পর ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করা হয়। মামলা না নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাবার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।


(বিএম/এস/জুন ১৮,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test