E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পুরোহিত ভবসিন্ধুকে হত্যা চেষ্টা

এক মাসেও পুলিশ কোন ক্লু উদ্ধার করতে পারেনি

২০১৬ আগস্ট ০২ ২০:৫২:০৯
এক মাসেও পুলিশ কোন ক্লু উদ্ধার করতে পারেনি

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার ব্রহ্মরাজপুর শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ মন্দিরের পুরোহিত ভবসিন্ধু বরকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টার ঘটনার এক মাস পেরিয়ে গেলেও টুলিশ কোন ক্লু উদ্ধার করতে পারেনি। উপরন্তু চিকিৎসার জন্য ঔষধ কিনতে প্রতিদিন তিন থেকে টার’শ টাকা যোগাড় করতে অন্যের দুয়ারে ভিক্ষা চেয়ে বেড়াচ্ছেন পুরোহিতের স্বজনরা।

পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ২ জুলাই শনিবার ভোর সাড়ে তিনটার দিকে দু’ নৈশ প্রহরীকে বেঁধে রেখে মন্দিরের পুরোহিত ভবসিন্ধু বরকে দরজা খুলতে বাধ্য করে তাকে ছুরি দিয়ে ও লোহার রড দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে প্রথমে তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় হেলিকপ্টারযোগে ওই দিন দুপুরে তাকে ঢাকার বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ ঘটনায় মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি রামপদ সাধুখাঁ বাদি হয়ে ৩ জুলাই অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জনের নামে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক এনামুল হক ৪ জুলাই সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর গ্রামের রাজাউল্লাহ’র ছেলে জাহিদুর রহমান, ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ওয়ারিয়া গ্রামের মাওঃ আব্দুল বারীর ছেলে ঝাউডাঙা সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষক নুরুল বাশার ও তার আত্মীয় ৫ জুলাই খুলনা জেলার কয়রা উপজেলা সদরের মোস্তাফিজুর রহমানকে গ্রেফতার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাত দিনের রিমাণ্ড আবেদন করেন। পরবর্তীতে আদালত শুনানী শেষে তাদের রিমাণ্ড আবেদন না’মঞ্জুর করে। ১৭ জুলাই বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ভবসিন্ধু বরের ছাড়পত্র দেয়।

এদিকে সদর উপজেলার বাবুলিয়া গ্রামের চম্পা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, তার দুলা ভাই ঝাউডাঙা সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষক নুরুল বাসার খুলনার কয়রা উপজেলার এক আত্মীয় মোস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে একটি বিয়ের কেনাকাটা করা জন্য মোটর সাইকেলে পহেলা জুলাই শুক্রবার সকালে খুলনায় যচ্ছিলেন। পথিমধ্যে ডুমুরিয়া থানার পুলিশ মোটর সাইকেলসহ তাদেরকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে তাদেরকে খুলনা র‌্যাব অফিসে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ৩ জুলাই রোববার সাতক্ষীরা জেলা গোয়েন্দা পুলিশে সোপর্দ করা হয়। অথচ আটকের একদিন পর ব্রহ্মরাজপুর রাধা গোবিন্দ মন্দিরের পুরোহিত ভবসিন্ধু বরকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টার ঘটনায় গ্রেফতার দেখিয়ে পৃথক দু’দিনে নূুরুল বাসার ও মোস্তাফিজুরকে জনগণের আই ওয়াশের জন্য সাত দিনের রিমাণ্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়।

ব্রহ্মরাজপুর রাধা গোবিন্দ মন্দির কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক কানাই লাল সাহা জানান, ভবসিন্ধু বরকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার চেষ্টার ঘটনায় বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাতক্ষীরা জেলা শাখা প্রেসক্লাবের সামনে গত ৪ জুলাই এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। কর্মসূচি চলাকালে বক্তারা ভবসন্ধিু বরের উপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। একই সাথে ওই পুরোহিতের জীবনরক্ষায় হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য খুলনা রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক এসএম মনিরুজ্জামানকে ধন্যবাদ জানান। মানববন্ধন থেকে সারাজীবন পঙ্গুত্ব নিয়ে বেঁচে থাকা ভবসিন্ধু বরের চিকিৎসা ও জীবিকা নির্বাহের জন্য সরকারি সহায়তার আবেদন জানানো হয়।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ভবসিন্ধু বরকে জত্যার চেষ্টার ঘটনায় পুলিশ গত এক মাসে কোন ক্লু উদ্ধার করতে পারেনি। বাবুলিয়া গ্রামের চম্পা খাতুনের অভিযোগ আদালতে যথাযথভাবে উপস্থাপন করায় বিচারক আসামীদের রিমাণ্ড মঞ্জুর করেনি। অভিযোগ সত্য হলে পুরোহিত হত্যার চেষ্টার মূল আসামীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে উৎসাহিত হচ্ছে।

অপরদিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভবসিন্ধু বরতে বহনকারি হোলিকপ্টর খরচ সম্মেলন কক্ষে ডেকে সংখ্যালঘু সম্পদায়ের নেতৃবৃন্দের কাছে দাবি করায় পদোন্নতিজনিত কারণে বদলী হওয়া সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কানাই লাল সাহা।

পুরোহিত ভবসিন্ধু সাহা জানান, গত ১৭ জুলাই হাসপাতাল থেকে ফিরে তিনি মন্দিরে না যেয়ে তার নিজ বাড়ি সদর উপজেলার বাজুয়ারডাঙি গ্রামে চলে আসেন। তাকে প্রতিদিন তিন থেকে চার’শ টাকার ঔষধ কিনতে হচ্ছে। তার ভাই দিনমজুর দীনবন্ধু বর ও শুভাকাঙ্ঘীদের বাড়ি বাড়ি যেয়ে এক প্রকার ভিক্ষা বৃত্তি করে তার চিকিৎসা খরচ যোগাড় করতে হচ্ছে। তাছাড়া দু'বেলা দু’ মুঠো জোগাড় করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা কতদিন অব্যহত থাকবে তা তিনি বুঝতে পারছেন না। তাছাড়া নিরাপত্তা জনিত কারণে আগামিতে সুস্থ হয়ে উঠলে তার পক্ষে কর্মস্থল ব্রহ্মরাজপুর শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ মন্দিরে যাওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছেন না তিনি। তার জীবন রক্ষায় বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

সাতক্ষীরা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক লুৎফর রহমান জানান, পরিদর্শক ইনামুল হক বদলী হয়ে যাওয়ায় গত ২৯ জুলাই তাকে এ মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে। গ্রেফতার অঅসামীদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত রিমাণ্ড মঞ্জুর না করায় তারা সমস্যায় পড়েছেন। তবে ঘটনার ক্লু উদ্ধারে তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।

প্রসঙ্গত, গত ২ জুলাই ভোর সাড়ে তিনটায় সাত/ আট জন দুর্বৃত্ত দু’ চৌকিদারকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে পিঠ মোড়া দিয়ে বেঁধে রেখে দরজা খুলতে বাধ্য করে ব্রহ্মরাজপুর রাধা গোবিন্দ মন্দিরের পুরোহিত ভবসিন্ধু বরকে। পরে তাকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করা হয়।


(আরএনকে/এস/আগস্ট ০১,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test