E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চিকিৎসায় অবহেলায় ডাক্তার লাঞ্ছিত, থানায় মামলা

কুয়াকাটা হাসপাতালে ডাক্তার-কর্মচারীদের তিনদিনের অ-ঘোষিত কর্মবিরতি

২০১৬ জুন ২২ ২২:৫৪:১০
কুয়াকাটা হাসপাতালে ডাক্তার-কর্মচারীদের তিনদিনের অ-ঘোষিত কর্মবিরতি

কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি :ডাক্তার লাঞ্চনার ঘটনায় বন্ধ হয়ে গেছে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কুয়াকাটা হাসপাতালে সব ধরণের চিকিৎসা সেবা। ডাক্তার ও কর্মচারীদের অ-ঘোষিত কর্মবিরতিতে গত তিনদিন ধরে হাসপাতালে ইনডোরে চিকিৎসা সেবা বন্ধ থাকায় পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটায় ভ্রমণে আসা পর্যটকসহ অর্ধলক্ষাধিক মানুষ সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাচ্ছে। জরুরী চিকিৎসার জন্য রোগীদের ২২ কিলোমিটার দূরের কলাপাড়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যেতে হচ্ছে।

গত ২০ জুন কলাপাড়ার লতাচাপলী ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের জাকির ফকিরের ছেলে বশার ফকির কেরোসিন চুলা বিস্ফোরণে দগ্ধ হন। তাকে কুয়াকাটা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে ডাক্তাররা তার চিকিৎসায় দীর্ঘ সময় নেন এবং চিকিৎসা করাতে অপরাগত প্রকাশ করেণ। এ ঘটনায় রোগীর স্বজনরা ক্ষিপ্ত হয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. কামরুজ্জামানকে লাঞ্চিত করে। পরবর্তীতে ওই রোগীকে কুয়াকাটা হাসপাতাল থেকে রেফার করলে ঢাকায় নেয়ার পথে বশার মারা যায়।

ডাক্তারের অবহেলায় রোগী মৃত্যুর ঘটনায় রোগীর স্বজনরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে ডা. কামরুজ্জামান নিজেকে বাঁচাতে মহীপুর থানায় নিহত বশারের পিতা জাকির ফকিরকে আসামী করে সোমবার বিকালে মামলা দায়ের করেণ। এরপরই তিনি ছুটিতে চলে যান।

এদিকে এ ঘটনার পর থেকে কুয়াকাটা হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা বন্ধ রয়েছে। হাসপাতালের গেট অধিকাংশ সময়ই থাকছে তালাবদ্ধ। সালমা খাতুন নামে একজন স্বাস্থ্য সহকারী বুধবার সকালে আউটডোরে মা ও শিশু স্বাস্থ্যের চিকিৎসা সহায়তার জন্য আসলেও ডাক্তার না থাকায় গোটা হাসপাতাল ভুতুরে বাড়িতে পরিণত হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, কলাপাড়া হাসপাতালের ডাক্তারদের একটি টিম সোমবার রাতে কুয়াকাটা হাসপাতাল পরিদর্শন করে হাজার হাজার রোগীকে বিপাকে ফেলে কুয়াকাটা হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. কামরুজ্জামানকে ছুটিতে যাওয়ার পরামর্শ দেন। মূলত কলাপাড়া হাসপাতালের স্বাস্থ্য প্রশাসক সরাসরি ওই ডাক্তারের পক্ষ অবলম্বন করায় কুয়াকাটা হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বন্ধ রয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেণ।

বুধবার প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা কুয়াকাটা হাসপাতালে অবস্থান করলেও কোন রোগীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে দেখা যায় নি। মম্বিপাড়া গ্রামের আসমত আলী তার সাড়ে তিন বছরের নাতনী সুফিয়াকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসলেও তাকে কোন চিকিৎসা দেয়া হয়নি। একই ভাবে পায়ে আঘাত নিয়ে শহিদুল ইসলাম (৩৫), জ্বর নিয়ে আলমগীর হোসেন (৪৮), পেটের ব্যাথা নিয়ে আকলিমা বেগম (৩৩), মাথায় আঘাত নিয়ে আনোয়ার হোসেন (৪০) কুয়াকাটা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসলেও ডাক্তার না থাকায় তাদের ২২ কিলোমিটার দূরে কলাপাড়া হাসপাতাল ও আলীপুরের কয়েকটি ফার্মেসীতে গ্রাম্য ডাক্তারদের নিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। রোগীদের অভিযোগ, ডাক্তাররা যদি এইভাবে কর্মবিরতি পালন করে তাহলে তাঁরা কোথায় যাবেন।

এ ব্যাপারে ডা. কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, কুয়াকাটা হাসপাতালে বার্ণ রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকলেও আমি বার্ণ রোগীকে দেখতে যাওয়ার সময় আমার ওপর হামলা হয়েছে। তবে কলাপাড়া হাসপাতালের ডাক্তারদের পরামর্শে ছুটিতে গেছেন কিনা এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন আমি তিন দিনের ছুটিতে আছি। শুক্রবার পর্যন্ত আমি ছুটিতে থাকবো। তবে নিহত বশারের পিতা জাকির ফকির ডাক্তারের উপর হামলা কিংবা তাকে লাঞ্চিত করার কথা অস্বীকার করে বলেন শুধু কথা কাটাকাটি হয়েছে।

কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আব্দুল মান্নান জানান, কুয়াকাটা হাসপাতালের ডাক্তার কামরুজ্জামান তিনদিনের ছুটিতে আছেন। তবে কর্ম রিতির কথা অস্বীকার করে বলেন, হাসপাতালে ডাক্তার না থাকায় ইনডোরে চিকিৎসা বন্ধ আছে। ডাক্তার পোষ্টিং না হওয়ায় আপাতত জরুরী বিভাগ বন্ধ রয়েছে।

নবগঠিত মহিপুর থানার ওসি মাকসুদুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, রোগীর স্বজনদের হামলার ঘটনায় ডা. কামরুজ্জামান একটি মামলা করেছেন। এ ব্যাপারে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।


(এমকেআর/এস/জুন২২,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test