E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

“ক্ষুধার সাথে যুদ্ধ করতে করতে কবিতার ছন্দ থেমে গেছে”

২০১৬ জুলাই ০৩ ১৫:৪৪:৫৩
“ক্ষুধার সাথে যুদ্ধ করতে করতে কবিতার ছন্দ থেমে গেছে”

কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি :“কবিতা” তাঁর কবিতারই নামই যেন নিঃস্ব, সব হারানো। কবিতার জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে কষ্ট এসে দানা বাঁধছে। ভয়,আতংক ও কষ্টের নির্মমতায় হাতে গলায় পড়তে হয়েছে অসংখ্য তাবিজ-কবচ। মাত্র দশ বছর বয়সে বাবা-মা কে হারিয়ে ক্ষুধার সাথে যুদ্ধ করতে করতে এখন কবিতার ছন্দ থেমে গেছে। কিন্তু তারপরও ভবিষতের স্বপ্ন দেখে কবিতা। স্কুলে যায়।

দারিদ্রতা তাকে অক্টোপাশের মতো গ্রাস করায় কখনও কখনও স্কুলের বই-খাতা ফেলে রেখে দাদীর সাথে ভিক্ষায় বের হতে হয়। কিন্তু এই রমজান মাস শুরু হওয়ার পর ভিক্ষা করতে না পারায় অধিকাংশ দিনই চুলোয় হাড়ি উঠেনি। তাঁর সহপাঠী ও প্রতিবেশীরা যখন বাবা-মায়ের হাত ধরে নতুন জামা-কাপড় কিনতে যায় আবার কিনে তাকে দেখিয়ে যায় তখন ঘরে কোনে বসে একাকী কাঁদে কবিতা। কারণ গত তিন ঈদে নতুন জামা-কাপড় পড়া কিংবা ঈদের দিন সেমাই-মাংস খাওয়ায় উৎসব যে হয় না কবিতাদের ঘরে।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ডালবুগঞ্চ ইউনিয়নের বরকতিয়া গ্রামে বৃদ্ধ দাদী চাম্পা বেগমই এখন ১০ বছরের কবিতার শেষ আশ্রয়। তিন বছর আগে মা জেসমিন বেগম ও দুই বছর আগে বাবা কবির গাজী মারা যাওয়ার পর কবিতার স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে। দারিদ্রতার কারণে একমাত্র কিশোর ভাই এখন গার্মেন্টস শ্রমিক। সেই ভাইয়ের সাথে দেখা হয় না কবিতার এখন আর। এই বিশাল পৃথিবীতে কবিতা একাকী ও নিঃস্ব।

শনিবার সকালে কবিতার সঙ্গে যখন দেখা হয় কবিতার হাতে একটি নতুন শাড়ি। দাদী অসুস্থ্য তাই প্রায় পাঁচ মাইল পায়ে হেঁটে এই শাড়ি নিতে এসেছেন। কবিতার ভাষায়,“ দাদি নতুন এই শাড়ি পড়বে হ্যাতেই আমি খুশি। আমাগো তো আর কেউ কিইন্না দেয়ার নেই”। তুমি কি কিনেছো ঈদে কবিতা জানতে চাইলে চোখ ছলছল হয়ে যায়। বাকরুদ্ধ হয়ে কিছুক্ষন থেমে থাকে। একটু পর চোখের জল মুছে বলে,হেই কবে নতুন জামা পড়ছি মনে নাই। বাপ-মাও নাই আর আমার ঈদও নাই।

বরকতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী কবিতা এবছর চারটি ছাড়া বাকি রোজা রেখেছে। নুন, শাক, কচু, আলু, নুনে-ভাতে চলছে কবিতার একেকটি প্রহর। মাংস দিয়ে একটি বেলা খাবার কবে পেটে পুড়েছে তা তার মনে নেই। বাব-মা হারা কচিমুখের এ কবিতার অতীত, বর্তমান যেন এক হয়ে গেছে। আর ভবিষ্যত তো বুঝতেই পারে না। এ যেন আর পাল্টানোর নেই। খুঁজে পাচ্ছে না আলোর পথ। কে নেবে কবিতার ভবিষ্যত দায়িত্ব। কেইবা তাকে কিনে দেবে ঈদের এক সেট নতুন পোশাক। সব যেন পড়ে আছে অনিশ্চয়তায়।






(এমকেআর/এস/জুলাই০৩,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test