E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরার সেই মহিলা সাংসদ পুত্র পেটালেন গরু ব্যবসায়ীকে

২০১৬ জুলাই ০৯ ২০:৩৫:০৮
সাতক্ষীরার সেই মহিলা সাংসদ পুত্র পেটালেন গরু ব্যবসায়ীকে

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : ‘আমি রোজা ছিলাম। এ অবস্থায় আমাকে জুয়েলারি ব্যবসায়ী  মিলন পাল তার বাগান বাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে টানা দেড় ঘন্টা পিটিয়েছে আমাকে। বলেছে হয় টাকা দে, না হলে তোর বউকেও তুলে নিয়ে আসবো। তুইও বাঁচতে পারবি না’।

সাতক্ষীরার গরু ব্যবসায়ী সাহেব আলির এ অভিযোগ একজন জুয়েলারি ব্যবসায়ী ও সাতক্ষীরার মহিলা সাংসদপুত্রের বিরুদ্ধে। তিনি সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আর সাংসদ পুত্র রুমনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দিলেও পুলিশ তা রেকর্ড করেনি।

সাতক্ষীরার পদ্মশাখরা গ্রামের গরু ব্যবসায়ী সাহেব আলি বলেন ‘মঙ্গলবার ২৯ রোজার দিন বিকেলে আমার কাছে ফোন করেন মিলনের বাবা জুয়েলারি মালিক দেবদাস পাল। বলেন, জরুরিভাবে তার দোকানে আসতে। আমি রোজা বলে অপারগতা প্রকাশ করি। পরে আলোচনার কথা বলে আমার বাড়িতে পাঠানো হয় দুইজন অপরিচিত লোককে। তারা মাইক্রোতে এসে আমাকে তুলে নিয়ে যায়’। তিনি জানান আমাকে মিলন জুয়েলার্সে নিয়ে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন তার বাবা দেবদাস পাল। কিসের টাকা এবং কেনো দেবো বলার সাথে সাথে রুমন ও মিলনসহ কয়েকজন আমাকে ফের সেই মাইক্রোতে তুলে নিয়ে যায় মিলনের বাগানবাড়ি মিল বাজার এলাকায়। সেখানে নিয়ে সাংসদপুত্র সাফায়াত সরোয়ার রুমন ও মিলন পাল প্রথমে কিল ঘুষি ও লাথি মারতে থাকেন। পরে লোহার পুরু পাত ও হকি স্টিক দিয়ে নির্দয়ভাবে মারপিট করা হয় আমাকে। মুখে বলে ‘হয় টাকা দে ,না হলে তোর বউকে তুলে আনবো’। তিনি জানান আমার বুকের ওপর লোহার রড রেখে দুই পাশে পা দিয়ে চাপ দেয় রুমন ও মিলন। আমি এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। কিছুক্ষণ পর আমার জ্ঞান ফিরলে তারা আমাকে বলে বাড়িতে ফোন করতে। নগদ টাকা ও ব্যাংকের চেক নিয়ে আসতে বলে। তিনি জানান ‘আমার প্রতিবেশি শফিকুল ইসলামকে জানালে তিনি আমার বাড়ি থেকে নগদ ৬১ হাজার টাকা ও ইসলামী ব্যাংকের একটি চেক নিয়ে আসেন। চেকটি মিলনের বাবার কাছে দিলে তিনি তা আমাকে টর্চারের স্থানে পাঠিয়ে দেন। সাহেব আলি বলেন ‘এবার আমাকে বাধ্য করা হয় চেকে চার লাখ উনচল্লিশ হাজার টাকা লিখে স্বাক্ষর করতে।

এরপর রুমন ও মিলন আমাকে মাইক্রোবাসে পাকাপুলের মোড়ে মিলন জুয়েলার্সের সামনে নামিয়ে দিয়ে যায়। তিনি জানান বিপদের কথা শুনে আত্মীয় স্বজনরা এসে আমাকে রাতেই সাতক্ষীরা হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে দেন। সাহেব আলি জানান ‘বাংলাদেশি গরু ব্যবসায়ীদের কাছে আমার ৩৮ লাখ টাকা বাকি পড়েছে। এ টাকা আদায় করতে পারছি না। আবার মিলনও আমার কাছে ৩৯ হাজার টাকা পাবেন। ব্যবসা না থাকায় তাও শোধ দিতে পারছিনা’। এই গরু ব্যবসায়ী বলেন ‘ মহিলা সাংসদ রিফাত আমিনের পুত্র সাফায়েত সরোয়ার রুমনের যে এতো ক্ষমতা তা জানতাম না।আমাকে নিজ হাতে সাড়ে তিন হাত লম্বার লোহার পুরু পাত দিয়ে কমপক্ষে ৪০টি আঘাত করেছেন আমার সারা দেহে। আর সোনা চোরাচালানি মিলন পাল আমাকে নিজেও মেরেছেন এবং রুমনকে আরও বেশি উসকে দিয়েছেন’।

