E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কাজী কামালের পদত্যাগ নিয়ে মাগুরায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

২০১৬ আগস্ট ১২ ১৩:৩৬:৫২
কাজী কামালের পদত্যাগ নিয়ে মাগুরায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

মাগুরা প্রতিনিধি: সম্প্রতি বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পদ থেকে মাগুরা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও মাগুরা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি (কাজী সালিমুল হক)কাজী কামালের পদত্যাগের ঘটনা গত দু’দিন মাগুরায় টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে। একই সাথে মাগুরার দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝেও তার পদত্যাগ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

দলের ত্যাগী নেতা কর্মীদের মতে, কাজী কামালের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত যথেষ্ট যৌক্তিকতা রয়েছে। তাদের মতে, এ পদত্যাগের ফলে দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা চরমভাবে হতাশ হয়েছে। যে কারনে মাগুরা জেলা বিএনপি’র ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আবার কেউবা মনে করছেন কাজী কামালের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি। তাদের মতে, পদত্যাগের মাধ্যমে আসলে কোন সমস্যার নিরসন হয় না। বরং দলের দুঃসময়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষায় জন্যই তিনি পদত্যাগ করেছেন। দলের প্রতি আনুগত্যর থাকলে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিতেন না।

এ ব্যাপারে মাগুরা জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান জেলা বিএনপি’র আহবায়ক কমিটির সদস্য ফারুকুজ্জামান বলেন, পদত্যাগের মাধ্যমে আসলে কোন সমস্যার সমাধান হয় না। দলীয় কোন সিদ্ধান্ত পছন্দ না হলে তা দলীয় ফোরামে বা দলীয় প্রধানের কাছে উপস্থাপন করে সমাধান করা উচিত। জেলা বিএনপিতে তার অনেক অনুসারী রয়েছেন। যারা তার পদত্যাগে হতাশ হয়েছন। দলের এই চরম ক্রান্তিকালে তার এ ধরণের সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি।

মাগুরা জেলা বিএনপি’র সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, বর্তমান আহবায়ক কমিটির সদস্য আক্তার হোসেন বলেন, কাজী কামাল জেলা বিনেপির সভাপতি থাকাকালে তার নেতৃত্বর গুনাবলী ও ব্যকিত্ব দিয়ে গোটা দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছিলেন। কাজী কামাল মাগুরা-২ নির্বাচনী এলাকা আওয়ামীলীগের ঘাটিকে বিএ্নপির ঘাটিতে পরিণত করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী নেতৃত্ব দলকে শুধুই বিভক্ত করেছে। একমাত্র কাজী কামালের নেতৃতেই মাগুরা বিএনপিকে আবারো সংগঠিত করা সম্ভব। নিতাই রায় চৌধুরীকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ভাইস-চেয়ারম্যান করে একই কমিটিতে কাজী কামালকে সদ্স্য করে তার সন্মান ক্ষুন্ন করা হয়েছে বলে মনে করেন আক্তার হোসেন।

মাগুরা জেলা বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমান আহবায়ক কমিটির সদস্য আহসান হাবিব কিশোর বিএনপি জনভিত্তি সম্পন্ন একটি রাজনৈতিক সংগঠন। কারো পদত্যাগে এ দলের কিছু আসে যায় না। প্রসঙ্গক্রমে তিনি আরো বলেন যে, কাজী কামাল কিংবা নিতাই রায় কেউই মাগুরা জেলা বিএনপির জন্য অপরিহার্য নয়। তবে কাজী কামাল তার পদত্যাগপত্রে ১/১১ -এর তত্ত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নিতাই রায়ের ভূমিকা সম্পর্কে যা কিছু বলেছেন তার সাথে তিনি সম্পূর্ণ একমত। তিনি দাবি করেন যে, যেহেতু মাগুরা জেলা বিএনপি’র আহবায়ক কমিটি দলের কাউন্সিল সম্পন্ন করতে ব্যার্থ হয়েছে এবং এর মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। অবিলম্বে এ কমিটি বিলুপ্ত করে সংগঠনকে গতিশীল করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি, বর্তমান আহবায়ক কমিটির সদস্য সাবেক সংরক্ষিত মহিলা এমপি নেওয়াজ হালিমা আরলি বলেন, কাজি কামালই বলতে পারবেন তার পদত্যাগের সঠিক কারণ। তবে যেহেতু দলীয় প্রধানের সাথে তার ভাল সম্পর্ক রয়েছে। সেহেতু তিনি পদত্যাগ না করে সেখানে গিয়ে আলাপ-আলোচনা করে সমাধান করতে পাতেন।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা বিএনপি’র এক নেতা বলেন, দলে ক্ষমতায় গেলে এমপি মন্ত্রী ও সুয়োগ সুবিধাতো কাজী কামালের মত লোকেরা পান। আসলে কে বড় পদ পেল, আর কে ছোট পদ পেল সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। অনেক বড়-বড় নেতা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি আছেন, যারা দরের বড় পদ চান না। তারা শুধূ নির্বাহী সদস্য থেকে দলের জন্য কাজ করতে চান। নিজের মামলা ও ব্যক্তিগত স্বর্থ রক্ষার জন্য কাজি কামাল বিএনপির নির্বাহী সদস্য থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে ওই নেতা মন্তব্য করেন।

তবে স্থানীয় সমাজ সেবক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আব্দুর রঊফ মাথনের মতে, দেশের সংবিধেোনে বিদ্যমান মৌলিক অধিকারের ধারাই তাকে পদত্যাগসহ সাংগঠনিক যেকোন সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার দিয়েছে। তবে কেউন্সিলে যেহেতু সকল ক্ষমতা দলীয় প্রধানকে দেওয়া হয়েছে। সেহেতু দলের নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্যগ প্রকাশ করে দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্ত মেনেই চলাই সঠিক কাজ।

উল্লেখ্য শিল্পপতি থেকে এমপি মনোনয়ন নিয়ে বিএনপির রাজনীতিতে যোগ দেয়া কাজী কামাল দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে যে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন তার অনুলিপি গতকাল বুধবার (১০ আগষ্ট) দুপুরে মাগুরার সাংবাদিকদের পাঠান।
কাজী সালিমুল হক কামাল স্বাক্ষরিত এ পদত্যাগপত্রে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, সম্প্রতি গঠিত বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে এমন কিছু বিতর্কিত ব্যক্তির নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে যাদের নেতৃত্বে রাজনীতি করা তার পক্ষে সম্ভব নয়।

এছাড়া তিনি তার পদত্যাগপত্রে কারও নাম উল্লেখ না করে অভিযোগ করেছেন যে, মাগুরা জেলা বিএনপি’র বর্তমান আহবায়ককে কেন্দ্রীয় বিএনপি’র ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। অথচ ঐ ১/১১-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনকালে তার ভূমিকা ছিল প্রশ্নবোধক।

জিকিউ গ্রুপের মালিক কাজী কামাল ১৯৯৪ সালে অনুষ্ঠিত মাগুরা-২ আসনের বহুল বিতর্কিত উপ-নির্বাচনের মাধ্যমে প্রথমবারের মত এমপি নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে একই আসন থেকে তিনি পুনরায় এমপি নির্বাচিত হন।

১/১১-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দায়েরকৃত জিয়া অরফানেজ মামলার তিনি একজন আসামী। এ মামলার প্রধান আসামী বেগম খালেদা জিয়া।








(ডিসি/এস/আগস্ট১১,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test