E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

প্রবীণ নীতিমালা প্রয়োগ চায় নওগাঁর প্রবীণরা

২০১৬ জুন ২৬ ১৬:০৮:০৭
প্রবীণ নীতিমালা প্রয়োগ চায় নওগাঁর প্রবীণরা

নওগাঁ প্রতিনিধি : বর্তমান সরকার প্রবীণ নীতিমালা প্রনয়ণ করলেও তার সঠিক প্রয়োগের অভাবে সুফল পাচ্ছে না নওগাঁর প্রবীণরা।

ফলে সেকালের মত প্রবীণদের এখনও পরিবারের সদস্যরা দায়সারাভাবে দেখাশুনা করছে। প্রবীণ নীতিমালা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হলে এ সমস্যা থেকে তারা রক্ষা পেত বলে অভিমত প্রদান করেন তারা।

মানুষ যে পেশাই নিয়োজিত থাকুক না কেন, প্রত্যেককেই একদিন প্রবীণের স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। যদি না তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে। অর্থাৎ একজন মানুষ যে আয়ুস্কাল নিয়ে এই পৃথিবীতে এসেছেন সেই আয়ুস্কাল পর্যন্ত যদি বেঁচে থাকেন, তবে তাকে অবশ্যই প্রবীণে উপনীত হতে হবে। ধনী-গরীব, শিক্ষিত-নিরক্ষর, কৃষক, শ্রমিক, মজুর, চাকুরীজিবী ইত্যাদি শ্রেণি-পেশার মানুষরা প্রবীণ বয়সে একই ধরণের সমস্যার মুখোমুখি হন। ধনী পরিবারের প্রবীণদের মৌলিক চাহিদা তথা- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসার সমস্যা না থাকলেও সামাজিক মর্যাদা ও অধিকারহীনতার যে সমস্যা তা দরিদ্র পরিবারের প্রবীণদের মতোই। প্রবীণ নারী-পুরুষরা বার্ধক্য জনিত কারণে শক্ত ও ভারি কাজ করতে না পারলেও পরিবারের বিভিন্ন কাজে তাঁরা বিশেষ অবদান রেখে চলেছেন।

পরিবারে ছোট শিশু থাকলে তাদের দেখভাল ও লালন পালনের দায়িত্ব বর্তায় এই সব পরিবারের প্রবীণ ব্যক্তির ওপর। দরিদ্র ও প্রান্তিক পরিবারের প্রবীণ নারী-পুরুষরা গরু-ছাগলের পরিচর্যাসহ সংসারের অন্যান্য কাজে সর্বদা নিয়োজিত থাকেন। যে সকল পরিবারে স্বামী-স্ত্রী চাকুরী বা অন্যান্য আয় মূলক কর্মকান্ডে নিয়োজিত থাকেন, সে সকল পরিবারে প্রবীণরাই পরিবারের রক্ষকের ভুমিকা পালন করে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রেই প্রবীণরা মূল্যবান পরামর্শ দিয়ে আমাদের উপকৃত করে থাকেন। কিন্তু প্রবীণদের এ সকল অবদান স্বীকার করার ক্ষেত্রে আমরা যথেষ্ট অবজ্ঞা প্রদর্শন করি। প্রবীণ বয়সে মানুষ যে সকল সমস্যার মুখোমুখি হয় তাঁর অন্যতম হলো পরিবারে তাঁর মর্যাদা কমে যাওয়া ও পরিবারের নিকট বোঝা হয়ে যাওয়া। একজন মানুষ যখন তাঁর কর্মক্ষমতা হারিয়ে প্রবীণ বয়সে এসে উপণীত হন তখন পরিবারের সদস্যরা ভুলেই যায় ওই প্রবীণ মানুষটিই এক সময় হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে তাদের জন্য অন্ন-বস্ত্র যুগিয়েছেন।

পরিবারের সদস্যরা প্রবীণ ব্যক্তিটিকে বোঝা মনে করতে নূন্যতম কুন্ঠাবোধ করে না। শুধু পরিবারেই নয়। পরিবারের বাইরেও প্রবীণরা নানা বঞ্চনার শিকার হয়ে থাকেন। নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রবীণদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের সামাজিক ভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। রাস্তার মোড়ে চায়ের দোকানে গিয়ে বসলে অনেক ক্ষেত্রেই দোকানিরা বিরক্ত বোধ করে। হাসপাতালে তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা না থাকায় চিকিৎসা নিতে গিয়ে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ব্যাংকে বয়স্ক ভাতার টাকা তুলতে গেলে প্রায়দিন দুপুরের পর তাদেরকে টাকা দেয়া হয়। তাছাড়া দীর্ঘ লাইন ধরে একটি নির্দিষ্ট দিনে টাকা দেয়ায় সকলে একসঙ্গে ব্যাংকে আসায় প্রচন্ড ভিড় হয়ে থাকে। এতে তাদের ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয়। যা তাদের জন্য বেশ কষ্টদায়ক। বাসে প্রবীণদের জন্য বসার নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় কষ্ট করে যাতায়াত করতে হয়।

এ বিষয়ে অবসর প্রাপ্ত কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা জানান, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে প্রবীণদের জন্য বিশেষ মর্যাদা ও ছাড়ের ব্যবস্থা আছে। গণপরিবহনে তাদের জন্য রয়েছে বিশেষ সুবিধা। বাংলাদেশে প্রবীণদের মর্যাদা ও অধিকার নিয়ে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ না থাকায় প্রবীণরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বঞ্চনা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে তাঁরা জানান।

দেশের ষাটোর্ধ বয়স্ক প্রবীণদের মর্যাদা সুরক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁরা জাতীয় প্রবীণ নীতিমালার বাস্তবায়নসহ সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে তাদের জন্য বিশেষ চিকিৎসার ব্যবস্থা ও গণপরিবহনে আসন সংরক্ষণের জন্য জোর দাবী জানান ।

(বিএম/এস/জুন২৬,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test