E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরায়  দলিত জনগোষ্টীর অবস্থান ও ভূমির মালিকানা নাজুক অবস্থায়

২০১৬ জুলাই ২৯ ১২:৫২:০৮
সাতক্ষীরায়  দলিত জনগোষ্টীর অবস্থান ও ভূমির মালিকানা নাজুক অবস্থায়

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায়  দলিত জনগোষ্টীর অবস্থান ও ভূমির মালিকানা নাজুক অবস্থায়। সরকারিভাবে খাস জমি প্রদান বা বিশেষভাবে কোন বরাদ্দ দেওয়ার ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি।

সাতক্ষীরা জেলা পরিসংখ্যান অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের সর্বশেষ গণনা অনুযায়ি জেলার জনসংখ্যা ২০ লাখেরও বেশি। সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের সংখ্যা নয় শতাংশ প্রায়। তবে দলিত সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা কত তার কোন পরিসংখ্যন নেই। তবে নির্বাচন কমিশনারের অফিস সূত্রে জানা গেছে জেলার ভোটোর সংখ্যা ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ৩০৩।

জেলা প্রশাসকের রাজস্ব বিভাগ থেকে জানা গেছে, এখানে দলিত সম্প্রদায়ের জমি সম্পর্কে কোন ধারণা নেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। এমনকি, যারা দলিতদের নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠণ পরিত্রাণ, সামছ, ভূমিজ কারোরই কান ধারণা নেই জমির পরিমাণ নিয়ে। দলিতদের সামাজিক অবস্থান নিয়ে কোন খবরও তার রাখে না বলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে সাতক্ষীরা পৌরসভার পিছনে হরিজন সম্প্রদায়ের ৩৩টি পরিবারের বসবাস। নিজেদের প্রয়োজনে তৎকালিন ব্রিটিশ সরকার ভারতের বিহার বা অন্য প্রদেশ থেকে ডোম বা হরিজনদের পূর্বপুরুষদের এখানে নিয়ে এলেও তারা আজো যাযাবর।

পৌরসভার সুবিধার্থে তাদের বাসস্থানের জায়গা ক্রমশঃ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন ওই এলাকা বস্তি হিসেবে পরিণত হয়েছে। তবে এতের মধ্যে একটি পরিবার শহরের বকচরা এলাকায় তিন শতক জমি কিনে বসতবাড়ি কিনে বসবাস করছে। একইভাবে কলারোয়া উপজেলার সদরের ২৫ টির বেশি হরিজন সম্প্রদায়ের পরিবারগুলোর একই অবস্থা। তাদেরকে স্থায়ীভাবে পূর্ণবাসনের জন্য কোন উদ্যোগ নেই সরকারের।

তবে শহরের ১নং ওয়ার্ডের ঝুটিতলা ঋষি পল্লীতে যেয়ে দেখা গেছে অধিকাংশই গতদরিদ্র। তিন থেকে চারশতক জমিতে বসবাস করছে একই পরিবারের চার ভাই। একই অবস্থা সরকারি কলেজের পাশে ঋষি পল্লীর। এসব পরিবারের গৃহবধু ও মেয়েরা অন্যের জমিতে দিনমজুর ও বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে। এদের পরিবারের বড় অংশের ছেলে মেয়েরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পার না হতেই ঝরে গেছে।

সদর উপজেলার আলীপুর, ভোমরা, শাঁখরা, বাবুলিয়া, আবাদের হাট, বৈকারী, কাথণ্ডাসহ কয়েকটি দলিতপাড়ায় যেয়ে দেখা গেছে অনেকেই সরকারি খাস জায়গায় বসবাস করেন। আবেদন করেও তারা ওইসব জমি জেলা প্রশাসক , জেলা পরিষদ বা সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে বন্দোবস্ত পায়নি। তবে এদের মধ্যে কয়েকজন মাছ, কাঁকড়া, বাঁশ ও বেতেরতৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করে নিজেদের ভূমির মালিকানা এক থেকে তিন বিঘা বাড়িয়েছেন। বানিয়েছেন রুচিশীল বাড়ি।

এদিকে আশাশুনি উপজেলার অঅনুলিয়া ঋষিপাড়ায় যেয়ে দেখা গেছে নিজেদের অজ্ঞতার কারণে জমির কাগজপত্র সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকায় সংখ্যাগুরু সম্পদায়ের লোকজন তাদের পৈতৃক জমি রেকর্ড করে নিয়েছে। ফলে আদালতের দারস্ত হয়ে খরচ গুনতে ব্যর্থ হয়ে কাগজপত্র সংশোধন করতে না পেরে জমি হাতছাড়া হয়ে গেছে। এমনই বিপাকে পড়ে লোভে পড়ে খ্রীষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছেন সদর ইউনিয়নের গাইয়াখালি ও বড়দলের ঋষি সম্প্রদায়ের মানুষ।

তবে কালীগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ও চাঁচাই গ্রামের ঋষিপাড়ার অনেকেই অর্থনৈতিক ভাবে স্বচ্ছল। তাদের অধিকাংশ পরিবারের পাঁচ শতক থেকে ১০ শতকের বেশি জমি আছে।
দেবহাটার সখীপুর, নওয়াপাড়া, পারুলিয়া দক্ষিণপাড়া, কুলিয়া, টিকেট, শ্যামনগরের বাধঘাটা, ধুমঘাট, নকিপুর, ফুলতলা, মুন্সিগঞ্জ, বুড়িগোয়িালিনি, কলারোয়ার কয়লা, মুরারীকাটি, সরসকাটি, সোনাবাড়িয়া, ব্রজবক্স এলাকায় বসবাস করে তিন শতাধিক দলিত পরিবার। এদের অর্ধেকেই র্ভমিহীন। কেই বা রাস্তার ধারে আবার কেউ বা খাস জমিতে বসবাস করে। তবে অনেকেই নিজস্ব জমিতে বসবাস রয়েছে। তাদের সামাজিক অবস্থান ভাল নয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দলিত জনগোষ্টী নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠণ পরিত্রাণের নির্বাহী পরিচালক মিলন কুমার দাস জানান, দলিত জনগোষ্টীর পরিসংখ্যান নিয়ে তাদের কাছে কোন সুনিদ্দিষ্ট কাগজপত্র নেই। তবে ভূমিজ এর নির্বার্হী পরিচালক অচিন্ত কুমার সাহা জানান, তালায় ১৪৭টি দলিত পরিবার সরকারি খাস জমি পেয়েছে। তবে তথ্য অনুসন্ধানে এর বাস্তবতা মেলেনি।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক অঅবুল কাশেম মোঃ মহিউদ্দিন জানান, জেলায় ঠিক কত পরিবার দলিত সম্পদায়ের লোকজন রয়েছে সে সম্পর্কে তার কোন ধারণা নেই। তবে দলিতদের আর্থ সামাজিত উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সেজন্য জেলা প্রশাসন জাহ করে যাচ্ছে।






(আরএনকে/এস/জুলাই ২৯,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test