সাহেব আলি আরও বলেন আমি একজন ভারতীয় গরু ব্যবসায়ী। ভারতীয় গরু বাংলাদেশ সীমান্তে পৌঁছানো হলে খাটাল থেকে আমি তা পাইকারি দামে কিনি। নগদে অথবা বাকিতে। এই গরু বাংলাদেশে বিক্রির পর হাতে আসা টাকা গরুর ভারতীয় মালিকদের কাছে পৌছে দেওয়ার দায়িত্ব নেন স্বর্নব্যসায়ী মিলন পাল। সাতক্ষীরার শহরে মিলনের জুয়েলারি দোকান ‘মিলন জুয়েলার্স’ রয়েছে। সেই সুবাদে তার সাথে আমার দীর্ঘদিনের পরিচয়। তিনি জানান মিলন আমার টাকা নিয়ে তার বিনিময়ে সোনা কিনে ভারতে পাঠিয়ে আমার গরুর টাকা পরিশোধ করেন। এভাবে দীর্ঘদিন ব্যবসা চলছিল মিলনের সাথে। তিনি বলেন মিলনের দোকানে কোনো খরিদ্দার দেখা যায় না। তার মূল ব্যবসা ঢাকা থেকে সোনা কিনে এনে তা ভারতে পাচার করা।

সাহেব আলি বলেন আমাকে জিম্মি করে মারপিট করায় পরদিন সকালে সাতক্ষীরা থানায় একটি মামলা জমা দেই। ‘আমি কি ন্যায় বিচার পাবো’ প্রশ্ন করে তিনি বলেন ‘রুমন এমপির ছেলে। শহরের বড় মাস্তান। গত ২০ মে তার মা সংরক্ষিত মহিলা আসন ৩১২ এর সাংসদ মিসেস রিফাত আমিনের লাইসেন্স করা অস্ত্র , স্টিকার লাগানো গাড়ি ও তিন তরুনিকে নিয়ে রাতে বেসামাল অবস্থায় একটি রিসোর্ট থেকে শ্যামনগর থানা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে জেল খেটেছেন রুমন। আর মিলন ইন্টারন্যাশনাল গোল্ড স্মাগলার । তারও হাত বহুদুর লম্বা, থানা পুলিশকে কেয়ার করে না। পুলিশের বড় কর্তাদের গুডবুকে রয়েছেন তিনি। এ কারণেই পুলিশ মামলা নেয়নি’। তিনি বলেন ‘আজ রোববার ছুটি শেষে আদালত খুললে আমি সেখানে মামলা করবো’।

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে মিলন জুয়েলার্সের মিলন পালের কাছে ফোন করা হলে তিনি বলেন ‘সাহেব আলির কাছে ব্যবসায়িক ৫ লাখ টাকা পাবো। তাই বাড়ি থেকে ডেকে এনেছিলাম। তখন আমার দোকানে এমপি পুত্র রুমন উপস্থিত ছিলেন। তাকে মারধর করা হয়নি। তিনি স্বেচ্ছায় ব্যাংক চেকে সাক্ষর দিয়ে গেছেন’। তাকে বাগান বাড়িতে নিয়ে দেড়ঘন্টা মারপিট করে নির্যাতন অথবা জোর করে চেকে সই করানো এর কোনো কিছুই অস্বীকার না করে এড়িয়ে যান তিনি। তিনি বলেন ‘রুমন মারেন নি, আমিও মারিনি’। জানতে চাইলে তিনি আরও জানান ‘আমি ভারতে সোনা পাচার করিনা’। তবে সাংসদপুত্র রুমনের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদুল হক শেখ জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনার সত্যতা পেলে ব্যবস্বথা নেওয়া হবে।

(আরকে/পি/জুলাই ০৯, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test